৩৩০ আলোকবর্ষ দূরে বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে নবীন গ্রহ! ছবি: নাসা।
শিশু গ্রহকে ক্রমশ গিলে নিচ্ছে তার নিকটবর্তী নক্ষত্র। অনবরত চলছে বিস্ফোরণ। প্রতি বিস্ফোরণে একটু একটু করে ছোট হচ্ছে ওই গ্রহ। কুঁকড়ে যাচ্ছে তার বায়ুমণ্ডল। ৩৩০ আলোকবর্ষ (আলো এক বছরে যতটা পথ অতিক্রম করতে পারে তাকে বলা হয় আলোকবর্ষ) দূরে এমনই বিস্ময়কর মহাজাগতিক দৃশ্যের সাক্ষী রইল আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। চন্দ্র এক্স-রে পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রতি মুহূর্তে এই গ্রহের দিকে বিজ্ঞানীরা নজর রেখেছেন।
নতুন আবিষ্কৃত এই গ্রহের নাম টিওআই ১২২৭বি। ৩৩০ আলোকবর্ষ দূরে একটি লাল রঙের বামন নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে এই গ্রহ। যে ভাবে পৃথিবী সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, সে ভাবে নয়। একেবারে কাছ থেকে নক্ষত্রের চারপাশে এই গ্রহ ঘুরে বেড়ায়। সেই কারণেই তার অস্তিত্ব সঙ্কটে, দাবি নাসার। আমাদের সৌরজগতে সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ বুধ। যে দূরত্বে বুধ সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে, টিওআই ১২২৭বি এবং তার নক্ষত্রের দূরত্ব তার পাঁচ ভাগের এক ভাগ মাত্র।
নক্ষত্রটির বিস্ফোরণে অনবরত এক্স রশ্মির বিকিরণ হচ্ছে, দেখতে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এই রশ্মি নিকটবর্তী গ্রহের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করছে সহজেই। উচ্চশক্তির রেডিয়েশনের সামনে তাই কুঁকড়ে যাচ্ছে বায়ুমণ্ডল। তার ঘনত্ব কমছে। রচেস্টার ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির গবেষক অ্যাটিলা ভার্গা বলেছেন, ‘‘নক্ষত্রের এক্স রশ্মি বিস্ফোরণ সহ্য করতে পারছে না গ্রহটির বায়ুমণ্ডল। এই গ্রহ টিকে থাকতে পারবে না বেশি দিন।’’
সৌরজগতের বাইরে যে সমস্ত গ্রহ রয়েছে, সেগুলিকে এক্সোপ্ল্যানেট বলা হয়। টিওআই ১২২৭বি এখনও পর্যন্ত নাসার আবিষ্কৃত সবচেয়ে নবীন গ্রহ। মাত্র ৮০ লক্ষ বছর আগে এই গ্রহের সৃষ্টি। বিজ্ঞানীরা তাই একে ‘শিশু গ্রহ’-এর তকমা দিয়েছেন। আমাদের পৃথিবীর জন্ম প্রায় ৫০০ কোটি বছর আগে।
বিজ্ঞানীদের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, আগামী ১০০ বছরের মধ্যে পৃথিবীর দ্বিগুণ পরিমাণ ভর হারিয়ে ফেলবে টিওআই ১২২৭বি। ফলে এর আকার আরও কমে আসবে। ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসবে গ্রহের পাথুরে কেন্দ্রভূমি। এই মুহূর্তে টিওআই ১২২৭বি-র ভর নেপচুনের সমান। তবে গ্রহটি প্রায় তিন গুণ বেশি চওড়া। আমাদের সূর্য থেকেও এক্স রশ্মি নির্গত হয়। তবে ৩৩০ আলোকবর্ষ দূরের সেই নক্ষত্র আকারে সূর্যের চেয়ে ছোট হলেও তার এক্স রশ্মি বিকিরণের হার কয়েক গুণ বেশি। টিওআই ১২২৭বি-এর বায়ুমণ্ডল জল ধারণের যোগ্য নয়। ফলে ভবিষ্যতে কখনও এই গ্রহে প্রাণ সৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই।