মহাকাশ থেকে পাঠানো পৃথিবীর ছবি। ছবি: অ্যাক্সিয়ম স্পেস।
অন্ধকারের মাঝে ঘন নীল রঙের একটি গোলক। উপরে ভাসছে পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের জানলা থেকে এমনই দৃশ্যের ছবি পাঠিয়েছেন ভারতীয় নভশ্চর শুভাংশু শুক্ল। এটাই নাকি পৃথিবী! সে ছবিতে অবশ্য দেশবিদেশের সীমারেখা, স্থল, সমুদ্র— কিছুই বোঝা যাচ্ছে না। মহাকাশ থেকে নাকি এমনই দেখতে লাগে আমাদের গ্রহকে।
নাসার অ্যাক্সিয়ম-৪ অভিযানের গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্ল। তিনিই ভারতের প্রথম নভশ্চর, যিনি আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস)-এ পা রেখেছেন। শুভাংশু ভারতের ভবিষ্যতের ‘গগনযাত্রী’ও! রবিবার তাঁর তোলা দু’টি ছবি প্রকাশ্যে এনেছে অ্যাক্সিয়ম স্পেস। সেই ছবিতে দেখা যাচ্ছে, মহাকাশ স্টেশনের কুপোলা থেকে পৃথিবীকে দেখাচ্ছে একটি ঘন নীল রঙের গোলকের মতো। উপরে সাদা মেঘের স্তর। এর আগে গত ২৮ জুন নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও কথা হয়েছিল শুভাংশুর। ভারতের প্রধানমন্ত্রী জানতে চেয়েছিলেন, মহাকাশ থেকে পৃথিবীকে কেমন দেখতে লাগে? সে বারেও শুভাংশু উত্তর দিয়েছিলেন, মহাকাশ থেকে দেশবিদেশের সীমানা দেখা যায় না। দেখা যায় না কাঁটাতার। কোনও ভেদাভেদ নয়, বরং মহাকাশ জাগিয়ে তোলে ঐক্য এবং মানবতার অনুভূতি!
গত ২৬ জুন স্পেসএক্সের ‘ড্রাগন’ মহাকাশযানে চড়ে আইএসএসের উদ্দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন চার নভশ্চর। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থার এই অভিযানে শুভাংশু ছাড়াও আরও তিন নভশ্চর রয়েছেন— ক্রু-কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানস্কি-উইজ়নিউস্কি এবং টিবর কাপু। ইতিমধ্যে আইএসএসে ১০ দিন কাটিয়ে ফেলেছেন তাঁরা। আপাতত নানা গবেষণামূলক পরীক্ষানিরীক্ষা করেই তাঁদের দিন কাটছে। ইসরোর সাতটি এবং নাসার পাঁচটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা করবেন শুভাংশু। এর মধ্যে অন্যতম হল মায়োজেনেসিস। মাধ্যাকর্ষণের অনুপস্থিতি কী ভাবে পেশিক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে, তা খতিয়ে দেখাই এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য। এ ছাড়াও, টার্ডিগ্রেড্স নিয়েও গবেষণা করছেন তাঁরা। পৃথিবীর এই আনুবীক্ষণিক সামুদ্রিক জীব গভীর সমুদ্রের প্রতিকূল অবস্থায় বেঁচে থাকতে পারে। মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণশূন্য পরিবেশেও এরা বেঁচে থাকবে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখছেন শুভাংশুরা। এ ছাড়া, মাইক্রোঅ্যালগি ও সায়ানোব্যাক্টিরিয়া মহাকাশে কেমন আচরণ করে, তা-ও দেখা হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের দাবি, সুদীর্ঘ মহাকাশ অভিযানে নভশ্চরদের খাবারের জোগান এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সুনিশ্চিত করতে সাহায্য করবে এই গবেষণা।