3I/ATLAS

বয়সে আমাদের সৌরমণ্ডলের থেকেও বড়! সেই ‘অদ্ভুত অতিথি’র দেখা মিলবে কলকাতার আকাশেও

এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’-এর বয়স আমাদের সৌরমণ্ডলের থেকেও বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনও ছায়াপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে ভবঘুরের মতো আমাদের সৌরমণ্ডলে ঢুকে পড়েছে সে। এই ধূমকেতুকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের বিস্ময়ের শেষ নেই।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৭:১৩
Share:

—প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।

জুলাই মাসে প্রথম বার তাকে পৃথিবী থেকে দেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ আমেরিকার আকাশে দেখা গিয়েছিল তাকে। তবে তখনও পৃথিবীর বাকি অংশ থেকে দেখা যায়নি সেই ‘অদ্ভুত অতিথি’-কে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ক্রমে তাকে আরও অনেক জায়গা থেকেই দেখা যাবে। আগামী ১০ অক্টোবর কলকাতা এবং তার আশপাশের অঞ্চল থেকেও দেখা যাবে ‘৩আই/অ্যাটলাস’-কে, যাকে বিজ্ঞানীরা বলছে ‘অদ্ভুত অতিথি’।

Advertisement

এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’-এর বয়স আমাদের সৌরমণ্ডলের থেকেও বেশি। বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোনও ছায়াপথ থেকে ছিটকে বেরিয়ে ভবঘুরের মতো আমাদের সৌরমণ্ডলে ঢুকে পড়েছে সে। এই ধূমকেতুকে নিয়ে বিজ্ঞানীদের বিস্ময়ের শেষ নেই। জুলাই মাসে প্রথম বার বৃহস্পতির পিছনে একে দেখা গিয়েছিল। তার পর থেকে এর বিষয়ে নিত্যনতুন জিনিস জানতে পেরেছেন বিজ্ঞানীরা।

ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের অধিকর্তা সন্দীপকুমার চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘৩আই/অ্যাটলাস’ প্রায় ৭০০ কোটি বছর আগে তৈরি হয়। তার পরে সেই ছায়াপথ থেকে রওনা দেয় ধূমকেতুটি। যখন সে রওনা দেয়, তখন আমাদের সৌরজগৎ তৈরি হয়নি। আমাদের এই সৌরজগৎ ৪৬০ কোটি বছর আগে তৈরি হয়। এখন সে ঘণ্টায় দু’ থেকে আড়াই লক্ষ কিলোমিটার গতিতে আসছে।

Advertisement

কেন একে ‘অদ্ভুত অতিথি’ বলা হচ্ছে?

এক, বৃহস্পতি পৃথিবী থেকে যে দূরত্বে রয়েছে, সেই দূরত্বে কোনও ধূমকেতুর লেজ দেখা যায় না। কিন্তু ‘৩আই/অ্যাটলাস’-এর লেজ দেখা গিয়েছে। তার লাগোয়া রয়েছে বড় বায়ুমণ্ডল বা অ্যাটমোস্ফিয়ার। দুই, সেই বায়ুমণ্ডলের স্পেকটোগ্রাফ নিয়ে দেখা গিয়েছে, লেজ থেকে জলের বদলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বার হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনও ধূমকেতুর ক্ষেত্রে এমন দেখা যায়নি। তিন, সৌরজগতের যে সমতলে সব গ্রহ রয়েছে, সেই সমতল দিয়েই আসছে ধূমকেতুটি। যেন বহু দূরের তারা থেকে সে সব গ্রহের সঙ্গে দেখা করতে আসছে। প্রথমে বৃহস্পতি, তার পরে মঙ্গল, বুধ, শুক্রের পাশ দিয়ে সূর্যের কাছে গিয়ে আবার ফিরে আসবে সে। গ্রহগুলির এত কাছ দিয়ে সে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে যেন চিন্তাভাবনা করে গতিপথ ঠিক করেছে ধূমকেতুটি।

ভিন্‌গ্রহীদের মহাকাশযান?

অনেকে মনে করছেন, ‘৩আই/অ্যাটলাস’ আসলে ভিন্‌গ্রহীদের মহাকাশযান। বিজ্ঞানীদের কেউ বলছেন, এর দৈর্ঘ্য প্রায় এক কিলোমিটার, কেউ বলছেন ৪০ কিলোমিটার। এই ধূমকেতু থেকে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাস বার হওয়ার পরে তার রং বদলাচ্ছে। সায়ানাইড বার হচ্ছে। সায়ানাইড বিষাক্ত গ্যাস। ধূমকেতুর লাগোয়া ৩০০ হাজার কিলোমিটার ব্যাসের বায়ুমণ্ডল তৈরি হচ্ছে। সূর্য থেকে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ এসে তৈরি হয় ধূমকেতুর লেজ। এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’-এর লেজ রয়েছে সূর্যের দিকেই, যা অন্য ধূমকেতুর উল্টো দিকে থাকে। সেই লেজে নিকেল পাওয়া গিয়েছে। নিকেল আয়রন ছাড়া দেখা যায় না। বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করছেন, নিকেল তৈরি করতে হলে উন্নত মানের প্রযুক্তি দরকার। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক জন অধ্যাপক মনে করছেন, ‘৩আই/অ্যাটলাস’ আসলে ভিন্‌গ্রহীদের মহাকাশযান। যদিও সন্দীপ মনে করেন, এই ‘৩আই/অ্যাটলাস’ অন্য সৌরমণ্ডল থেকে ছিটকে বেরিয়ে এসেছে। তার পরে ভবঘুরের মতো ঢুকে পড়েছে আমাদের সৌরমণ্ডলে। এর নেপথ্যে কারও বুদ্ধিমত্তা থাকলে সে পৃথিবীর আরও কাছ দিয়ে যেতে চাইত। এখন সে পৃথিবীর ২৮ কোটি কিলোমিটারের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। যেখানে মঙ্গলের আড়াই কোটি কিলোমিটার দূর দিয়ে যাচ্ছে সে।

কলকাতার আকাশ থেকে এই ধূমকেতুকে ১০ অক্টোবর দেখা যাবে। মঙ্গল, বুধ এবং ‘৩আই/অ্যাটলাস’ এক সঙ্গে দেখা যাবে সূর্যাস্তের পরে। তবে আকাশে চাঁদ ওঠার আগে দেখে ফেলতে হবে তাকে। ১২ ইঞ্চি ব্যাসের টেলিস্কোপ দিয়ে দেখতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement