Wolf DNA in Dogs

নেকড়ের ডিএনএ এখনও রয়ে গিয়েছে বেশির ভাগ কুকুরের জিনে! তালিকায় বহু পোষ্য প্রজাতিও, দাবি গবেষণায়

সারমেয়দের আবির্ভাব হয়েছে নেকড়ের থেকেই। আজ থেকে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে। কিন্তু গবেষকদের দাবি, সারময়দের শরীরে নেকড়ের এই ডিএনএ বিবর্তনের সময় থেকে যাওয়া কোনও জেনেটিক অবশিষ্টাংশ নয়। তা হলে কী ভাবে এল?

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৬
Share:

কুকুরদের অনেক প্রজাতির জিনেই এখনও কিছু না কিছু মাত্রায় নেকড়ের ডিএনএ পাওয়া যায় বলে দাবি গবেষকদের। —প্রতীকী চিত্র।

আপনার ঘরে যে পোষ্য সারমেয়টি আছে, হতে পারে তার জিনে এখনও রয়ে গিয়েছে নেকড়ের ডিএনএ! নেকড়ে থেকেই পৃথিবীতে কুকুরের আবির্ভাব। ফলে প্রাথমিক ভাবে মনে হতেই পারে, এটি নেকড়ের ডিএনএ-র কিছু অবশিষ্টাংশ। কিন্তু নয়া জিন গবেষণায় দাবি করা হচ্ছে, এটি কোনও অবশিষ্টাংশ নয়। বর্তমানে পৃথিবীতে যত ধরনের কুকুর রয়েছে, তার প্রায় দুই তৃতীয়াংশের জিনেই কিছু না কিছু মাত্রায় নেকড়ের ডিএনএ পাওয়া গিয়েছে।

Advertisement

পথকুকুরদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক এক নির্দেশের পরে গোটা দেশে ওই নির্দেশ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। পাড়ায় পাড়ায় এ নিয়ে তর্ক-বিতর্ক চলেছে। ঠিক এমনই এক সময়ে মার্কিন বিজ্ঞানীরা দাবি করলেন, বেশির ভাগ কুকুরের জিনেই সম্ভবত এখনও নেকড়ের ডিএনএ রয়েছে। নেকড়ের এক প্রজাতি (অধুনা বিলুপ্ত) থেকে বিবর্তিত হয়ে সারমেয়দের প্রথম আবির্ভাব হয়। অনুমান করা হয়, আজ থেকে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে এই পরিবর্তন এসেছে। তখন এই কুকুরেরা বন্যই ছিল। গৃহপালিত হয় আরও অনেক পরে। কবে থেকে কুকুরেরা গৃহপালিত হয়েছে, তা নিয়েও ভিন্ন মত রয়েছে।

দীর্ঘ দিন ধরে প্রচলিত ধারণা ছিল, ১৮৩৭-১৯০১ সালের মধ্যে সারমেয়দের কিছু প্রজাতিকে গৃহপালিত করা হয়। তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এই পরিবর্তন এসেছে অন্তত ১০ হাজার বছর আগে। এ বার জানা গেল, কুকুরদের বেশিরভাগ প্রজাতির জিনেই এখনও নেকড়ের ডিএনএ রয়ে গিয়েছে। সারমেয়দের জিন নিয়ে এই গবেষণাটি সম্প্রতি প্রকাশ করেছে আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস। গবেষকদের দাবি, এটি নেকড়ে থেকে কুকুরে বিবর্তনের সময় থেকে যাওয়া কোনও জেনেটিক অবশিষ্টাংশ নয়। তাঁদের অনুমান, গৃহপালিত কুকুর এবং বন্য নেকড়ের মধ্যে গত কয়েক হাজার বছর ধরে প্রজনন হয়েছে। সম্ভবত ওই আন্তঃপ্রজননের কারণেই এখনও কুকুরের বেশির ভাগ প্রজাতির মধ্যে কিছু না কিছু মাত্রায় নেকড়ের ডিএনএ রয়ে গিয়েছে।

Advertisement

বিজ্ঞানীদের মতে, আধুনিক সারমেয়দের বিভিন্ন প্রজাতির জিনে উপস্থিত নেকড়ের এই ডিএনএ-ই তাদের আকার, ঘ্রাণশক্তি, এমনকি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকেও প্রভাবিত করে। কুকুর এবং নেকড়ের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন সম্ভব। জিনগত ভাবে বেশ কিছু সাদৃশ্য থাকায় এদের আন্তঃপ্রজননে জন্ম নেওয়া শাবকও প্রজননে সক্ষম হয়। তবে কুকুর এবং নেকড়ের আন্তঃপ্রজননকে এতদিন পর্যন্ত এক বিরল ঘটনা বলেই মনে করতেন বিজ্ঞানীদের একটি বড় অংশ। নয়া জিন গবেষণা সেই ধারণাকে নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিল।

এই গবেষকদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন আমেরিকান মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির বিজ্ঞানীর অড্রে লিন। তাঁর মতে, কুকুরের জিনে যে এখনও নেকড়ের ডিএনএ এতটা পরিমাণে থেকে যেতে পারে, তা এই গবেষণার আগে জানা যায়নি। তাঁর কথায়, “এই গবেষণার আগে বিজ্ঞানীদের বেশির ভাগই মনে করতেন, সারমেয়দের জিনে নেক়ড়ের ডিএনএ খুব বেশি থাকতে পারে না— কুকুরদের কুকুর হওয়ার জন্য এটিই শর্ত বলে ভাবা হত।” তবে তার মানে এমন যে সব ক্ষেত্রেই গৃহপালিত কুকুরদের সঙ্গে নেকড়ের মিলন হয়েছে। এই গবেষণাপত্রের সহলেখক মিউজিয়াম অফ ন্যাচারাল হিস্ট্রির কিউরেটর লোগান কিস্টলারের ব্যাখ্যা, “গবেষণালব্ধ ফলের অর্থ এই নয় যে নেকড়েরা আপনাদের বাড়িতে এসে আপনার পোষ্যের সঙ্গে মিলন করছে।”

কুকুরদের জিন নিয়ে এই গবেষণার জন্য লিন এবং তাঁর গবেষকদল হাজার হাজার কুকুর এবং নেকড়ের জিনোম বিশ্লেষণ করেন। তাতে দেখা যায়, কুকুরের ৬৪ শতাংশেরও বেশি আধুনিক প্রজাতি ‘নেকড়ের বংশধর’। এমনকি ছোটখাট চেহারার চিহুয়াহুয়া কুকুরের মধ্যেও প্রায় ০.২ শতাংশ নেকড়ের ডিএনএ আছে। চিহুয়াহুয়া কুকুর পোষ্য হিসাবে বেশ জনপ্রিয়। বিশেষ করে এদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের জন্য। সেই চিহুয়াহুয়ার জিনেও নেকড়ের ডিএনএ মেলায় ঈষৎ রসিকতার ছলেই লিন বলেন, “যাঁদের বাড়িতে পোষ্য হিসাবে চিহুয়াহুয়া আছে, তাঁরা এর মানে নিশ্চয়ই ভাল ভাবে বুঝে গিয়েছেন।”

নেকড়ের ডিএনএ সবচেয়ে বেশি কার শরীরে

গবেষণায় দেখা গিয়েছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নেকড়ের ডিএনএ রয়েছে দুই প্রজাতির উল্ফডগের (গৃহপালিত কুকুর এবং বন্য নেকড়ের আন্তঃপ্রজননের মাধ্যমে উদ্ভূত প্রজাতি) মধ্যে। চেকোশ্লোভাকিয়ান উল্ফডগ এবং সারলুস উল্ফডগ— উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রায় ৪০ শতাংশ পর্যন্ত নেকড়ের ডিএনএ পাওয়া যায়। যে প্রজাতিগুলিকে সাধারণত পোষ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে নেকড়ের ডিএনএ মিলেছে গ্র্যান্ড অ্যাংলো-ফ্র্যাঙ্কাইস ট্রাইকালার হাউন্ডের মধ্যে। এদের জিনে প্রায় পাঁচ শতাংশ নেকড়ের ডিএনএ মেলে। সালুকি এবং আফগান হাউন্ডও এই তালিকায় উপরের দিকেই রয়েছে।

এই প্রজাতিগুলির বেশির ভাগই বড়সড় আকারের। সাধারণত বড় আকারের কুকুরদের মধ্যে নেকড়ের ডিএনএ পাওয়ার প্রবণতা দেখা গেলেও সব ক্ষেত্রে তা সঠিক নয়। যেমন সেইন্ট বার্নার্ড। এরা বড় প্রজাতির কুকুর হলেও এদের মধ্যে নেকড়ের ডিএনএ মেলেনি। আবার ছোটখাটো আকারের প্রজাতিতে পাওয়া যাবে না, এমনও নয়। চিহুয়াহুয়া ছোটখাট আকারের সারমেয়। তবে তাদের শরীরে নেকড়ের ডিএনএ মিলেছে।

মনুষ্যবসতির মধ্যে বাস করে, কিন্তু পোষ্য নয়— গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো এমন কুকুরদের যে নমুনাগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে, দেখা গিয়েছে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রেই তারা ‘নেকড়ের বংশধর’। কখন, কী ভাবে নেকড়ে এবং আধুনিক কুকুরের মধ্যে আন্তঃপ্রজনন হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কিস্টলারের মতে, গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো কুকুরগুলির সঙ্গে নেকড়ের আন্তঃপ্রজননের সম্ভাবনা তুলনামূলক বেশি। সেখান থেকেই আধুনিক কুকুর প্রজাতিগুলির জিনে নেকড়ের ডিএনএ মিলেছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। তাঁর ধারণা, দলছুট স্ত্রী নেকড়েদের সঙ্গে সম্ভবত এই সারমেয়দের আন্তঃপ্রজনন হয়েছে। যদি এ বিষয়ে কোনও অকাট্য প্রমাণ এখনও পাননি গবেষকেরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement