ইউরেনাস। ছবি: সংগৃহীত।
সূর্য থেকে যে তাপ গ্রহণ করে ইউরেনাস, তার চেয়ে অনেক বেশি তাপ বিকিরণ করে ইউরেনাস। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা তেমনটাই বলছে। অর্থাৎ অতীত গবেষণায় ইউরেনাসকে যতটা শীতল ভাবা হয়েছিল, ততটাও সে নয়। সৌরজগতের সপ্তম গ্রহের গড় তাপমাত্রা মাইনাস ১৯৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্য থেকে এর দূরত্ব প্রায় ১৮০ কোটি মাইল। গবেষকেরা বলছেন, তার পরেও এই গ্রহ ভিতরে উত্তপ্ত। আর সে কারণেই সম্ভবত সূর্য থেকে যে তাপ সে গ্রহণ করে, তার চেয়ে বেশি বিকিরণ করে। এমনটাই বলছে জিয়োফিজিক্যাল রিসার্চ লেটারের একটি গবেষণামূলক প্রতিবেদন।
হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জিনউয়ে ওয়াং জানিয়েছেন, এই গবেষণা ইউরেনাস এবং তার পাশাপাশি আরও কয়েকটি গ্রহকে বুঝতে সাহায্য করবে। ইউরেনাসকে ‘বরফ-দৈত্য’ বলেও অভিহিত করা হয়। প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে এর জন্ম। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাবে গ্যাস এবং ধুলো জমে এই গ্রহ তৈরি হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তখন সূর্যের কাছেই ছিল এই গ্রহ। পরে ছিটকে দূরে চলে যায়।
নাসার ‘ভয়েজ়ার ২’ মহাকাশ যান ১৯৮৬ সালে ইউরেনাসের ছবি তুলতে সমর্থ হয়েছিল। সেই ছবিতে হালকা নীল রঙের বল হিসেবে ধরা পড়েছিল এই গ্রহ। ইউরেনাসের ভিতরে কোনও তাপ রয়েছে কি না, তা ধরতে পারেনি নাসার মহাকাশযান। যদিও বৃহস্পতি, শনি, নেপচুনের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছিল, সূর্য থেকে যে উত্তাপ তারা গ্রহণ করে, তার থেকে প্রায় ১০০ শতাংশ বেশি বিকিরণ করে। ইউরেনাস কেন সে রকম কিছু করে না, সেই প্রশ্নই গবেষকদের মনে এসেছিল। কেন ইউরেনাসের ভিতরের তাপমাত্রা কম, সে নিয়েও গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। এর পরেই বিজ্ঞানী ওয়াং এবং তাঁর দল গবেষণা শুরু করেন। তাঁরা দেখেন, সূর্য থেকে যে তাপ গ্রহণ করে ইউরেনাস, তার থেকে ১২.৫ শতাংশ বেশি বিকিরণ করে। ওয়াংয়ের কথায়, ‘‘এর অর্থ ইউরেনাস এখনও ধীরে ধীরে নিজের ভিতরে জমা থাকা উত্তাপ বিকিরণ করছে। এই কথা জানার পরে এই গ্রহের জন্ম এবং কোটি কোটি বছর ধরে কী ভাবে তার পরিবর্তন হল, তা আমরা বুঝতে পারছি।’’ ওয়াং মনে করেন, ‘ভয়েজ়ার ২’ সম্ভবত ভিন্ন কোনও সময়ে ইউরেনাসের তথ্য জোগাড় করেছিল। সে কারণে তার বিষয়ে অনেক কথা স্পষ্ট করতে পারেনি।
সাম্প্রতিক গবেষণা থেকে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, বাকি গ্রহদের মতো ইউরেনাসও তাপ বিকিরণ করে। তার পরেও কিছু রহস্য রয়ে গিয়েছে ইউরেনাসে, সে কথাও মনে করছেন গবেষকেরা। বৃহস্পতি সূর্য থেকে যে তাপ গ্রহণ করে তার চেয়ে ১১৩ শতাংশ বেশি বিকিরণ করে, শনি ১৩৯ শতাংশ বেশি, নেপচুন ১৬২ শতাংশ বেশি বিকিরণ করে। সূর্য থেকে ইউরেনাসের দূরত্ব যা, নেপচুনের দূরত্ব তার চেয়ে বেশি। তার পরেও নেপচুন ইউরেনাসের থেকে বেশি তাপ বিকিরণ করে। কেন, সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছেন গবেষকেরা।