— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
‘পারমাণবিক শীত’! এত দিন খাতায়কলমে শব্দটির অস্তিত্ব থাকলেও এ বার তা নিয়ে সত্যিই উদ্বেগ বাড়ছে বিজ্ঞানীদের। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিভিন্ন দেশ যদি পরমাণু বোমার ব্যবহার না কমায়, তা হলে অচিরেই পৃথিবীর বুকে নেমে আসবে পারমাণবিক শীত। প্রবল বেগে আগুনের হলকার মতো ঝড় হবে। তা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে যাবে বায়ুমণ্ডলের। পৃথিবীতে পৌঁছোবে না সূর্যের আলো, নষ্ট হয়ে যাবে ফসল। তাপমাত্রাও কমে যাবে হু হু করে। পেনসিলভানিয়ার একদল বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে এমনটাই।
গবেষকদের দাবি, পারমাণবিক শীতের ব্যাপক প্রভাব পড়বে ভুট্টার উপর, যা বিশ্বের সর্বাধিক উৎপাদিত শস্য। দলটি উন্নত সাইকেল্স কৃষি-বাস্তুতন্ত্র মডেল ব্যবহার করে ছ’টি পারমাণবিক যুদ্ধের পরিস্থিতিতে ভুট্টার উৎপাদনে কী উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে, তা দেখিয়েছে। দেখা গিয়েছে, এতে বিশ্ব জুড়ে ভুট্টার বার্ষিক উৎপাদনে ৮০ শতাংশ হ্রাস হতে পারে। যার ফলে খাদ্য সঙ্কুলান এবং বিশ্ব অর্থনীতির উপর বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। শুধু তা-ই নয়, পারমাণবিক বিস্ফোরণের ফলে ওজ়োন স্তর বিনষ্ট হবে। ফলে অতিবেগুনি-বি রশ্মির প্রভাব বেড়ে যাবে, যা উৎপাদনে আরও ৭ শতাংশ হ্রাস ঘটাতে পারে। ফলে সব মিলিয়ে ভুট্টার উৎপাদনে মোট ৮৭ শতাংশ ঘাটতি হতে পারে।
‘পারমাণবিক শীত’ কী? ১৯৮০-র দশকে এ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন বিজ্ঞানী পল ক্রুটজেন এবং জন বার্কস। হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা হামলার প্রভাব নিয়ে বিস্তর চর্চা করেছিলেন তাঁরা। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত ‘এনভায়রনমেন্ট আফটার নিউক্লিয়ার ওয়ার’ বইতে তাঁরা লেখেন, যদি কখনও পারমাণবিক যুদ্ধ হয় তা হলে এতটাই বর্জ্য তৈরি হবে যে পৃথিবীতে সূর্যালোক আসা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। পৃথিবীর তাপমাত্রা ক্রমশ কমবে। জনজীবনও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। একেই বলে পারমাণবিক শীত। শস্য উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে। ক্রমশ শুকিয়ে শুকিয়ে অনাহারের দিকে যাবে পৃথিবী।