— প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠানো হচ্ছে গুচ্ছ গুচ্ছ কৃত্রিম উপগ্রহ। বছরে বছরে হচ্ছে মহাকাশ অভিযান। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে রকেট উৎক্ষেপণের সংখ্যাও। তবে এতে এক দিকে যেমন বিজ্ঞানের উন্নতি হচ্ছে, তেমনই ক্ষতির আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
সম্প্রতি ঘন ঘন রকেট উৎক্ষেপণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ, বিশ্ব জুড়ে ঘন ঘন রকেট উৎক্ষেপণের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ওজ়োন স্তর। পরিবেশের জন্য অপরিহার্য এই স্তরের পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়াও ক্রমশ মন্থর হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, রকেট উৎক্ষেপণের সময় দূষক পদার্থগুলি বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে নির্গত হয়। রকেট থেকে নির্গত গ্যাসীয় ক্লোরিন ওজ়োন অণুগুলিকে ধ্বংস করে। ফলে সামগ্রিক ভাবে ওজ়োন স্তরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। উল্লেখ্য, এই ওজ়োন স্তরই পৃথিবীকে ক্ষতিকর অতিবেগুনী বিকিরণ থেকে রক্ষা করে। তাই ঘন ঘন রকেট উৎক্ষেপণের জেরে ওজ়োন স্তরের ক্রমশ পাতলা হয়ে যাওয়াকে যথেষ্ট উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
ওজ়োন স্তরের উপর রকেট উৎক্ষেপণের প্রভাব নিয়ে গত ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে গবেষণা চলছে। কিন্তু এই প্রভাবগুলিকে আগে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হত না। সাম্প্রতিক কালে রকেট উৎক্ষেপণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণা বদলেছে। হিসেব বলছে, গোটা ২০১৯ সালে বিশ্ব জুড়ে মোট ৯৭টি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে সেই সংখ্যা ২৫৮-য় গিয়ে ঠেকেছে! আগামী দিনে এই সংখ্যা আরও বাড়বে। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে উদ্বেগও।
রকেট থেকে সরাসরি বায়ুমণ্ডলে নির্গত দূষকগুলি কলকারখানা, গাড়ি ইত্যাদি থেকে নির্গত দূষকের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি সময় ধরে বায়ুমণ্ডলে থাকতে পারে। কারণ, বায়ুমণ্ডলের ওই স্তরে মেঘ থাকে না। এমনিতে বেশির ভাগ উৎক্ষেপণ হয় উত্তর গোলার্ধে, কিন্তু বায়ুপ্রবাহের জেরে সরা বিশ্বে এই দূষণকারী পদার্থগুলি ছড়িয়ে যায়। সম্প্রতি ক্যান্টারবেরি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দল গবেষক ২০৩০ সালের মধ্যে ওজ়োন স্তরের উপর কী কী দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে চলেছে, তা দেখিয়েছেন। আর এর মধ্যে বেশির ভাগ ক্ষতিই হবে রকেট উৎক্ষেপণের জেরে! যদি ওই বছর ২০৪০টি রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়, তা হলে সেই হিসাবে বিশ্ব জুড়ে ওজ়োন স্তর গড়ে ০.৩ শতাংশ পাতলা হয়ে যাবে।
আপাত দৃষ্টিতে এই প্রভাব সামান্য মনে হলেও মনে রাখতে হবে যে, ওজ়োন স্তর এখনও ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (সিএফসি) দ্বারা সৃষ্ট অতীতের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব সামলে ওঠেনি। ১৯৮৯ সালে মন্ট্রিয়ল প্রোটোকলে সিএফসি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। তা সত্ত্বেও আজও বিশ্বে ওজ়োন স্তরের গড় ঘনত্ব আগের চেয়ে প্রায় ২ শতাংশ কম। ২০৬৬ সালের আগে ওজ়োন স্তরের সম্পূর্ণ রূপে আগের পর্যায়ে ফিরে যাওয়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না বিজ্ঞানীরা। আর সে কারণেই ঘন ঘন রকেট উৎক্ষেপণ আরও বেশি করে ভাবাচ্ছে পরিবেশবিদদের। তবে এরই মাঝে আশার আলোও দেখছেন কেউ কেউ। জ়ুরিখের পরিবেশ ও জলবায়ুবিদ স্যান্ড্রো ভ্যাটিওনির কথায়, ‘‘এই মুহূর্তে সমস্যাটিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে না। তবে চাইলে দূরদর্শী এবং সুসংবদ্ধ পদক্ষেপের মাধ্যমে ওজ়োন স্তরকে বাঁচানো অসম্ভব নয়!’’