ঝড়খালিতে ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প নিয়ে রিপোর্ট তলব আদালতের

ঝড়খালিতে ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প গড়লে ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং সুন্দরবনের জীবকূলের ক্ষতি হবে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন পরিবেশপ্রেমীরা। বুধবার একই অভিযোগ উঠল জাতীয় পরিবেশ আদালতেও। যার ভিত্তিতে কী ভাবে ওই প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে সে ব্যাপারে রিপোর্ট চাইল কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৫ ২২:৪৬
Share:

ঝড়খালিতে ইকো ট্যুরিজম প্রকল্প গড়লে ম্যানগ্রোভ অরণ্য এবং সুন্দরবনের জীবকূলের ক্ষতি হবে বলে আগেই অভিযোগ করেছিলেন পরিবেশপ্রেমীরা। বুধবার একই অভিযোগ উঠল জাতীয় পরিবেশ আদালতেও। যার ভিত্তিতে কী ভাবে ওই প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে সে ব্যাপারে রিপোর্ট চাইল কলকাতার জাতীয় পরিবেশ আদালত।

Advertisement

সুন্দরবনের দূষণ নিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা দায়ের করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই মামলায় পরিবেশবান্ধব হিসেবে সুভাষ দত্তকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তিনি সম্প্রতি ঝড়খালি পরিদর্শন করেন. এ দিন ছবি-সহ একটি রিপোর্ট পরিবেশ আদালতের বিচারপতি প্রতাপ রায় ও বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চে জমা দেন। আদালতের বাইরে সুভাষবাবু জানান, ওই এলাকাটি ম্যানগ্রোভ অরণ্যের অন্তর্ভুক্ত। কুমিরেরা সেখানে ডিম পাড়তে আসে। পর্যটন কেন্দ্র গড়া হলে এই পরিবেশের ভারসাম্য হারাবে। এই সব কথাই তিনি রিপোর্টে জানিয়েছেন বলে সুভাষবাবু জানান।

পরিবেশকর্মীদের একাংশ অবশ্য বলছেন, আদালত রিপোর্ট চাইলেই যে পরিবেশরক্ষায় সরকার সক্রিয় হবে এমনটা নয়। কারণ, সুন্দরবনের দূষণ নিয়ে এর আগেও একাধিক নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কিন্তু তার কতটা পালন করা হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। এর সপক্ষে বলতে গিয়ে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, গদখালির ট্যুরিস্ট লজ নিয়ে আগেই অভিযোগ উঠেছিল। তা ভাঙতে নির্দেশ দিয়েছিল পরিবেশ আদালত। কিন্তু সেই নির্দেশ পালন করেনি রাজ্য প্রশাসন।

Advertisement

এ দিন সেই প্রসঙ্গেও সরব হয়েছে পরিবেশ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের মুখ্যসচিবকে বারবার বলা সত্ত্বেও কেন গদখালির লজ ভাঙা হচ্ছে না, তা নিয়ে আদালত প্রশ্ন তুললেন রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল লক্ষ্মী গুপ্ত এবং আর এক আইনজীবী নয়নচাঁদ বিহানি জানান, উপকূলীয় বিধি মেনে গদখালির ওই জায়গায় ‘ডি-স্যালিনেশন প্ল্যান্ট’ (নোনা জল থেকে মিষ্টি জল তৈরির কেন্দ্র) তৈরি করা হবে। কিন্তু আদালতের নির্দেশ রেন পালন করা হয়নি, তার স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেননি তাঁরা। এর ভিত্তিতে মুখ্যসচিবের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ কেন আনা হবে না, সে প্রশ্নও তোলেন আদালত। এর পরেই এজলাস ছেড়ে বেরিয়ে যান সরকার পক্ষের আইনজীবীরা। পরে আদালত অবশ্য জানায়, কেন নির্দেশ মানা হচ্ছে না, সে ব্যাপারে মুখ্যসচিবকে জবাবদিহি করতে হবে।

আদালতের বাইরে সরকারপক্ষের আইনজীবীরা জানান, গদখালির লজটিতে উপকূল বিধি মেনেই ডি-স্যালিনেশন প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ ছাড়া, সুন্দরবন বাঁচাতে রাজ্যের আর কী কী পরিকল্পনা রয়েছে তা-ও রাজ্যের মুখ্যসচিব হলফনামা দিয়ে আদালতকে জানাবেন। আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে ওই হলফনামা পেশ করা হবে।

এ দিন সুন্দরবনের হোটেল নিয়েও রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকেও নির্দেশ দিয়েছে ডিভিশন বেঞ্চ। তারা বলেছে, সুন্দরবনের কোন কোন হোটেল বৈধ তা খতিয়ে দেখতে নতুন করে সমীক্ষা করতে হবে। এ ব্যাপারে আদালতকে রিপোর্টও দিতে হবে। পরিবেশ দফতরের একটি সূত্রের খবর, সুন্দরবনের হোটেলের একাংশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর আগে আদালতে সে প্রশ্ন উঠেছিল। তার পরে পর্ষদ বেশ কিছু হোটেল বন্ধ করলেও সম্প্রতি সেগুলি খুলে দেওয়া হয়েছে। কোন হোটেল বন্ধ করা হবে এবং কোন হোটেল খোলা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। পর্ষদের একটি সূত্রের খবর, সুন্দরবনে কতগুলো হোটেল রয়েছে তার কোনও নির্দিষ্ট তালিকা তাদের হাতে নেই। এ দিন পর্ষদের আইনজীবী অর্পিতা চৌধুরী আদালতকে জানান, হোটেলের সমীক্ষার ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন যাতে সাহায্য করে সে ব্যাপারেও নির্দেশ দেওয়া হোক। আদালত তা মঞ্জুর করেছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement