পড়ে রয়েছে হাতির দেহ। নিজস্ব চিত্র।
ফের জঙ্গল লাগোয়া ধানখেত থেকে হাতির মৃতদেহ উদ্ধার হল। শনিবার ভোরে ডুয়ার্সের গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া জলপাইগুড়ি বনবিভাগের বড়দিঘী বিটের পাতিধুরা বস্তির ধানখেতে একটি হাতির মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে চলে আসেন বনআধিকারিকেরা।
বনবিভাগ উত্তর মণ্ডলের মুখ্য বনপাল সন্দীপ সুন্দ্রেওয়াল, জলপাইগুড়ির বনবিভাগের ডিএফও বিদ্যুত সরকার ও গরুমারা বন্যপ্রাণ বিভাগের ডিএফও সুমিতা ঘটক ঘটনাস্থলে চলে আসেন। হাতির মৃত্যু যে স্বাভাবিক নয় সেই বিষয়েও প্রাথমিক তদন্তের পর নিশ্চিত হন বনকর্তারা। হাতির হামলা থেকে ধানখেত বাঁচাতে অবৈধ ভাবে লোহার তার জড়িয়ে তাতে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে রাখা হয়েছিল বলেই অনুমান বনদফতরের। যদিও বনকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছে হাতির মৃতদেহের কাছে কোনও তার পান নি। কিন্তু হাতির শুঁড়ে বিদ্যুতের তারের আঘাতের স্পষ্ট চিহ্ন রয়েছে। আর তা দেখেই ধানখেত লাগোয়া এলাকাতে তারের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেন বনাধিকারিকেরা। তল্লাশির জেরে লাগোয়া এলাকার ধানখেত থেকে বেশ কিছু তারও উদ্ধার হয়।
এদিন হাতির দেহটি যে এলাকায় মিলেছে তার থেকে ৩০০ মিটারের দূরত্বেই গরুমারা জাতীয় উদ্যান লাগোয়া বড়দিঘী বিটের জঙ্গল। গভীর রাতে হাতি জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ধানখেতে ঢুকে পড়েছিল বলেই অনুমান বনকর্মীদের। এটি একটি পূর্ণবয়ষ্ক পুরুষ হাতি বলে জানান প্রধান বনপাল সন্দীপ সুন্দ্রেওয়াল। তাঁর কথায়, ‘‘হাতির মৃত্যুটি অস্বাভাবিক নয়। আমরা কারণ খুঁজতে তদন্ত শুরু করেছি।’’
উল্লেখ্য গত সেপ্টেম্বরেই বৈকুন্ঠপুর বনবিভাগের বেলাকোবা রেঞ্জের মহারাজঘাট এলাকার ধানখেত থেকে একই ভাবে হাতির মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছিল , সেটির মৃত্যুর তদন্তেও বিদ্যুতের শকের তত্ত্বই জোরালো হয়েছিল। জঙ্গল লাগোয়া এলাকাতে ধানখেত বাঁচাতে এভাবে বিদ্যুত সংযোগ দিয়ে তার বিছিয়ে রাখার প্রবণতা নতুন নয়। কিন্তু নজরদারি এবং সচেতনতা এই দুইয়ের অভাবেই বারবার এভাবে হাতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ দিন হাতির মৃত্যুর খবর পেয়ে কুমলাই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রাম থেকে বাসিন্দারা ভিড় জমালেও মৃত্যুর কারণের বিষয়ে প্রত্যেকেই মুখে কুলুপ এটেছেন।
এলাকার বাসিন্দা বিনয় রায়, তহিজা বানুদের কথায় জঙ্গল থেকে বাইরে এসে এভাবে হাতির মৃত্যু আমাদের এলাকায় আগে হয় নি তবে কীভাবে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে তা বলতে পারব না। লাটাগুড়ি এলাকার পরিবেশপ্রেমী সংগঠন গ্রীণলেবেলের কর্মকর্তা অনির্বাণ মজুমদারের কথায় জঙ্গল লাগোয়া ধানখেতে বিদ্যুতের তার বিছিয়ে রাখার ঘটনা সবথেকে বেশি ঘটলেও এলাকাতে নজরদারি নেই বললেও চলে। সচেতনতা এবং নজরদারি যৌথ ভাবে চালানো হলে হাতির এই ধরনের মৃত্যু রোখা যেত।