দেরিতে মা হলে সুস্বাস্থ্যে গুরুত্ব দিচ্ছেন ডাক্তারেরা

আধুনিক জীবনে বিয়ের বয়সের ধারণা বদলে গিয়েছে। ত্রিশের কোঠায় পৌঁছে এখন অনেক মেয়ে বিয়ে করছেন। সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করতে করতে চল্লিশ পেরিয়ে যাচ্ছে।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ মার্চ ২০১৮ ০৩:২০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বিয়ের সাত বছর পরেও সন্তানের জন্ম দিতে পারছিলেন না বছর আটত্রিশের দেবারতি সাহা (নাম পরিবর্তিত)। তিন বার তাঁর গর্ভপাত হয়। স্ত্রী-রোগ চিকিৎসক তাঁকে আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণের পরামর্শ দেন। আইভিএফ পদ্ধতিতেও প্রথম বার সন্তান ধারণ সফল হয়নি। দ্বিতীয় বার সুযোগ নেওয়ার পরে তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন।

Advertisement

চিকিৎসকেরা দেবারতিকে জানান, ডিম্বাণুর মান খারাপ হয়ে যাওয়ার ফলেই নানা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। দেবারতির মতো একই সমস্যায় ভুগছিলেন ঋতিকা দত্ত-ও (নাম পরিবর্তিত)। কয়েক বার গর্ভপাত হওয়ার পরে আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তানপ্রসব করেন আইটি ইঞ্জিনিয়ার ঋতিকাও।

আধুনিক জীবনে বিয়ের বয়সের ধারণা বদলে গিয়েছে। ত্রিশের কোঠায় পৌঁছে এখন অনেক মেয়ে বিয়ে করছেন। সন্তান ধারণের পরিকল্পনা করতে করতে চল্লিশ পেরিয়ে যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, প্রাকৃতিক নিয়মে সন্তান ধারণ করতে না পারলেও আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণে কোনও সমস্যা হবে না। কিন্তু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে ডিম্বাশয়ে শুক্রাণু প্রতিস্থাপনের এই প্রক্রিয়ার জন্যও একটি ‘সঠিক বয়স’ রয়েছে।

Advertisement

সম্প্রতি আইভিএফ নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে নানা ভ্রান্ত ধারণা কাটাতে আলোচনা হয়। সেখানে শহরের এক বেসরকারি আইভিএফ ক্লিনিকের চিকিৎসক অরিন্দম রথ বলেন, ‘‘মহিলাদের সন্তান ধারণের সঠিক সময় ২৫ থেকে ৩৫ বছর। সুস্থ সন্তান প্রসবের জন্য বাবা-মায়ের সুস্বাস্থ্য জরুরি।’’ তিনি জানান, ৩৮ বছরের বয়সের পরে মেয়েদের ডিম্বাণুর মান কমে যায়। তাই তার আগে সন্তানের পরিকল্পনা করা জরুরি। অনেকেই মনে করেন, আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণে নির্দিষ্ট কোনও বয়সের সীমা নেই। সে ধারণা ঠিক নয়।

অরিন্দমবাবুর কথায়, ‘‘মহিলাদের ডিম্বাণুর মানই একমাত্র আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণে সফলতার মাপকাঠি নয়। এর পাশাপাশি বাবা-মায়ের অন্যান্য শারীরিক গঠন এবং হরমোনজনিত দিকগুলি একই ভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’’

আইভিএফ পদ্ধতিতে মহিলাদের বয়স সীমা সংক্রান্ত ধারণার পাশাপাশি অতিরিক্ত সাবধানতার বিষয়েও উঠে আসে আলোচনায়। আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণ করলে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, এই ধারণাও ভ্রান্ত বলেই জানান উপস্থিত চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানান, স্বাভাবিক গর্ভধারণের মতোই মায়ের যত্ন নিতে হয়। আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান ধারণের জন্য অতিরিক্ত কোনওরকম যত্নের প্রয়োজন হয় না।

আইভিএফ-এ সদ্যোজাতের শারীরিক গঠন নিয়েও নানা ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকেই মনে করেন, আইভিএফ পদ্ধতিতে সন্তান জন্ম নিলে তার শারীরিক ত্রুটি থাকতে পারে। এমনকী সন্তান বিকলাঙ্গও হতে পারে। সেই ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল বলে এই আলোচনায় চিকিৎসকেরা জানান। তাঁরা জানান, মায়ের গর্ভে সন্তানের বিকাশ ঘটে। সেটা সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়ম মেনেই হয়। কৃত্রিম উপায়ে শুক্রাণু এবং ডিম্বাণুর মিলন ঘটলেও এর সঙ্গে সন্তানের বিকলাঙ্গ হওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন