FIFA U-17 World Cup

ভ্যানচালকের ছেলে আজ বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে

অভিজিৎ সরকার নামে ওই ছেলেটা নেহাতই দিন আনি-দিন খাই পরিবারের। বাবা হরেন সরকার ভ্যান-চালক।

Advertisement

প্রকাশ পাল

ব্যান্ডেল শেষ আপডেট: ০৫ অক্টোবর ২০১৭ ১৮:০৯
Share:

ব্যান্ডেলের কেওটার হেমন্ত বসু কলোনিতে বেলাগাম উচ্ছ্বাস !

ঘরের ছেলে বিশ্ব ফুটবলের মঞ্চে। অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে ছেলেটা দেশের অন্যতম প্রধান ভরসা। ব্যান্ডেলের কেওটার হেমন্ত বসু কলোনিতে তাই উচ্ছ্বাস বেলাগাম!

Advertisement

বৃহস্পতিবার সকালেই গোটা পাড়া জুড়ে কয়েক হাত অন্তর জাতীয় পতাকা আর ছেলেটার ছবি লাগানো হয়ে গিয়েছে। মুখে মুখে আলোচনা। স্থানীয় উন্নয়ন সমিতির মাঠে বড় পর্দা লাগানোর তোড়জোড় চলছিল। ছেলেছোকরা থেকে ছাপোষা মহিলা— কে নেই সেই প্রস্তুতিতে! আজ, শুক্রবার যে আমেরিকার বিরুদ্ধে ভারতের উদ্বোধনী ম্যাচ।

আরও পড়ুন, ফিফার ‘না’, বিশ্বকাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বাতিল

Advertisement

অভিজিৎ সরকার নামে ওই ছেলেটা নেহাতই দিন আনি-দিন খাই পরিবারের। বাবা হরেন সরকার ভ্যান-চালক। মা অলকাদেবী বিড়ি বাঁধেন। হরেনবাবু পাড়ায় ফুটবল খেলতেন। একমাত্র সন্তান অভিজিৎও ছোট থেকে ফুটবলে আসক্ত। ব্যান্ডেলের বাণীচক্র ক্লাবে কোচ অশোক মণ্ডলের কাছে ফুটবলের অআকখ শেখা। বছর কয়েক আগে তাঁর হাত ধরেই তিন সতীর্থের সঙ্গে বাংলা দলে ট্রায়াল দিতে যাওয়া। বাকীটা ইতিহাস। বিশ্বকাপে টালির চালের একতলা বাড়ির ওই বাসিন্দার শরীরেই সেঁটে থাকবে দলের ১০ নম্বর জার্সিটা।

আরও পড়ুন, যুব বিশ্বকাপের খুঁটিনাটি এক নজরে

বৃহস্পতিবারেও ভ্যান নিয়ে কাজে বেরিয়েছিলেন হরেনবাবু। তিনি জানান, স্ত্রী অসুস্থ থাকায় ছেলের খেলা দেখতে যেতে পারবেন না। তবে, গোটা পাড়ার সঙ্গেই বড় পর্দায় খেলা দেখবেন। মনেপ্রাণে চান, সতীর্থদের গোলের বল বাড়ানোর পাশাপাশি ছেলে গোলও করুক। তিনি বলেন, ‘‘বুধবার রাতে ছেলে ফোন করেছিল। বলেছে, আমরা যেন টেনশন না করি। ফুটবলের প্রতি একাগ্রতাই ওকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। এর পিছনে কোচ অশোক মণ্ডলের ভূমিকাও প্রচুর।’’ দুপুরে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর আয়োজনে ব্যস্ত ছিলেন অলকাদেবী। বললেন, ‘‘মা লক্ষ্মীর কাছে ছেলের সাফল্য কামনা করব। ও যেন দেশের মুখ উজ্জ্বল করতে পারে।’’ আর কোচ অশোকবাবু বলছেন, ‘‘অভিজিৎ ভীষণ শৃঙ্খলাপরায়ণ। ওকে বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলিয়েছি। যে কোনও পজিশনে দিব্যি খেলে দিয়েছে। ভারত যথেষ্ট কঠিন গ্রুপে আছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস ভারত ভাল ফলই করবে। আর তাতে অভিজিতের বড় ভূমিকা থাকবে।’’

পাড়া-পড়শিরা অভিজিৎকে নিয়েই মেতে রয়েছেন।— নিজস্ব চিত্র।

কয়েক দিন ধরে তিলক শীল, ননী হাওলাদার, বিশ্বজিৎ সরকার, শুভদীপ মণ্ডল, বলাই মজুমদারদের মতো পাড়া-পড়শিরা অভিজিৎকে নিয়েই মেতে রয়েছেন। আগে কখনও ফুটবল খেলা দেখেননি, এমন মহিলাও ফুটবল জ্বরে ভুগছেন। বলাইবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের পাড়ার ছেলে ১০ নম্বর জার্সি পরে মাঠ মাতাবে। ভাবা যায়! ওর জন্য যেন দুর্গাপুজোর উৎসব এখানে দীর্ঘায়িত হয়ে গিয়েছে। রান্নাঘরে ফুটবল ঢুকে পড়েছে।’’ কাকলি শীল নামে এক মহিলা বলেন, ‘‘ফুটবল তেমন বুঝি না। কিন্তু অভিজিতের জন্য কাল সবার সঙ্গে খেলা দেখব।’’ বন্ধু ভাস্কর দে’র বক্তব্য, ‘‘ছোট থেকে এক সঙ্গে বেড়ে উঠেছি। অভিজিৎ আমাদের গর্ব। বিশ্বের দরবারে ও দাপিয়ে বেড়াবে, ভেবেই দুর্দান্ত অনুভূতি হচ্ছে।’’

কাউন্টডাউন শুরু। আজ দিল্লিতে জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে আমেরিকার বিরুদ্ধে খেলায় দেশের মিডফিল্ডারের দিকেই তাকিয়ে থাকবে হেমন্ত বসু কলোনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন