ভারতের টেস্ট অধিনায়কত্ব তাঁর কাছে নতুন নয়। এর আগেও করেছেন। অস্ট্রেলিয়ায়। বাংলাদেশে। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ সফর বলতে যা বোঝায়, কোনওটাই ছিল না। অস্ট্রেলিয়ায় ভাঙা সিরিজ থেকে ধরতে হয়েছিল। বাংলাদেশে খেলেছিলেন মোটে একটা টেস্ট। সে দিক থেকে দেখলে, আসন্ন শ্রীলঙ্কা সফর প্রথম পূর্ণাঙ্গ টেস্ট সফর হতে চলেছে তাঁর। যেখানে তিনটে টেস্ট ম্যাচের সিরিজ খেলবে তাঁর টিম।
এবং বিরাট কোহলি উত্তেজিত।
শ্রীলঙ্কা সফরে রওনা হওয়ার আগে ভারত ‘এ’-র জার্সিতে অস্ট্রেলিয়া ‘এ’-র বিরুদ্ধে নেমে পড়েছিলেন বিরাট। যাতে একটা প্রস্তুতি ম্যাচ খেলে রাখা যায়। ‘‘আসলে শ্রীলঙ্কাই টেস্ট ক্যাপ্টেন হিসেবে আমার প্রথম পূর্ণাঙ্গ অ্যাসাইনমেন্ট। বাংলাদেশে একটা টেস্ট খেলেছিলাম। সেটা সিরিজ ছিল না। তাই শ্রীলঙ্কা সফর আমার এবং আমার টিমের কাছে একটা নতুন চ্যালেঞ্জ হবে। আমাদের স্কোয়াডের বেশির ভাগই তরুণ। যারা চাইবে নিজেদের কেরিয়ার তৈরি করতে,’’ শনিবার বোর্ডের ওয়েবসাইটে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলে দিয়েছেন বিরাট। এবং বলে তাঁর ফের সংযোজন, ‘‘আমার ও আমার টিমের কাছে এটা খুব উত্তেজক একটা ব্যাপার। টেস্টে ভাল করার জন্য যা যা করা দরকার, সবই করছে আমার টিম। যদি আমাদের প্রস্তুতি ভাল হয়, যদি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি ঠিক থাকে, নিশ্চিত যে শ্রীলঙ্কায় আমরা খুব ভাল করব। নিজের টিমের ভাল করার ব্যাপারে আমি আত্মবিশ্বাসী। সঙ্গে এটাও আশা রাখি যে বোর্ড আমাকে যে কাজটা দিয়েছে, তারও মর্যাদা দিতে পারব।’’
প্রথম পূর্ণাঙ্গ সফরে রওনা হওয়ার আগে ক্যাপ্টেন কোহলি পাশে পেয়ে যাচ্ছেন ভারতীয় ক্রিকেটের আর এক মহীরূহকে। তিনি— রাহুল দ্রাবিড়। ভারত ‘এ’ দলের কোচের বিশ্বাস, প্রথম সিরিজেই অধিনায়ক হিসেবে দুর্দান্ত করবেন বিরাট। শুধু তাই নয়, দ্রাবিড় এটাও মনে করেন যে, লোকে যা-ই বলুক বিরাটের নিজের আগ্রাসী মনোভাব থেকে সরে আসা ঠিক হবে না। বরং আগ্রাসী মেজাজটা ধরে রেখেই চালিয়ে যাওয়া উচিত।
সাম্প্রতিকে ভারতের এক নম্বর ব্যাটসম্যানের অফ ফর্ম দেখে কোনও কোনও মহল বলতে শুরু করেছিল, নিজের আগ্রাসী মনোভাবে বোধহয় একটু কাঁটছাট প্রয়োজন বিরাটের। দ্রাবিড় যা পত্রপাঠ উড়িয়ে দিলেন। ‘‘যে যা, তার সেটা হওয়ার চেষ্টা করাই ভাল। আর ক্রিকেট এমনই। এখানে বিভিন্ন মননের লোকেরই সাফল্যের সম্ভাবনা থাকে। সবাইকে একই রকম চিন্তা ভাবনা রেখে সফল হতে হবে, এমন কোনও ব্যাপার ক্রিকেটে নেই। ক্রিকেটে এমন অনেক উদাহরণ আছে যারা কি না আগ্রাসী হয়ে সাফল্য পেয়েছে। ওদের দর্শনটা আলাদা। আর কেউ একটু বেশি আগ্রাসী হয়, কেউ কম,’’ চেন্নাইয়ে এ দিন ম্যাচ শেষে বলে দিলেন দ্রাবিড়। আসন্ন সফর নিয়ে কোহলিকে একটা প্রেসক্রিপশনও ধরিয়ে দিচ্ছেন দ্রাবিড়— সব সফরই গুরুত্বপূর্ণ। এটাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কোনও দরকার নেই। শুধু নিজের সর্বশক্তি দিয়ে সেরা প্রচেষ্টাটা করে যাও। ‘‘বিরাটের সবচেয়ে বড় গুণ হল ওর পরিশ্রম। আর ও যে এখানে খেলে গেল, তাতে ওর ভালই হবে,’’ বিরাট সম্পর্কে বলে দিচ্ছেন ‘দ্য ওয়াল।’
‘গুরু’ দ্রাবিড়কে নিয়ে বিরাট নিজেও উচ্ছ্বসিত। বলে দিচ্ছেন, ‘‘ওঁর সঙ্গে থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়। উনি এত শান্ত, ওঁকে দেখলে এতটা ভরসা পাওয়া যায় যে নিজের ক্রিকেট নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছে না করলেও মনে হবে আমার ক্রিকেট ঠিক আছে। ঠিকঠাক চলছে। ওঁকে দেখলেই এত কিছু শেখা যায়!’’ আর লোকে বললেও, ভারতের টেস্ট অধিনায়ক নিজের ব্যাটিং ফর্ম নিয়ে খুব দুশ্চিন্তাতেও নেই। বাড়তি প্রচেষ্টা বা নিজের আগ্রাসী মনোভাব থেকে সরে আসা— কোনওটারই দরকার তিনি দেখছেন না। ‘‘ব্যাটসম্যান হিসেবে আমি বরাবরই দায়িত্ব নিয়ে থাকি। এটা আমার ক্রিকেটের ধর্ম। যে কোনও টিমের হয়ে খেলি না কেন, সব সময় জেতার চেষ্টা করে এসেছি। মনে হয় না এর থেকে আমার সরে আসার কোনও দরকার আছে। আর মনে হয়, বোর্ড যে আমাকে দেশের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য বেছেছে তার পিছনে এটা একটা বড় কারণ।’’ এখানে না থেমে কোহলি আরও যোগ করেছেন, ‘‘আমি এ ভাবে ক্রিকেটটা খেলি। ব্যাট করি বা অন্য কিছু, একশো শতাংশ দিয়ে থাকি বরাবর। তাই মনে হয় না ব্যাটিং নিয়ে বাড়তি খাটাখাটনির দরকার আছে। কারণ, টিমের হয়ে দায়িত্ব আমি সব সময়ই নিয়ে থাকি। আর যত দিন দেশের হয়ে খেলব, দায়িত্ব নিয়েই খেলব।’’