একটি টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের ফাঁকে সানিয়ার সঙ্গে বিজয় অমৃতরাজ। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
প্রায় চার দশক পরে তিনি কলকাতায়। প্রিয় বন্ধু জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের আমন্ত্রণে। ৬৫ বছরে পা রেখেছেন। কিন্তু তাঁকে দেখে বয়স বোঝার কোনও উপায় নেই। সবসময় টগবগে দেখাচ্ছে। ভারতীয় টেনিসের উন্নতিতে যে কোনও উদ্যোগ নিতে তৈরি। শনিবার আনন্দবাজার-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে লিয়েন্ডার থেকে ফেডারার, নানা প্রশ্নের উত্তর দিলেন বিজয় অমৃতরাজ।
প্রশ্ন: ১৯৭৩ সালে আপনার উইম্বলডন আর যুক্তরাষ্ট্র ওপেনের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর থেকে ভারতের সিঙ্গলস খেলোয়াড়ের অভাব থাকার ছবিটা রয়েই গিয়েছে। এই অভাবটা কি পূরণ হবে না?
বিজয় অমৃতরাজ: বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ৫০ বা ১০০ জনের মধ্যে ধারাবাহিক ভাবে খেলোয়াড় চাই আমাদের। ডেভিস কাপ, ফেড কাপের বিশ্ব গ্রুপে উঠতে গেলে এটা চাই-ই। চারটে গ্র্যান্ড স্ল্যামেও তো আমরা ধারাবাহিক ভাবে ভারতীয় খেলোয়াড় দেখি না এখন। এটাই কারণ।
প্র: সিঙ্গলসে প্রথম ৫০ বা ১০০-এ খেলোয়াড় তুলে আনতে কী করা উচিত আমাদের?
বিজয়: আমাদের একটা নির্দিষ্ট সিস্টেম বা পদ্ধতি চাই। স্পেন, ফ্রান্স, সুইডেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো টেনিসে সফল দেশগুলোর সিস্টেমকে অনুকরণ করা যায়। একটা রোড ম্যাপ গড়তে হবে। ১০ বছর পরে আমি কোথায় যেতে চাই সেটা সামনে রেখে এগোতে হবে।
প্র: ভারতীয় টেনিসের বর্তমান ডেভিস কাপ দলের উপর কতটা আশা আপনার?
বিজয়: এই ডেভিস কাপ টিমে খুব ভাল ভাল ছেলেরা আছে। প্রতিভার সঙ্গে ওরা সে রকম পরিশ্রমও করতে পারে। বিদেশের তুলনায় আমাদের ছেলেরা একটু বেশি বয়সে পরিণত হয়। সেটাও কোনও সমস্যা নয়, আমাদের ডেভিস কাপ দলে এখন লম্বা-চওড়া খেলোয়াড়ের অভাব নেই। সঠিক পথে শুধু এ বার এগিয়ে চলতে হবে।
প্র: রামকুমারের সঙ্গে দেখলাম বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলেন? কোনও টিপস দিচ্ছিলেন?
বিজয়: এখন টেনিসে অনেক বদল আসলেও প্রাথমিক জায়গাটা তো একই রয়েছে। তাই ওকে বলছিলাম, নিজের শক্তি অনুযায়ী সব সময় খেলা উচিত। সেটাই ফোকাস করো।
প্র: ডেভিস কাপে কিছু পরীক্ষামূলক ভাবে পরিবর্তন আসছে। তিন দিনের বদলে দু’দিনের টাই, পাঁচ সেটের বদলে দু’সেটে খেলা হবে। এতে কি ভারতের সুবিধে হবে?
বিজয়: আমি ডেভিস কাপে পরিবর্তনের পক্ষে নই। ডেভিস কাপ আমাদের মতো দেশের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে একটা দেশের সরকারও যুক্ত থাকে। আমরা যখন ফাইনালে উঠেছিলাম রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ড্র-এ অংশ নিয়েছিলেন। আমি তাই ডেভিস কাপের সেই ঐতিহ্য, নিয়ম-কানুন একই রকম রাখার পক্ষপাতি।
প্র: লিয়েন্ডার পেজ ডেভিস কাপে ডাবলসে রেকর্ড গড়ার থেকে আর একটা ম্যাচ দূরে? লিয়েন্ডারের কি ডেভিস কাপে সুযোগ পাওয়া উচিত?
বিজয়: টেনিসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল দক্ষতা। লিয়েন্ডারের এখন দক্ষতা থাকলে ওর দলে থাকা উচিত। দক্ষতা না থাকলে নয়।
প্র: এক বছর আগেও কি আপনি বিশ্বাস করতেন রজার ফেডেরার দু’দুটো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতবেন?
বিজয়: রজার ফেডেরারের মতো মহান খেলোয়াড়ের ইচ্ছেটাই বড় কথা। কখন সে সরে দাঁড়াবে খেলাটা থেকে সেটা সেই ঠিক করবে। আর কেউ নয়। ফেডেরারের প্রতিভা নিয়ে কখনও প্রশ্ন ছিল না। যে রকম এখন টাইগার উডসের প্রতিভা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায় না। যদি ইচ্ছে আর ফিটনেস থাকে তা হলে মহান খেলোয়াড়রা বয়সের তোয়াক্কা না করে এগিয়ে যেতে পারে।
প্র: রাফায়েল নাদাল আর নোভাক জকোভিচের ক্ষেত্রেও কি একই কথা বলা যায়?
বিজয়: একেবারেই বলা যায়। জকোভিচ চোটের জন্য বেশ কিছুদিন কোর্টের বাইরে। নাদালের মরসুমের শেষের দিকে চোট লেগেছে। ওরা দু’জনেই দেখবেন আসন্ন মরসুমে দারুণ ভাবে প্রত্যাবর্তন ঘটাবে।
প্র: আপনার আয়োজিত চ্যাম্পিয়ন্স টেনিস লিগ দু’মরসুম চলার পরে গত দু’বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। এই টুর্নামেন্ট নিয়ে ভবিষ্যতে পরিকল্পনা কী?
বিজয়: আমরা টুর্নামেন্টের বিভিন্ন ফর্ম্যাট নিয়ে কথা বলছি। দেখা যাক কী হয়।
প্র: এখন থেকে ১০ বছর পরে ভারতীয় টেনিসকে কোথায় দেখছেন?
বিজয়: আশা করি আমরা ডেভিস কাপের বিশ্ব গ্রুপে খেলব, আশা করি আমরা গ্র্যান্ড স্ল্যামে সিঙ্গলসে আরও সাফল্য পাব, বিশ্ব র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম পঞ্চাশে আমাদের খেলোয়াড়দের নিয়মিত ভাবে দেখতে পাব। এটা স্বপ্ন, তবে ভারতীয় টেনিস এখন যে ভাবে এগোচ্ছে, স্বপ্নটা অবাস্তব নয়।