উদ্বোধনেই ‘আতঙ্ক দে কলকাতা’

ঊনত্রিশ দিন ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এগারোশো ছাপান্ন মিটার উচ্চতা আর চার ডিগ্রি তাপমাত্রায় দাঁড়িয়ে যে সংকল্প নেওয়া হয়েছিল, তা সাইক্লোনের মতো আছড়ে পড়ল রবিবারের যুবভারতীতে! এমনকী নব্বই মিনিটের ঝড়ের গতি এতটাই তীব্র ছিল যে মুম্বই থেকে শুরু করে দিল্লি, চেন্নাই, গোয়া, গুয়াহাটি সর্বত্রই আতঙ্ক আর আতঙ্ক আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচেই আটলেটিকো দে কলকাতার নাম অনায়াসে বদলে ফেলা যেতে পারে।

Advertisement

প্রীতম সাহা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:৫৫
Share:

আটলেটিকোর প্রথম গোলের পরে অভিনব সেলিব্রেশন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস

ঊনত্রিশ দিন ধরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এগারোশো ছাপান্ন মিটার উচ্চতা আর চার ডিগ্রি তাপমাত্রায় দাঁড়িয়ে যে সংকল্প নেওয়া হয়েছিল, তা সাইক্লোনের মতো আছড়ে পড়ল রবিবারের যুবভারতীতে!

Advertisement

এমনকী নব্বই মিনিটের ঝড়ের গতি এতটাই তীব্র ছিল যে মুম্বই থেকে শুরু করে দিল্লি, চেন্নাই, গোয়া, গুয়াহাটি সর্বত্রই আতঙ্ক আর আতঙ্ক!

আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচেই আটলেটিকো দে কলকাতার নাম অনায়াসে বদলে ফেলা যেতে পারে।

Advertisement

‘আতঙ্ক দে কলকাতা।’

না হলে আর অমিতাভ বচ্চন ম্যাচের শেষে স্টেডিয়ামের গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে বলেন, “ফাটাফাটি ফুটবল। কলকাতা মন ভরিয়ে দিল। আটলেটিকো যে ফুটবলটা খেলল, তাতে কিন্তু বাকি দলগুলোকে সাবধান থাকতে হবে।”

বিগ বি-র পিছনেই তখন হাত নাড়তে নাড়তে বেরোচ্ছেন মুম্বইয়ের অন্যতম মালিক রণবীর কপূর। নিরাপত্তারক্ষীদের কড়াকড়ির মধ্যে কোনও রকমে মুখ বার করে বলে গেলেন, “একটা ম্যাচ হারলে সব শেষ হয়ে যায় না। মুম্বই পরের ম্যাচ থেকে ডাবল স্পিডে কামব্যাক করবে। তবে আটলেটিকো কিন্তু চমকে দিল। অন্য দলগুলোকেও ভুগতে হবে।”

ম্যাচ শুরুর আগে যে অভিষেক বচ্চন মুম্বই সিটি-র বন্দনায় পঞ্চমুখ ছিলেন, সেই বিগ বি-পুত্রের গলাতেও ‘ফাটাফাটি ফুটবল’। ম্যাচ চলাকালীন গ্যালারিতে মুম্বইয়ের মালিক রণবীরকে যত না উত্‌সাহিত লাগল, তার চেয়ে বেশি চিন্তামগ্ন দেখাচ্ছিল অভিষেককে। এক-একটা গোল করছে হাবাসের দল, আর তত মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে তাঁর। টেনশনে কখনও নখ খাচ্ছেন। কখনও মাথা চাপড়াচ্ছেন। অবশেষে মুম্বইয়ের হারে নিজের মত বদলে বলে গেলেন, “কলকাতার দলটাকে দেখে খেলতে হবে। আমাদের চেন্নাইয়ান্সের ডিফেন্স ভাল হলেও, কলকাতার অ্যাটাকিং লাইন দেখলাম আরও ভাল।”

নর্থ-ইস্ট ইউনাইটেডের অন্যতম মালিক জন আব্রাহাম অবশ্য আগাগোড়াই গার্সিয়াদের প্রশংসা করে এসেছেন। এবং রবিবারের ৩-০ জয়ের পরে তাঁর খুশির যেন কোনও শেষ নেই। “আমি তো শুরুতেই বলেছিলাম, আটলেটিকো হল এই টুর্নামেন্টের কালো ঘোড়া। ফুটবলারদের মধ্যে এত ভাল বোঝাপড়া খুব কম দলেই আছে।”

গার্সিয়াদের জয়জয়কার যেন শেষ হওয়ার নয়! সবচেয়ে বড় ব্যাপার হল, প্রশংসা শুধু বড় ব্যবধানে জয়ের জন্য হচ্ছে না। হচ্ছে সুন্দর ফুটবলের জন্য। যুবভারতীর যে ষাট হাজার দর্শক খেলাটা উপভোগ করতে এসেছিলেন, তাঁদের আনন্দ দেওয়ার জন্য। একটা আদর্শ ফুটবল-পরিবেশ তৈরি করার জন্য। আর এই সব কিছুর জন্য কলকাতার আটলেটিকো কর্তাদের মানসিকতাকে কুর্নিশ জানাচ্ছেন হাবাস-গার্সিয়ারা। যাঁরা অর্থের চিন্তা না করে টিমকে স্পেনে প্র্যাকটিস করার সুযোগ করে দিয়েছেন। স্প্যানিশ ফুটবলের সঙ্গে ভারতীয় ফুটবলের একটা অদ্ভুত মেলবন্ধন তৈরি করেছেন। আটলেটিকোর টিম ম্যানেজার রজত ঘোষদস্তিদার বলছিলেন, “স্পেনের প্র্যাকটিসটাই সব বদলে দিয়েছে। ওই ঠান্ডায় ঊনত্রিশ দিন কাঁপতে কাঁপতে সকাল-বিকেল অনুশীলন করা তো আর মুখের কথা নয়। গরমে সব টিমকেই খেলতে হবে। কিন্তু আমরা এত উঁচুতে প্র্যাকটিস করার সুফল এখন পাচ্ছি। অন্য সবাই ক্লান্ত হয়ে পড়লেও আমরা নব্বই মিনিট একই গতিতে খেলতে পারছি।” দলের এত বড় জয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত টিমের অন্যতম মালিক উত্‌সব পারেখও। তাঁর কথায়, “কোনও এক জন ব্যক্তির নয়। এটা টিম আটলেটিকোর জয়। এই ম্যাচের পজিটিভগুলো নিয়ে আমাদের আরও ভাল খেলতে হবে।”

তবে টিম আটলেটিকো এত বড় জয় পেলেও, ড্রেসিংরুমে তার কোনও প্রভাব নেই। উদ্বোধনী ম্যাচেই চার চারটে পুরস্কার পকেটে। তা-ও কোনও বাড়তি উচ্ছ্বাস নেই। উত্‌সবের মেজাজও অনুপস্থিত। সবাই যে যার মতো বরফ-স্নান করে সোজা টিম বাসে চড়ে হোটেলে ঢুকে পড়লেন। ম্যাচের অন্যতম গোলদাতা ফিকরু বলছিলেন, “তিন পয়েন্ট আমাদের কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিন গোল নয়। আর এই ম্যাচ এখন অতীত। তা নিয়ে ভাবতে চাই না।” পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা পদানির মুখেও একই কথা। “ম্যাচের পর এটা আর মুম্বই ম্যাচের ড্রেসিংরুম নেই। এখন এটা গুয়াহাটি ম্যাচের ড্রেসিংরুম। যা আলোচনা হল পরের ম্যাচ নিয়েই।”

‘মিশন গুয়াহাটি’র মধ্যেই অবশ্য নিজেদের করা গোলগুলো আপনজনদের উত্‌সর্গ করে গেলেন ফিকরু-বোরহা ফার্নান্দেজরা। ম্যাচের প্রথম গোলদাতা ফিকরু বললেন, “আমার বউ আর ছেলে-মেয়েদের উত্‌সর্গ করলাম গোলটা।” আর বোরহার মন্তব্য, “এই সপ্তাহেই দিদাকে হারিয়েছি। এই গোল ওঁর জন্য।”

উত্‌সব না হলেও আটলেটিকোর ড্রেসিংরুমে উঁকি মেরে দেখা গেল, ম্যানেজার রজতকে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে স্বস্তির আলিঙ্গন করছেন গোলকিপার শুভাশিস রায়চৌধুরী। গার্সিয়া পিঠ চাপড়াচ্ছেন। বিপক্ষ দলের কিপার সুব্রত পাল এসে অভিনন্দন জানিয়ে যাচ্ছেন। আসলে আইএসএলের উদ্বোধনী ম্যাচে এক জন বাঙালি গোলকিপার ডাহা ফেল করলেও, আর এক জন যে অসম্ভব সফল। শুভাশিস নিজে অবশ্য বলে গেলেন, “ফুটবল জীবনে এত টেনশন আগে কখনও করিনি। তবে এই চাপটাই যেন আমাকে আরও উদ্বুদ্ধ করল ভাল খেলার জন্য।”

গার্সিয়ারা কথা রাখলেন। যুবভারতীও আপন করে নিল কলকাতার আটলেটিকোকে।

সবিস্তার দেখতে ক্লিক করুন...

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন