অনেক দিন ধরেই মুম্বইয়ে আসার ইচ্ছেটা তিল তিল করে বাড়ছিল। ক্রিকেটের জন্য তো বটেই, অন্য একটা কারণেও। হুসেইন জাইদির বইটা প্রায় শেষ করে এনেছি। ‘ডোঙ্গরি টু দুবাই— সিক্স ডিকেডস অব দ্য মুম্বই মাফিয়া’। বেশ আকর্ষণীয়, টান টান উত্তেজনায় ভরা, আবার কখনও বেশ হতাশাজনক। কিন্তু জাইদির লেখার এমন জাদু যে, যখনই থামতে ইচ্ছে করবে, ঠিক তখনই ফের ঠিক ফের চুম্বকের মতো টেনে নেবে পাঠককে। যে শহরের প্রেক্ষাপটে বইটা লেখা হয়েছে, চরিত্রগুলো যে শহরের বাসিন্দা, সেই শহরে বসে বইটা পড়া যেন আরও রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা।
গত দু’দিনে ক্রিকেট-রুটিন আর স্পনসরদের অনুষ্ঠানের বাইরে আমি নিজেকে এই বইয়ের মধ্যেই ডুবিয়ে রেখেছিলাম। আজিন আবার সদ্য হাঁটতে শিখেছে। তাই মাঝে মাঝে ও সুইচবোর্ডের দিকে চলে যাচ্ছে কি না, এটা খেয়াল রাখতে হচ্ছিল। এ ছাড়া বাকি সময়টা ওই বইয়েই। এ বারেও হোটেলের এক কোণে আমার ঘর, যেখান থেকে মেরিন ড্রাইভের অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়।
পড়তে পড়তে মাঝে মাঝে মেরিন ড্রাইভের দিকে তাকাই আর ভাবি, হাজি মস্তান, দাউদ ইব্রাহিম, পাঠান ভাইয়েরা এই শহরে বারবার সন্ত্রাসের বিষ ছড়ানোর পরও কি ভাবে শহরটা আবার নিজের জায়গায় ফিরে এসেছে। আরব সাগরে ডুবতে ডুবতে ওই অস্তগামী সূর্য যে এই মাফিয়াদের কুকম্মে কত মানুষকে শেষ হতে দেখেছে, কে জানে? সাংবাদিক জাইদির অন্তর্তদন্তও অসাধারণ। মাফিয়াদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত নিখুঁত ভাবে তুলে ধরেছেন ওঁর বইয়ে।
আমি খালি ভাবি এই শহরটার কথা। সমাজের সব অংশের মানুষকে কিছু না কিছু দিয়েছে এই শহর। এখনও দিয়ে চলেছে। কিন্তু তার পরিবর্তে সে কী পায়? কিছুই না। দেশকে এত অভিনেতা, গায়ক, শিল্পপতি, ক্রিকেটার দেওয়ার পরও আমাদের মায়েদের মতোই নিঃস্বার্থ।
এমনই এক শহরের গর্বের জন্য লড়ছে আমাদের আজকের প্রতিপক্ষ মুম্বই ইন্ডিয়ান্স। মনে আছে, আগের একটা কলামে লিখেছিলাম, আইপিএলের এক ম্যাচে মিসেস অম্বানীর ১৭ হাজার অবহেলিত শিশুকে গ্যালারিতে নিয়ে আসার কথা? মুম্বই ইন্ডিয়ান্সও শেষ দিকে প্লে অফের দোর গোড়ায় নিজেদের নিয়ে এসে সে রকমই দুর্দান্ত একটা কাজ করে দেখাল। গত ম্যাচে অবশ্য ওদের এবি ডে’ভিলিয়ার্সের দাপটের কাছে হার মানতে হয়েছিল। তবে কম লড়াই করেনি ওরা। ওদের বিরুদ্ধে খেলে আশা করি বেশ তৃপ্তি পাব। তবে সে জন্য আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে হবে।
দলে কিছু পরিবর্তন করতে হতে পারে। কারণ, এখানকার লাল মাটির উইকেটে যথেষ্ট বাউন্স পায় বোলাররা। বাড়তি পেসারের দিকেই আমি ঝুঁকে। কিন্তু অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে (ডোঙ্গরি টু দুবাই-এর প্রভাব কি না, কে জানে)।
শাহরুখ ভাইয়ের সেই ওয়াংখেড়ের ঘটনার পর থেকে মুম্বইয়ে আমরা খেলতে এলেই মিডিয়া তাকে বদলার ম্যাচের তকমা দিয়ে দেয়। সোজা কথাটা বলে দিই, আমরা কোনও বদলার মনোভাব নিয়ে আসিনি। শাহরুখ ভাইও তা চান বলে মনে হয় না। বদলা, প্রতিশোধ- এই শব্দগুলো বরং ‘ডোঙ্গরি টু দুবাই’-এর জন্যই তুলে রাখা ভাল। মিস্টার জাইদিই বরং এ সব নিয়ে চর্চা করুন।