বেঙ্গালুরু-বালিগঞ্জের মধ্যে কয়েক হাজার কিলোমিটারের দূরত্ব রবিবার সন্ধেতে কমে কয়েক গজে দাঁড়াতে চলেছে!
ঠিক যেমনটা তেরো বছর আগে মোহনবাগানের শেষ জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন টিমের লাইন আপে হোসে ব্যারেটো এবং আর সি প্রকাশের মধ্যে মাঠে ব্যবধান থাকত!
ব্যারেটোর পুরনো সেই সতীর্থ যদি রবিবার বেঙ্গালুরুর কান্তিরাভা স্টেডিয়ামে তেরো বছর আগের নিজের পুরনো সবুজ-মেরুন জার্সি পরে গলা ফাটানোর ব্রত নিয়ে থাকেন, তা হলে বাগানের এককালের ‘শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার ভরসা’ ব্যারেটো আজ ওই একই সময় তাঁর বালিগঞ্জের বাড়িতে টিভির সামনেও বসে থাকবেন সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে দিয়ে।
শনিবার ‘সবুজ তোতা’ স্বখেদে বলে দিলেন, ‘‘কাল ম্যাচটা বাড়িতে বসে টিভিতে দেখলেও কিন্তু দেখব সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে চড়িয়ে! সকালেই এক বন্ধু ওটা দিয়ে যাবে বলেছে।’’
বাগানের তিন বারের জাতীয় লিগ খেতাবের প্রথমটা যার কোচিংয়ে পাওয়া সেই টি কে চাত্তুণ্ণির আবার খেলাই দেখা হবে না। কিন্তু মালয়ালি কোচ নিশ্চিত, তিনি গর্বে দশ ইঞ্চি বেড়ে যাওয়া ছাতি নিয়ে রবিবার রাত সাড়ে আটটায় কোচি থেকে দুবাইয়ের বিমানে উঠবেন। ‘‘পাঁচ বছর মোহনবাগানে ট্রফি নেই ভাবা যায়? শুনলেই মনটা খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু এ বার আই লিগটা মোহনবাগানেরই। আর রবিবার ওরা জিতলে আমার বুকের ছাতি দশ ইঞ্চি বেড়ে যাবে।’’
রবিবারের কলকাতার রং কি নিশ্চিত ভাবেই সবুজ-মেরুন?
অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় এবং রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মতো কট্টর ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের কথা শুনে অন্তত তেমনই মনে হবে। উত্তরবঙ্গে শুটিং করার ফাঁকে এ দিন ফোনে পরমব্রত বললেন, ‘‘আমি ইস্টবেঙ্গল সমর্থক হলেও বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে মোহনবাগানের জয় চাইছি। ট্রফিটা তো বাংলায় আসবে।’’
আর ব্রাত্যর কথায়, ‘‘রবিবার এক দিনের জন্য হলেও আমি মোহনবাগান সমর্থক। সন্ধে সাতটা থেকে দু’ঘণ্টা আমি মোহনবাগানের।’’
ডান-বাম, ব্রাজিল-আর্জেন্তিনা, সচিন-সৌরভ, পেলে-মারাদোনা, সানি-কপিল মার্কা বাঙালির যাবতীয় তর্ক কি তা হলে রবিবার তোরঙ্গে তালাবন্দি? যে শহরের ফুটবল পাগল জনতা বিশ্বকাপের সময় তাদের প্রিয় ব্রাজিল হারলে মনেপ্রাণে প্রার্থনা করে আর্জেন্তিনাও যেন পরের ম্যাচেই বিদায় নেয়, সেই শহর হঠাৎ এত দ্রুত মিলে গেল সবুজ-মেরুন আর লাল-হলুদে?
ভবানীপুরে হরিশ পার্কের সামনে এই প্রশ্ন তুলতেই রে রে করে উঠলেন স্থানীয় ক্লাবের মোহনবাগান সমর্থকদের একটা বড় দল। ‘‘আরে আমরা নাকি মাঠ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলাম! এ বার কী বলবে? কাল জিতলে কিন্তু ফের ভারত সেরা হবে কলকাতার ক্লাব। তাও মোহনবাগানের হাত ধরেই।’’
ইস্টবেঙ্গলের দূর্গ যাদবপুর, বিজয়গড়ে কেউ কেউ অবশ্য রসিকতা মিশিয়ে বললেন, ‘‘নিশ্চয়ই কাল আমরা সবাই মোহনবাগানকে সাপোর্ট করব। তবে আমরা সমর্থন করলে ওরা কখনও জিতেছে বলে তো দেখিনি।’’
যা শুনে মোহনবাগান ক্লাবের পরিচিত মুখ তমাল বসু বললেন, ‘‘ও সব ছাড়ুন। মোহনবাগানীরা একাই একশো। বালিগঞ্জে ওয়েভার স্টুডিওতে কাল জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করছি। এখনই হাউস ফুল।’’ তমালের উত্তর কলকাত্তাইয়া সংষ্করণ সুজাত্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ফেসবুকে নিজেদের সংগঠিত করে শোভাবাজার রাজবাড়ির সুতানুটি পরিষদ সভাঘরে তাঁর নেতৃত্বে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের একটা বড় অংশও রবিবার জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করেছে। পর্ণশ্রীতে কলকাতার মেয়রের পাড়ার নবসম্মিলনী ক্লাবে বাগান সমর্থকরা আবার প্রবেশমূল্যও রাখছেন না। আয়োজকদের তরফে সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘বেহালার সব মোহনবাগান সমর্থক একসঙ্গে খেলা দেখব। আর জিতলেই সারা রাত সেলিব্রেশন।’’
বাগান সমর্থকদের আঁতুরঘর হাওড়াতে শনিবার থেকেই সাজ-সাজ রব। সাঁতরাগাছি থেকে সঞ্জীব মুখোপাধ্যায় এয়ারপোর্টের ট্যাক্সিতে ওঠার পথে পাড়ার বন্ধুকে বলে গেলেন, ‘‘বাড়িতে বলেছি কৃষ্ণনগরে আত্মীয়ের বাড়ি যাচ্ছি। তোরা আবার আসলটা বলে দিস না!’’ শিবপুর, সালকিয়ায় চলছে পেল্লাই সবুজ-মেরুন পতাকায় রাস্তাঘাট মুড়ে দেওয়ার আয়োজন। কোথাও বিশাল ফেস্টুন—‘মান্না-চুনীর বংশধর বেঙ্গালুরুতে তুলবে ঝড়।’
রবিবার রাত ন’টায় মান্না-চুনীর বংশধররা আই লিগ ট্রফি হাতে নিতে পারবে কি না তা সময়ই বলবে। কিন্তু তার আগেই একটা ব্যাপার জানা হয়ে গেল—আইএসএল থাকতে পারে। কিন্তু মোহন-ইস্ট নিয়ে বাঙালির চিরন্তন আবেগ কেউ কোনও দিন কাড়তে পারবে না।
বড় চেহারা, ট্যাকল আর আক্রমণ হোক আজ অস্ত্র
মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য
(ডিফেন্স)
গৌতম সরকার
(মাঝমাঠ)
শিশির ঘোষ
(স্ট্রাইকার)
১) স্টপারে বেলো-আনোয়ার খেলুক। ফুটবল বুদ্ধি একটু কম হলেও আনোয়ারের বড় চেহারা আর গায়ের জোর সুনীল-রুনি-রবিনের পাওয়ার ফুটবল আটকাতে কাজে দেবে।
২) যে দিকে বল সেই দিকে ম্যান মার্কিং জরুরি। দশ মিনিট দেখে নাও বেঙ্গালুরু কোন দিকে বেশি আক্রমণ করছে। সে দিকে লোক বাড়াও।
৩) সুনীল-রুনি দু’জনেই ডান পায়ের ফুটবলার। যতটা সম্ভব ওদের বাঁ পায়ে খেলাও। রবিনকে আবার একই কারণে উল্টো।
১) বেঙ্গালুরুর গতি থই সিংহ আর রুনি। শুরুতেই এই দু’জনকে ‘আউট অফ প্লে’ করে দিতে হবে।
২) ফাইনাল ট্যাকল করতে হবে মাঝমাঠেই। যাতে ছোট বক্সের সামনে ফাউলের সম্ভাবনা কমে যায়।
৩) ডিফেন্সিভ থার্ড আর অ্যাটাকিং থার্ডের মধ্যে সমন্বয়ের কাজটা শেহনাজকে দেওয়া উচিত। যাতে বোয়া আরও ফ্রি খেলতে পারে।
১) শুরু থেকেই অ্যাটাকিং খেলুক মোহনবাগান। তাতেই বেঙ্গালুরু কিন্তু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাবে। ভেবে ঠিক করতে পারবে না গোল করবে না বাঁচাবে।
২) ডাবল স্ট্রাইকারে বোয়া-বলবন্তকে দিয়ে শুরু করুক সঞ্জয় সেন। তা হলে সারাক্ষণ ওদের ডিফেন্সের উপর চাপটা থাকবে।
৩) সেট পিস থেকে বল এলে, বোয়া প্রথমে হেড করুক। ফিরতি বলের জন্য সনি কিংবা বলবন্ত যাক।