Md Azharuddin

আজ্জুর ফ্লিক: বিদেশে সুইং খেলতে নৈপুণ্য চাই

৯৯ টেস্ট খেলা প্রাক্তন অধিনায়ক বলে গেলেন, ‘‘বিদেশে গিয়ে আমাদের প্রধান সমস্যা হয় সুইং বোলিংয়ে।”

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০৩:৫৯
Share:

অতিথি: পটৌডি স্মারক বক্তৃতায় শর্মিলা ও আজহার। নিজস্ব চিত্র

পায়ের গোড়া থেকে তাঁর সেই অবিশ্বাস্য ফ্লিকের সঙ্গে এতদিন পরিচিত ছিল কলকাতা। এ দিন দেখে নিল নতুন এক মহম্মদ আজহারউদ্দিনকে। বক্তা আজহারও যে এমন ঝড় তুলতে পারেন, ওবেরয় গ্র্যান্ড হোটেলের বলরুমে সোমবার সন্ধ্যায় উপস্থিত না থাকলে জানা যেত না। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ এবং ‘দ্য বেঙ্গল ক্লাব’-এর যৌথ আয়োজনে টাইগার পটৌডি স্মারক বক্তৃতা দিতে এসে বিরাট কোহালির দলের জন্যও উপদেশ দিয়ে গেলেন তিনি।

Advertisement

৯৯ টেস্ট খেলা প্রাক্তন অধিনায়ক বলে গেলেন, ‘‘বিদেশে গিয়ে আমাদের প্রধান সমস্যা হয় সুইং বোলিংয়ে। সুইং বোলিং করতে যেমন নৈপুণ্যের দরকার হয়, তেমন সুইং খেলতে গেলেও নৈপুণ্য দরকার।’’ খুব সহজ ভাবে বলা খুব দামি কথা। তবে কোহালিদের ০-২ সিরিজ হারে পৃথিবী ভেঙে পড়ার মতো কিছু দেখছেন না তিনি। বরং পরিবারের অগ্রজের মতো পিঠ চাপড়ে দেওয়ার ভঙ্গিতে যোগ করলেন, ‘‘আমাদের টিম ফিরে আসবে। আবার ওরা ভাল খেলবে।’’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পটৌডি-পত্নী শর্মিলা। এবিপি প্রাইভেট লিমিটেডের এমডি ও সিইও ডি ডি পুরকায়স্থ-সহ নানা বিশিষ্ট ব্যক্তি। টাইগার স্মরণ করতে গিয়ে আজহার বললেন, ‘‘এক বার ফ্লাইটে উঠে দেখি আমার পাশেই স্যর বসে আছেন। ভয়েই গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। তার পর উনিই বললেন, বেশি চিন্তার কিছু নেই। ফ্লাইট খুব কম সময়ের। আমি বেশি কিছু বলতে চাইলেও বলার উপায় নেই।’’ গ্র্যান্ড হোটেলের বলরুম হাততালিতে ফেটে পড়ল তাঁর রসবোধ দেখে। যে ভাবে ইডেন এক সময় কুর্নিশ করত কব্জির মোচড়ে ফ্লিক শট দেখে। পটৌডির থেকে পাওয়া তাঁর অমূল্য উপদেশের কথা শোনাতে ভুললেন না। আজকের এই কম্পিউটার-কচকচির ক্রিকেটের মধ্যে সেই সাধারণ জ্ঞানটাই যেন হারিয়ে যেতে বসেছে। ‘‘আমাকে এক বার উনি (পটৌডি) বলেছিলেন, আজহার, তুমি ব্যাটসম্যান। তোমার কাজ রান করা। সেটাই করে যাবে মুখ বুজে। অজুহাত দেবে না।’’

Advertisement

দুই যুগের দুই অধিনায়ক। টাইগার এবং আজহার। দু’জনের মধ্যে সব চেয়ে বড় মিল, ফিল্ডিংয়ে উন্নতি করার শপথ নেওয়া। তাঁরা নিজেরাও দুর্ধর্ষ ফিল্ডার। ‘‘প্রথম যখন এসেছিলাম, ফাইন লেগ থেকে ফাইন লেগে দৌড়ে বেড়াতাম। তার পর সব রকম জায়গায় দাঁড়ানোর ক্যাচ প্র্যাক্টিস শুরু করি। প্রচুর ক্যাচ নিতাম প্র্যাক্টিসে। যে ক্যাচ প্র্যাক্টিস দিত, মাঝেমধ্যে বলত, আজহার একটা তো মিস করো,’’ তাঁর সেরা ফিল্ডার হয়ে ওঠার রহস্য ফাঁস করলেন আজহার। টাইগার পটৌডির নিজের কোনও ব্যাট ছিল না, যে-ব্যাট হাতের সামনে পেতেন, তা নিয়েই নেমে যেতেন শোনার পরে হাসতে হাসতে আজহারের মন্তব্য, ‘‘উনি নবাব। যে কারও ব্যাট নিয়ে খেলতেই পারেন। কিটব্যাগই বা বইবেন কেন?’’ তার পরেই অন্তর থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন, ‘‘কিন্তু এক চোখ নিয়ে তখনকার দিনে এত রান করা সহজ কথা নয়। এখন তো রোজই ক্রিকেট হচ্ছে। এখন খেললে ওঁর রান ৬০০০ হত, সেঞ্চুরি হত অন্তত ১০টি।’’

এখনকার ক্রিকেট প্রসঙ্গে টিপ্পনিও ছিল, ‘‘কী যে দশ-বারো জন করে সাপোর্ট স্টাফ আর সহকারী কোচেরা টিমের সঙ্গে ঘোরে, কে জানে! ভারতীয় দলের সঙ্গে তা-ও ঠিক আছে কিন্তু রাজ্য দলের সঙ্গেও? ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, ফিল্ডিং কোচ সব আছে। তা হলে কোচ আবার কী?’’ হায়দরাবাদি ক্রিকেট নিয়ে নানা মজাদার কাহিনি শোনালেন। ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কোচিং ক্যাম্প কর্তাদের কাছে আর্জি, ‘‘যাদের স্কিল আছে, তাদেরই উৎসাহ দিন। টাকা কামানোর জন্য মিথ্যা আশা দেখিয়ে কী লাভ!’’ বললেন, অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপ ফাইনালে যে ভাবে যুবকের দল বিশ্রী গালিগালাজ করছিল, মেনে নেওয়া যায় না। নির্বাসনের শাস্তি দেওয়া উচিত যাতে ওদের শিক্ষা হয়। এর পরেই সরল পর্যবেক্ষণ, ‘‘আমি জানি না সেঞ্চুরি করে বা উইকেট নিয়ে ওরা গালাগাল দেয় কেন? ভাল করলে তো আনন্দিত হওয়া উচিত, এত রাগ দেখায় কেন ওরা?’’ বল রুম ফের ভরে উঠল হাততালিতে।

বক্তৃতায় মুগ্ধ শর্মিলাও শেষে বলে গেলেন, ‘‘সত্যিই আজহার, তুমি যা বলেছ হৃদয় থেকে বলেছ। টাইগার যে সময় ক্রিকেট খেলত তখনকার দিনে স্ত্রী বা বান্ধবীদের ক্রিকেটারদের সঙ্গে সফরে যাওয়ার অনুমতি ছিল না। আমরা দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে কল-বুক করে কথা বলতাম স্বামীর সঙ্গে। তা-ও এ পার থেকে আমি কী বলছি, ও শুনতে পেত না। ও পার থেকে ও কী বলছে, আমি কিছু বুঝতাম না।’’

ফেলে আসা সেই ক্রিকেট-যুগ। যখন মোবাইল ছিল না, ভরসা ছিল ট্রাঙ্ককল। ও পারে টাইগার, এ পারে শর্মিলা! মনে করিয়ে দিয়ে গেল গ্র্যান্ড হোটেলের আবেগময় সন্ধ্যা!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন