সাঁতারে বাতিল বাংলার দল। — প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
জাতীয় গেমসে আবার বাংলাকে নিয়ে বিতর্ক। এ বার সাঁতারে। যে ইভেন্টে বাংলাকে দু’টি সোনা এনে দিয়েছেন সৌবৃতি মণ্ডল, সেই ইভেন্টের মহিলা রিলে রেসে নামতেই পারল না বাংলা। রিলে প্রতিযোগিতায় কে শুরু করবেন এবং কে শেষ করবেন তা নিয়ে প্রতিযোগীদের মধ্যে ঝামেলায় বাংলাকে বাতিলই করে দিলেন আয়োজকেরা। রিলে দলের প্রতিযোগী স্বস্তিকা দাসের বিরুদ্ধে খারাপ আচরণের অভিযোগ উঠেছে। তবে এমন ঘটনার কথা স্বীকারই করতে চাননি সাঁতার সংস্থার কর্তা রামানুজ মুখোপাধ্যায়।
জানা গিয়েছে, রিলেতে নামার আগে যখন কলরুমে প্রতিযোগীরা হাজির হয়েছিলেন, তখন সেখানে সৌবৃতির সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন স্বস্তিকা। আনন্দবাজার অনলাইনতে সৌবৃতি বললেন, ‘‘রিলে দলে আমার নাম প্রথমে রাখা হয়েছিল। কিন্তু আমি দলকে আগেই বলেছিলাম, আমি সবার শেষে নামব। কিন্তু দল তৈরির সময় সেটা শোনা হয়নি।’’ স্বস্তিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে তিনি বললেন, ‘‘রিলে শুরু হওয়ার আগে আমি, মৌবনী, স্নিগ্ধা এবং স্বস্তিকা কল রুমে দাঁড়িয়েছিলাম। তখনই স্বস্তিকা আমার সঙ্গে খারাপ ভাষায় কথা বলেছে। আমি দিল্লিতে থেকে অনুশীলন করি, দুটো পদক পেয়েছি বলে অহংকারী হয়ে গিয়েছি, এমন সব কথা বলে আমাকে। এক জন ১৪ বছরের মেয়ে, যার থেকে আমি ন’বছরের বড়, সে আমাকে যে ভাবে অপমান করেছে, তাতে আমার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যায়।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, সেখানে বাংলার যাঁরা ছিলেন, তাঁরা কেউ প্রতিবাদ করেননি। তবে দলের বাকিরা তাঁর পাশে ছিল।
সৌবৃতির আরও অভিযোগ, ‘‘আমার মায়ের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেছে স্বস্তিকা। মায়ের দিকে আঙুল তুলে কথা বলেছে।’’
বাংলার হয়ে ভবিষ্যতে আর নামবেন? স্বস্তিকা বললেন, “অবশ্যই বাংলার হয়ে খেলব। বাংলার হয়ে গত আট বছর ধরে খেলছি। প্রচুর পদক দিয়েছি। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও দিন কোনও ধন্যবাদ দেওয়া হয়নি। কোনও সংবর্ধনাও দেওয়া হয়নি। চাই বাংলার লোকেরা যেন আমাকে একটু ভালবাসে।”
কল রুমে ঝামেলার সময় আয়োজকেরা পুরো ব্যাপারটাই খেয়াল করেছিলেন। তাঁরা বাংলার প্রতিযোগীদের কল রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন। বাংলার নামও ইভেন্ট থেকে বাদ দেন। রিলে ইভেন্টে বাংলার পদক পাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকলেও স্রেফ প্রতিযোগীদের ঝগড়ার কারণে বাতিল করে দেওয়ার ঘটনা সাম্প্রতিক কালে ঘটেনি।
যদিও ঘটনার কথা মানতে চাননি রামানুজ। তাঁর বক্তব্য, “এটা তিন দিন আগের কথা। এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। যে হেতু ওই ইভেন্টে পদক পাওয়ার সম্ভাবনা ছিল না, তাই খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিতে আমরাই নাম তুলে নিয়েছিলাম। তাই জন্যই সৌবৃতি দুটো পদক জিতেছে। আসলে গত বার বাংলা সাঁতারে কোনও পদক জেতেনি। এ বার দুটো পদক পেয়েছে বলেই বিভিন্ন কথা ছড়ানো হচ্ছে।” এই ঝামেলার কারণে বাংলার হয়ে ভবিষ্যতে না নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন সৌবৃতি।
বাংলার শেফ দ্য মিশন বিশ্বরূপ দে বললেন, “আমি এখন দেহরাদূনে রয়েছি। সাঁতারের ইভেন্ট হচ্ছে হলদোয়ানিতে, যা প্রায় ছ’ঘণ্টা দূরে। ঘটনার কথা আমি শুনেছি। রিপোর্টও পেয়েছি। দল বাতিল করার খবর সঠিক নয়। জাতীয় গেমসে বাংলা দলকে বাতিল করে দেওয়া হয়েছে, এটা তো অনেক বড় খবর। সে রকম কিছুই হয়নি। কৌশলগত সিদ্ধান্তের কারণেই দল নামানো হয়নি। এটা নিয়ে বিতর্কের কিছু আছে বলে মনে হয় না।”
বাংলা দলের একটি সূত্র থেকে জানা গেল, দলের সঙ্গে থাকছেন না সৌবৃতি। তিনি দিল্লি থেকে এসেছেন। মায়ের সঙ্গে হোটেলে আলাদা বাবে রয়েছেন। ফলে দলের কারোর সঙ্গে তাঁর তেমন যোগাযোগ নেই। সে কথা সৌবৃতি নিজেও স্বীকার করলেন।