একাগ্র: অস্ট্রেলীয় বোলিং ভোঁতা করে দিলেন পূজারা। এএফপি
সিডনি টেস্টের প্রথম দিনটা দেখার পরে একটা কথাই বলতে হবে। চেতেশ্বর পূজারার মনঃসংযোগের কাছে হার মানল অস্ট্রেলিয়া। চেতেশ্বর পূজারার বল ছাড়ার দক্ষতার কাছে আত্মসমর্পণ করলেন অস্ট্রেলিয়ার বোলাররা।
পূজারার ব্যাটিং দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, বোলাররা কোন ছাড়, বোলিং মেশিনও সম্ভবত ক্লান্ত হয়ে পড়বে এ রকম এক জন ব্যাটসম্যানের সামনে!
সিডনির পরে পূজারা ফের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খেলবেন সেই জুলাই মাসে। তিনি যে ওয়ান ডে খেলেন না, টি-টোয়েন্টি খেলেন না, পূজারার নাম আইপিএলে নেই। তা হলে এই ফাঁকা সময়ে কী ভাবে নিজেকে ক্রিকেটের মধ্যে রাখেন পূজারা? তিনি ইংল্যান্ডে কাউন্টি খেলেন। আমি নিশ্চিত, অস্ট্রেলিয়া থেকে ফিরে এসে রঞ্জি ট্রফিও খেলবেন। পূজারার রাজ্য সৌরাষ্ট্র লিগ টেবলে সাত ম্যাচে ২৬ পয়েন্ট পেয়ে পরের পর্বে যাওয়ার ব্যাপারে এগিয়ে আছে। নক-আউটে গেলে নির্ঘাৎ দেখা যাবে ব্যাট হাতে নেমে পড়েছেন পূজারা। আর যে ভাবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বোলারদের ক্লান্ত করেন, সে ভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটেও নিজের কাজটা করে যাচ্ছেন।
মিচেল স্টার্ককে ফাইনলেগে ফ্লিক করে পূজারা যখন সেঞ্চুরিতে পৌঁছে গেলেন, তখন পরিষ্কার হয়ে গেল এই সিরিজটা তাঁরই হতে চলেছে। পূজারার ব্যাটিং বৈশিষ্ট্য নিয়ে একটা কথা বলতে চাই। এই ডিআরএস-এর যুগে ব্যাটসম্যানরা প্যাডে খেলতে ভয় পায়। কিন্তু পূজারার ফুটওয়ার্ক এত ভাল, নিজের ওপর ওঁর এত বেশি আত্মবিশ্বাস যে, নেথান লায়নের ছোটখাটো স্পিনগুলো স্টেপ আউট করে প্যাডে নিয়ে নিচ্ছিলেন। পাশাপাশি স্টেপ আউট করা মানেই যে বল লিফ্ট করা নয়, সেটাও বুঝিয়ে দিয়েছেন পূজারা।
আরও পড়ুন: চে পূজারা: টি-টোয়েন্টি যুগের এক টেস্ট বিপ্লবী
সকালে টিভিটা খুলে একটু স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েছিলাম। একই রাজ্যের দু’জন ওপেনারকে ওপেন করতে দেখে। কর্নাটকের মায়াঙ্ক আগরওয়ালের সঙ্গে কে এল রাহুল। আমরা সুনীল গাওস্কর-রামনাথ পার্কারকে ওপেন করতে দেখেছি। বীরেন্দ্র সহবাগ-গৌতম গম্ভীরকে দেখেছি। তবে রাহুলের ব্যাটিং দেখে মনে হল, এই জুটির আয়ু বেশি নেই। রাহুল খুব সম্ভবত আর একটা আন্তর্জাতিক ইনিংস পাবেন নিজেকে রক্ষা করতে।
আরও পড়ুন: ফিটনেস টেস্টে ব্যর্থ হতেই বাইরে অশ্বিন
তবে তাঁর সতীর্থকে দেখে বলে দেওয়া যায়, এই তরুণ অনেক দিন খেলার জন্যই এসেছেন। নিজের দোষে সেঞ্চুরিটা ফস্কালেন মায়াঙ্ক। সিডনির মতো বড় মাঠে ডিপে ফিল্ডার আছে দেখেও লায়নকে তুলে মারতে যাওয়ার কোনও মানে নেই। কিন্তু বাকি সময়টা আদর্শ ওপেনারের মতো খেলেছেন। সবাই বলছে, মায়াঙ্ক খুব ভাল ফ্রন্টফুটের ব্যাটসম্যান। ড্রাইভগুলো দেখেই তা বোঝা যায়। পাশাপাশি ওঁর ব্যাটিং নিয়ে আরও একটা কথা বলব। মায়াঙ্ক খুব ভাল ব্যাকফুট প্লেয়ারও। যে ভাবে মিচেল স্টার্ক-জশ হেজলউডদের শর্ট বল বটমহ্যান্ড আলগা করে খেলেছেন, তাতেই সেটা স্পষ্ট। সব মিলিয়ে একজন কমপ্লিট ব্যাটসম্যান।
সিডনিতে কোহালিও ভাল শুরু করেছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য আউট হয়ে গেলেন। তবে পুজারার সঙ্গে জুটি বেঁধে ভারতকে তিনশো পার করে দিলেন হনুমা বিহারী। ওর নিজের পছন্দের ছয় নম্বরে নেমে সাবলীল দেখিয়েছে বিহারীকে। আর পূজারাকে দেখে মনে হয়েছে, সেঞ্চুরিটা ডাবল সেঞ্চুরিতে পরিণত করতে মরিয়া। পূজারার বড় রানের খিদেটা এমনই যে, সেঞ্চুরি করার পরের বলটা খারাপ হলেও রক্ষণাত্মক খেলবেন! অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত এক দিনে তিনশো তুলছে, এটা সচারচর দেখা যায় না। এ দিন গেল। বরং এত দিন উল্টোটাই হত।
বৃহস্পতিবারের খেলার একটা মুহূর্ত নিশ্চয়ই কোহালির মনে ধরবে। ৫৭তম ওভারে হেজলউডের একটা বল অস্বাভাবিক রকম নিচু হয়ে গেল। ভারত অধিনায়কের সঙ্গে বোলাররাও নিশ্চয়ই মুচকি হাসছেন দৃশ্যটা দেখে। সিডনির প্রথম দিনের শেষে ভারতীয় শিবিরে এখন ‘ফিল গুড’ আবহাওয়া।