Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
ফের ধিক্কার কোহালিকে, নিন্দা পন্টিংয়ের

ফিটনেস টেস্টে ব্যর্থ হতেই বাইরে অশ্বিন

কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেল বৃহস্পতিবার সকালে। ঠিক হয়েছিল, অশ্বিনের চূড়ান্ত ফিটনেস টেস্ট নেওয়া হবে টস করতে যাওয়ার আগে। উদ্দেশ্য ছিল, যতটা বেশি সময় তাঁকে দেওয়া যায় পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য।

 প্রশ্ন: তিন টেস্টেই ফিটনেস সমস্যায় আক্রান্ত অশ্বিন। ফাইল চিত্র

প্রশ্ন: তিন টেস্টেই ফিটনেস সমস্যায় আক্রান্ত অশ্বিন। ফাইল চিত্র

সুমিত ঘোষ 
সিডনি শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৪০
Share: Save:

কথা ছিল, টেস্ট শুরুর আগেই হয়ে যাবে ‘টেস্ট’। বিরাট কোহালি টস করতে যাওয়ার আগে ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে তাঁর প্রধান স্পিনার আর অশ্বিনের। সিডনি টেস্টের জন্য প্রথমে তাঁকে দলে না রাখা হলেও পরে তেরো জনে রেখে একটা মরিয়া চেষ্টা করতে চাইছিল ভারতীয় দল।

কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়ে গেল বৃহস্পতিবার সকালে। ঠিক হয়েছিল, অশ্বিনের চূড়ান্ত ফিটনেস টেস্ট নেওয়া হবে টস করতে যাওয়ার আগে। উদ্দেশ্য ছিল, যতটা বেশি সময় তাঁকে দেওয়া যায় পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য। অ্যাডিলেড টেস্টের পর থেকেই বাইরে রয়েছেন অশ্বিন। তাঁর তলপেটের বাঁ দিকে চোট লেগেছে। অ্যাডিলেড টেস্টের পরে পঁচিশ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পরেও দেখা যাচ্ছে তিনি সেরে ওঠেননি। প্রশ্ন উঠছে, এত দিন ধরে বাইরে থাকার মতোই চোট যদি হবে, তা হলে তাঁকে দেশে ফিরিয়ে বিকল্প স্পিনার আনা হল না কেন?

টেস্ট শুরুর আগে দেওয়া ফিটনেস টেস্ট পাশ করতে পারেননি অশ্বিন। সিডনিতে স্পিনাররা সুবিধে পেতে পারেন ভেবেই দলের এক নম্বর স্পিনারের জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিলেন কোহালিরা। বুধবার একপ্রস্ত ফিটনেস পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল অশ্বিনের। তখন তিনি পাশ করতে পারেননি। দেখা যায়, ম্যাচ ফিটনেসের কাছাকাছিও পৌঁছতে পারছেন না। ম্যাচ শুরুর প্রায় ঘণ্টা খানেক আগে এ দিন আবার ফিটনেস টেস্ট দেওয়ার জন্য ডাকা হয় তাঁকে। সিডনির প্রধান বাইশ গজের পাশে আরও কতগুলি উইকেট রয়েছে। সেখানেই বল করতে বলা হয় অশ্বিনকে। আর তাঁকে জরিপ করার জন্য উপস্থিত ছিলেন ফিজিয়ো প্যাট্রিক ফারহার্ট, হেড কোচ রবি শাস্ত্রী এবং বোলিং কোচ বি অরুণ। বাউন্ডারির বাইরে দাঁড়িয়েও পরিষ্কার দেখা যাচ্ছিল, এক-একটা করে বল করছেন অশ্বিন আর তার পরেই ফিজিয়োর সঙ্গে কথা বলছেন বোলিং কোচ। বেশ কয়েকটি বল করার পরে অশ্বিনকে দেখা যায় আলোচনায় যোগ দিতে। কোমরে এক বার হাত দিয়ে দাঁড়ান তিনি। তখনই দেখে মনে হতে থাকে, সম্ভবত পারবেন না। বোলিং করার সময়েও খুব স্বাভাবিক ছন্দে দেখা যাচ্ছিল না। হাবভাব দেখে বোঝাই যাচ্ছিল, তিনি ম্যাচ ফিট হতে পারেননি এখনও। এর পর শাস্ত্রী, অরুণ, ফিজিয়োকে আর এক প্রস্থ আলোচনা করতে দেখা যায়। সম্ভবত এর পরেই অধিনায়ককে জানিয়ে দেওয়া হয়, অশ্বিনের ফিটনেস টেস্টের ফল আশাব্যঞ্জক নয়।

ও দিকে, টিম হাডলেরও সময় হয়ে আসছে। প্রথম একাদশ চূড়ান্ত করতে হবে। অশ্বিনের ফিটনেস টেস্ট হওয়ার পরেই হাডল হয়। শাস্ত্রী ডেকে নেন টিমের সকলকে। তার পরেই বোলিং কোচ অরুণকে দেখা যায়, কুলদীপ যাদবকে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন সেই উইকেটের দিকে, যেখানে এত ক্ষণ ফিটনেস টেস্ট দিচ্ছিলেন অশ্বিন। ওই পিচের উপরেই শাস্ত্রী-অরুণ বোলিং প্র্যাক্টিস করাতে থাকেন কুলদীপকে। একটু পরে সেখানে যোগ দেন রবীন্দ্র জাডেজাও। তখনই পরিষ্কার হয়ে যায়, ভারত এই দুই স্পিনারকে নিয়েই সিডনিতে নামছে। ফিটনেস পরীক্ষায় ব্যর্থ অশ্বিনের খেলা হচ্ছে না।

এর কিছুক্ষণ পরেই কোহালিকে দেখা যায়, টিম লিস্ট হাতে নিয়ে টস করতে যাচ্ছেন। অশ্বিন তখন চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে। সামনে ক্যাচিং প্র্যাক্টিস চলছে। একটু দূরে জাডেজা আর কুলদীপ বোলিং প্র্যাক্টিস করছেন। কিন্তু তিনি একদমই নিষ্ক্রিয় অবস্থায় দাঁড়িয়ে। কথা বলে চলেছেন ফিজিয়ো এবং ট্রেনারের সঙ্গে। সেই দৃশ্য দেখে আরওই নিশ্চিত হয়ে যাওয়া গেল যে, কোহালি যে টিমলিস্ট নিয়ে যাচ্ছেন তাতে অশ্বিনের নাম থাকছে না। টস জেতেন কোহালি। এই নিয়ে সিরিজে তৃতীয় বার। তখন বারবার করে টিভিতে দেখানো হচ্ছে একটি তথ্য যে, টস জিতে আজ পর্যন্ত টেস্ট হারেননি কোহালি। টস জিতে প্রথম একাদশ জানাতেই সরকারি ভাবে সবাই জেনে যায়, অশ্বিন খেলছেন না। দুই স্পিনার জাডেজা-কুলদীপ।

ভারতীয় শিবিরে টেস্টের আগের দিন শোনা যাচ্ছিল যে, অশ্বিন যদি পুরো ফিট না-ও হতে পারেন, যদি আশি শতাংশ সুস্থতাও ফিরে পান, তা হলে তাঁকে খেলানোর ঝুঁকি নেওয়া হতে পারে। যে-হেতু সিডনিতে বল ঘোরার সম্ভাবনা থাকে এবং অস্ট্রেলিয়া দলে অনেক বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান রয়েছে। তা হলে কি সকালের ফিটনেস টেস্টে আশি শতাংশ সক্ষমতাও দেখাতে ব্যর্থ হলেন দলের এক নম্বর স্পিনার?

অস্ট্রেলিয়ায় এসে চারটি টেস্টের মধ্যে তিনটিতেই খেলতে পারলেন না অশ্বিন। এর আগে ইংল্যান্ডে সাউদাম্পটনে তাঁকে আধা-ফিট অবস্থায় খেলিয়ে ভুগতে হয়েছিল ভারতীয় দলকে। পিচে তৈরি হওয়া ক্ষতের কোনও ফায়দাই তিনি তুলতে পারেননি চোটের জন্য। অতীতের সেই ঘটনা থেকেও শিক্ষা নিয়ে থাকতে পারেন কোহালিরা। পাঁচ দিনের টেস্ট বলে আরও বেশি করে সতর্কতা নেওয়া দরকার। এমনিতেই এই সিরিজে নকশা পাল্টে চার বোলারে খেলছে ভারত। চার জনের মধ্যে এক জন বোলার সম্পূর্ণ সুস্থ না থাকা মানে বিরাট ঝুঁকি হয়ে যেতে পারে। জেফ থমসনের মতো কেউ কেউ বলেই দিয়েছেন, অশ্বিন যদি সম্পূর্ণ ফিট না থাকেন, তাঁকে খেলানোর দরকারই বা কী আছে? থমসনের মতে, জাডেজা যথেষ্ট ভাল মানের স্পিনার এবং অশ্বিনের অভাবে মেলবোর্নে ভাল বলও করেছেন। তা হলে ভারতের আর উদ্বেগের কী আছে?

এ দিকে, কোহালি ব্যাট করতে নামার সময় যে ফের তাঁকে ধিক্কার ধ্বনি শুনতে হল, তা নিয়ে ক্ষিপ্ত রিকি পন্টিং। মাঠে উপস্থিত সাড়ে তেত্রিশ হাজার দর্শকের মধ্যে অস্ট্রেলীয় সমর্থকদের একটা অংশ কোহালি ব্যাট করতে যাওয়ার সময় ধিক্কার ধ্বনি দিতে থাকে। পন্টিং যা নিয়ে বলেন, ‘‘এটা কী করছে ওরা! কোহালি এখানে এসে দারুণ ক্রিকেট খেলছে। ওর দলকে নেতৃত্ব দিয়ে জেতাচ্ছে। সেটাকে সম্মান জানানো উচিত। এ ভাবে ওকে অসম্মান করছে কেন? এটা খুবই লজ্জাজনক।’’ অস্ট্রেলিয়ার প্রায় সব প্রাক্তন ক্রিকেটার, যাঁরা এই সিরিজে ধারাভাষ্য দিচ্ছেন, প্রত্যেকেই এই ঘটনার নিন্দা করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE