Advertisement
E-Paper

কলকাতায় ২২ মিনিটে নাভিশ্বাস উঠেছিল, মুম্বইয়ে হাসিমুখে ৬১ মিনিট মাতিয়ে গেলেন মেসি, দাদা না পারলেও লিয়ো-দর্শন সচিনের

বিকেল ৫:৫০ মিনিটে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ঢোকেন লিয়োনেল মেসি। তিনি যখন মাঠ ছাড়েন তখন সন্ধ্যা ৬:৫১। এই ৬১ মিনিটে ওয়াংখেড়ে মাতল মেসির জাদুতে।

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:২৭
football

মঞ্চে সচিন তেন্ডুলকরের (বাঁ দিকে) সঙ্গে লিয়োনেল মেসি। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। ছবি: পিটিআই।

এই ছবিগুলোই তো দেখতে চেয়েছিল কলকাতা। এই ছবিগুলোই তো দেখতে চেয়েছিলেন যুবভারতী ভরিয়ে তোলা হাজার হাজার দর্শক। তাঁরা পাননি। পেল মুম্বই। পেল ওয়াংখেড়ে। যুবভারতীতে ২২ মিনিটেই নাভিশ্বাস উঠেছিল লিয়োনেল মেসির। অথচ ওয়াংখেড়েতে ৬১ মিনিট থাকলেন তিনি। হাসিমুখে মাতিয়ে দিলেন সকলকে। মেসিকে দর্শন করলেন মুম্বইবাসী। দর্শন করলেন সচিন তেন্ডুলকর, সুনীল ছেত্রীও। কলকাতায় মেসির সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎ না হলেও সচিন দেখা পেলেন মেসির।

ওয়াংখেড়েতে যাওয়ার আগে ব্রেবোর্ন স্টেডিয়ামে ‘ক্রিকেট ক্লাব অফ ইন্ডিয়া’য় গিয়েছিলেন মেসি। সেখানে ‘প্যাডল কাপ’-এ যোগ দেন মেসি। সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ় ও রদ্রিগো ডি’পল। সেখানে গিয়েছিলেন সস্ত্রীক হরভজন সিংহ, করিনা কপূর খানেরা। তাঁরা মেসির সঙ্গে দেখা করেন।

তত ক্ষণে ওয়াংখেড়ে ভরে গিয়েছে। দুপুর ২টো থেকে দর্শকেরা ঢুকতে শুরু করেছিলেন। মেসি তখনও এসে না পৌঁছোলেও তাঁদের বিনোদনের অভাব ছিল না। সঞ্চালক জানান, চারটি দলের মধ্যে একটি করে ম্যাচ হবে। প্রতিটি দলে সাত জন করে খেলছিলেন। সেখানে সুনীল ছেত্রী, আশুতোষ মেহতা, চিংলেনসানা সিংহ, রাহুল ভেকে, বালা দেবীর মতো ফুটবলারের পাশাপাশি ডিনো মোরিয়া, জিম সরবের মতো অভিনেতাও ছিলেন। মাঠের পাশে একটি ভিআইপি জ়োন করা হয়েছিল। সেখানে পুত্রকে নিয়ে বসেছিলেন অভিনেতা অজয় দেবগন।

ফুটবল খেলতে নেমে হেডে গোল করেন সুনীল। দর্শকেরা আনন্দে চিৎকার করে ওঠেন। বেশ হাড্ডাহাড্ডি খেলা চলছিল। ঘড়ির কাঁটায় ৫:৪২ মিনিটে মাঠে ঢোকেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীস। ছিলেন তাঁর স্ত্রী অমৃতাও। তার ৪ মিনিট পরেই মাঠে ঢোকেন সচিন। ঠিক ৫:৫০ মিনিটে ঢোকেন মেসি, সুয়ারেজ় ও ডি’পল।

মেসির নিরাপত্তারক্ষীরা সঙ্গে ছিলেন। ফোটোগ্রাফার, সঞ্চালকও ছিলেন। কিন্তু কেউ মেসিদের ঘাড়ের কাছে যাননি। একটা দূরত্ব রাখছিলেন। তার ফলে মেসিদের দেখতে পাচ্ছিলেন সকলে। যে সুযোগ যুবভারতীতে হয়নি। এখানে মেসিকে ঘিরে যে ভিড় তৈরি হয়েছিল, তা ওয়াংখেড়েতে ৬১ মিনিটের মধ্যে এক বারের জন্যও দেখা গেল না।

football

সুনীল ছেত্রীকে (বাঁ দিকে) নিজের সই করা জার্সি উপহার লিয়োনেল মেসির। ছবি: এক্স।

সুনীলদের সঙ্গে হাত মেলালেন মেসি। বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলারের সঙ্গে দেখা হল ভারতের সেরা ফুটবলারের। এক ফ্রেমে দুই ‘গোট’-কে দেখা গেল। সুনীলকে নিজের সই করা আর্জেন্টিনার জার্সিও দিলেন মেসি। দু’জনে পেনাল্টি শট নিলেন। গোলও করলেন। দলের সকলের সঙ্গে ছবি তুললেন তিন তারকা। তার পর একের পর এক শটে গ্যালারিতে ফুটবল পাঠানো শুরু করলেন মেসিরা। একটা সময় তো তাঁদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলছিল। কে বেশি দূরে বল পাঠাবেন, তার লড়াই চলছিল। তাতে অনেক সময়ে মেসিকেও হারিয়ে দিচ্ছিলেন ডি’পল। গোটা মাঠ ঘুরে ঘুরে এই কাজ করছিলেন তাঁরা। গ্যালারির একদম কাছে ছিলেন তিন ফুটবলার। সকলে মনের আনন্দে নিজের প্রিয় তারকাকে দেখলেন। এক বারও ভিড় তাঁদের বাধা হয়ে দাঁড়াল না।

মাঠে মনের আনন্দে ঘুরছিলেন মেসিরা। সবসময় একটা হাসি লেগেছিল মুখে। বোঝা যাচ্ছিল, কতটা নিশ্চিন্তে রয়েছেন মেসি, সুয়ারেজ়রা। যুবভারতীতে মেসিদের দেখে বোঝা যাচ্ছিল, বিরক্ত হচ্ছেন। সুয়ারেজ় ও ডি’পল তো ভিড়ে ধাক্কাও খান। কিন্তু ওয়াংখেড়ে দেখাল, কী ভাবে একটি সফল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যায়।

football

(বাঁ দিক থেকে) রদ্রিগো ডি’পল, লিয়োনেল মেসি ও লুইস সুয়ারেজ়। ছবি: পিটিআই।

‘প্রজেক্ট মহাদেব’ শুরু করেছে মহারাষ্ট্র সরকার। রাজ্যের ৩৫ জেলা থেকে ৩০ জন ছেলে ও ৩০ জন মেয়েকে বেছে নেওয়া হয়েছে। তাদের পাঁচ বছরের স্কলারশিপে ফুটবল শেখানো হবে। সেই প্রজেক্টের উদ্বোধন হল মেসির হাতে। তার আগে বাচ্চাদের সঙ্গে ‘পাসিং দ্য বল’ খেললেন মেসিরা। মাঝে মাঝে ডি’পলকে দেখে মনে হচ্ছিল, নিজের সতীর্থদের সঙ্গে খেলছেন। এত মজা করছিলেন তাঁরা।

football

বল চাইছেন মেসি। একের পর এক শটে ফুটবল গ্যালারিতে পাঠালেন লিয়ো। ছবি: পিটিআই।

যুবভারতীতে মেসির সঙ্গে সারা ক্ষণ ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। ছিলেন অনেক খ্যাতনামী। কিন্তু ওয়াংখেড়েতে কোনও রাজনৈতিক নেতাকে দেখা গেল না। এমনকি, কোনও মন্ত্রীও ছিলেন না। সস্ত্রীক মুখ্যমন্ত্রী ফডণবীসও দর্শকাসনে বসেছিলেন। সচিনও তাই। অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও গ্যালারিতেই ছিলেন। কেউ মাঠে নামেননি। যাঁরা মাঠে ছিলেন, তাঁরা কেউ মেসির সঙ্গে নিজস্বী তোলার চেষ্টা করেননি। ফলে মেসিরও কোনও সমস্যা হয়নি।

শেষে একটি সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছিল। মাঠের মাঝে তৈরি মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী, তাঁর স্ত্রী, ভারতীয় ফুটবল সংস্থার প্রাক্তন সভাপতি প্রফুল্ল পটেল, সচিন, অজয় দেবগনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হল মেসি, সুয়ারেজ়, ডি’পলের। তিন জনকে সংবর্ধনা দেওয়া হল। ছিলেন ‘প্রজেক্ট মহাদেব’-এর মুখ টাইগার শ্রফও। মেসির হাতে সই করা নিজের জার্সি তুলে দিলেন সচিন। মেসি পাল্টা তাঁর হাতে তুলে দিলেন ২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের বল।

football

(বাঁ দিক থেকে) লুইস সুয়ারেজ়, লিয়োনেল মেসি, সচিন তেন্ডুলকর ও দেবেন্দ্র ফডণবীস। মেসির হাতে নিজের জার্সি তুলে দিচ্ছেন সচিন। ছবি: এক্স।

মেসিকে সংবর্ধনা দিতে গিয়ে সচিন বললেন, “দুর্দান্ত সময় কাটালাম। মুম্বই স্বপ্নের নগরী। এই মাঠে অনেক স্বপ্ন সত্যি হতে দেখেছি। আরও এক বার তা দেখলাম। মুম্বই তিন তারকাকে যে ভালবাসা দিয়েছে তার জন্য সকলকে ধন্যবাদ। মেসির খেলা নিয়ে বলার কিছু নেই। একটা কথাই বলব। খেলার পাশাপাশি ও দারুণ একজন মানুষ।” শেষে ধন্যবাদ দিলেন ফডণবীস।

৬১ মিনিট ধরে সুষ্ঠুভাবে একটা অনুষ্ঠান হল। এক বারের জন্যও তাল কাটল না। সঞ্চালক সারা ক্ষণ স্টেডিয়ামের দর্শকদের তাতিয়ে গেলেন। দর্শকেরাও আনন্দ করলেন। যুবভারতীতে মেসির পিছনে সুয়ারেজ় ও ডি’পলকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল না, তাঁরাও তারকা। সেটা ওয়াংখেড়েতে দেখা গেল। যত বার মেসির নামে জয়ধ্বনি উঠল, তত বার সুয়ারেজ় ও ডি’পলের নামেও চিৎকার হল। মেসির সমান সম্মান পেলেন দু’জনে। সব শেষে মেসির হাতে তুলে দেওয়া হয় ভারতের জাতীয় পতাকা। সুয়ারেজ়ের দেশ উরুগুয়ের জাতীয় পতাকা হাতে নেন আর্জেন্টিনার ডি’পল। আর আর্জেন্টিনার জাতীয় পতাকা ছিল সুয়ারেজ়ের হাতে। তিন দেশের মেলবন্ধন হয় ওয়াংখেড়েতে।

Lionel Messi luis suarez
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy