রেস্তরাঁর শৌচাগারে লুকিয়েছিলেন! সিডনিকাণ্ডে কোনওমতে প্রাণে বেঁচেছেন অ্যাশেজ়ে ধারাভাষ্য দিতে যাওয়া প্রাক্তন ইংরেজ অধিনায়ক

অ্যাশেজ় সিরিজ়ে ধারাভাষ্যকার হিসাবে অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন মাইকেল ভন। ১৭ ডিসেম্বর থেকে অ্যাডিলেডে শুরু তৃতীয় টেস্ট। তার আগে সিডনির বন্ডি সমুদ্রসৈকতে সময় কাটাতে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক। আর সেটা করতে গিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। সমুদ্রসৈকতে ইহুদিদের হানুকা উৎসব চলছিল। ভিড়ে ঠাসা সেই সৈকতে ১০ মিনিট ধরে নির্বিচারে গুলি চালান দুই বন্দুকধারী। তাতে মৃত্যু হয়েছে ১৫ জনের। সেই সময় সেখানেই ছিলেন ভন। কোনওমতে রক্ষা পেয়েছেন তিনি।

যে সময় এই হত্যালীলা চলেছে, তখন সৈকতের পাশেই একটি রেস্তরাঁয় ছিলেন ভন। গুলির শব্দ শুনেই দৌড়ে চলে যান রেস্তরাঁর শৌচাগারে। একটি সাক্ষাৎকারে ভন বলেন, “বাইরে পর পর গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। সময় নষ্ট না করে শৌচাগারে ছুটি। ভিতরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিই। আমার সঙ্গে আরও অনেকে ছিল। যত ক্ষণ গুলির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল, বার হইনি।”

পরে নিরাপত্তারক্ষীরা ভনদের উদ্ধার করেন। দ্রুত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য তাঁদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভন। পাশাপাশি সিডনির ফলবিক্রেতা আহমেদ আল আহমেদেকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন ভন। নিজের জীবনের তোয়াক্কা না করে বন্দুকধারী আততায়ীকে একা সামলেছিলেন তিনি। আপাতত হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আহমেদ।

অস্ট্রেলিয়ার পুলিশ সোমবার সকালে জানিয়েছে, বন্দুকবাজ দু’জন সম্পর্কে পিতা ও পুত্র। বন্ডি সৈকতের ঘটনাকে সন্ত্রাসবাদী হামলার তকমা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া সরকার। পুলিশ জানিয়েছে, বন্দুকবাজ পিতা সাজিদ আক্রম (৫০)। তাঁর নামে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল। তাঁকে সঙ্গ দেন তাঁর ২৪ বছরের পুত্র নবিদ। সৈকতেই পুলিশের গুলিতে প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে। হামলাকারী পুত্র গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁকে পুলিশি প্রহরায় রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, আরও ৪০ জন জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। তাঁদের মধ্যে দু’জন পুলিশ আধিকারিকও রয়েছেন। চোট গুরুতর হলেও তাঁদের অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।

পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার বন্ডি সৈকতের উৎসবে অন্তত ১০০০ জন শামিল হয়েছিলেন। সৈকতের একটি অংশে উৎসব চলছিল। ফলে সেই জায়গাটি ভিড়ে ঠাসা ছিল। আচমকা সেখানে বন্দুক নিয়ে ঢুকে পড়েন দু’জন আততায়ী। নির্বিচারে গুলি চালান। যাঁকে সামনে পেয়েছেন, মেরেছেন তাঁরা। মহিলা, শিশু বা বয়স্কদেরও রেয়াত করা হয়নি। নিহত ১৫ জনের মধ্যে ১০ থেকে ৮৭ বছর বয়সিরা রয়েছেন।

সমাজমাধ্যমে হামলার সময়ের একটি ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা গিয়েছে, এক যুবক খালি হাতে এগিয়ে বন্দুকবাজকে পিছন দিক থেকে জাপটে ধরেন এবং তাঁর হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নেন। তার পরেই তাঁকে ধরা সম্ভব হয়েছে। এই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দাবি, ওই যুবকের নাম আহমেদ আল আহমেদ। তিনি বন্ডি সৈকতে ফল বিক্রি করেন। ঘটনায় তিনিও আহত হয়েছেন এবং হাসপাতালে রয়েছেন।

পুলিশ জানিয়েছে, বন্ডি সৈকতের কাছে দু’টি বোমা সক্রিয় অবস্থায় রাখা ছিল। সেগুলিকে চিহ্নিত করে পরে নিষ্ক্রিয় করা হয়। জানা গিয়েছে, নিহত বন্দুকবাজ প্রৌঢ়ের কাছে ছ’টি বন্দুক ছিল। সেগুলিই হামলায় ব্যবহার করা হয়েছিল। কী ভাবে তিনি তার লাইসেন্স পেলেন, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আগে থেকে পুলিশের খাতায় এই পিতা-পুত্রের নাম ছিল কি না, তা-ও স্পষ্ট করেনি পুলিশ।