যুবভারতী কার, লড়াই দুই গুরুর

ফিফার ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনার জেরে ক্লান্তি ও নানা সমস্যায় পড়লেও ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে অদ্ভুত রকম শান্ত বিশ্ব ফুটবলের দুই পাওয়ার মেশিন—ব্রাজিল এবং ইংল্যান্ড।

Advertisement

রতন চক্রবর্তী

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৭ ০৪:২৭
Share:

মাত্র আটচল্লিশ ঘন্টার নোটিশে বদলে গেছে শহর, স্টেডিয়াম, আবহাওয়া, মাঠ। তাও আবার অনূর্ধ্ব ১৭ বিশ্বকাপের হাইভোল্টেজ সেমিফাইনাল!

Advertisement

ফিফার ইতিহাসে নজিরবিহীন এই ঘটনার জেরে ক্লান্তি ও নানা সমস্যায় পড়লেও ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে অদ্ভুত রকম শান্ত বিশ্ব ফুটবলের দুই পাওয়ার মেশিন—ব্রাজিল এবং ইংল্যান্ড।

প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট দেরিতে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে যেমন পাওলিনহো, লিঙ্কনদের কোচ কার্লোস আমাদেউ বলে দিয়েছেন, ‘‘এখানে ফিরতে পেরে আমরা খুশি। ব্রাজিলের পর কলকাতায় মনে হয় একমাত্র জায়গা যেখানে এত সমর্থক আমাদের।’’ আর ইংল্যান্ড কোচ স্টিভ কুপারের মন্তব্য, ‘‘কলকাতায় চারটে ম্যাচ খেলে গিয়েছি। সব চেনা হয়ে গিয়েছে। মাঠ ভর্তি করে দর্শকরা এসেছেন আমাদের সমর্থন করতে। জানি কাল ব্রাজিলের সমর্থক বেশি থাকবে মাঠে, কিন্তু আমাদেরও কিছু থাকবে। সেটাও তো অভিজ্ঞতা।’’

Advertisement

আরও পড়ুন: সাম্বা অস্ত্রকে ভোঁতা করতে বিশেষ ছক তৈরি

ফিফা ঝুঁকি নিয়ে এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অসম্ভবকে সম্ভব করে হঠাৎ আসা মহাযজ্ঞ উতরে দিতে চল্লিশ ঘণ্টা সময়ও পাওয়া যায়নি। নানা সমস্যা রয়েছে এখনও। তা সত্ত্বেও কোনও ক্ষোভ নেই কোচেদের মুখে।

মঙ্গলবার সকালে গুয়াহাটি পৌঁছে গভীর রাতে ব্রাজিল ফিরে এসেছে ফের কলকাতায়। পাওলিনহো, লিঙ্কন ডস স্যান্টোসদের আসা-যাওয়ার ধকল ও ক্লান্তির পাশাপাশি অনুশীলনও হয়নি সোমবার। হোটেলের সুইমিং পুলে বা মাসাজ পার্লারে ক্লান্তি দূর করার চেষ্টা করেছেন জার্মানিকে হারিয়ে শহরের ঘরে ঢুকে পড়া সাম্বার দেশের ছাত্র ফুটবলররা। ইংল্যান্ড আবার গুয়াহাটিতে একদিন অনুশীলন করেছে। মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে ফেলেছিল খেলার জন্য। তাদেরও গভীর রাতের চাটার্ড ফ্লাইটে ফিরতে হয়েছে কলকাতায়। এত হ্যাপা সত্ত্বেও ম্যাচ জেতার জন্য মরিয়া তাঁরা। দেখে অবাক লাগে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে, কলকাতা ডার্বি বারাসাত থেকে কল্যাণীতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া নিয়ে দুই প্রধানের কর্তাদের নাটক, বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতির বাজার গরম করার ছবিগুলো। মনে হয়, এসবের জন্যই এ দেশের ফুটবল সাবালক হল না কোনওদিন। ব্রাজিল-ইংল্যান্ডকে দেখে যদি শিক্ষা হয় তা হলে মঙ্গল!

এক রবিবার থেকে পরের শনিবার—মাত্র ছয় দিনে মধ্যে বিশ্বকাপ ফুটবলের চার-চারটে সেরা ম্যাচ। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল, তৃতীয় স্থান নির্ধারণের ম্যাচ এবং ফাইনাল। না তাতেও বদ হজম হয়নি শহরের। টিকিটের হাহাকার তুঙ্গে। শুধু অন লাইনের টিকিটের জন্য পাঁচ লাখ লোকের লাইন। সোমবার বেশি রাতে দুই টিমের বিশেষ বিমানেই গুয়াহাটি থেকে টিকিটের প্রধান অংশ এনে রাতভর ছেপে তা দিতে শুরু করেছে ফিফা, মঙ্গলবার সকাল থেকেই। দিল্লি, মুম্বই থেকেও টিকিট আসছে। একদিকে চলছে ছাপার কাজ, অন্য দিকে বন্টন। টিকিটের দাম একই হওয়ায় সুবিধা হয়েছে দ্রুত টিকিট ছাপতে। সাধারণের জন্য আর কোনও টিকিট কাউন্টারে বিক্রি হবে না, জানিয়েছে ফিফা। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দু’দিন সারারাত ধরে চলবে স্টেডিয়াম সাফ-সুতরোর কাজ। সমস্যা নেই কোথাও। এবং কী আশ্চর্য, দুই টিমের কোচও রীতিমতো যুদ্ধংদেহী মেজাজে বলে দিয়েছেন, ‘‘কোনও সমস্যা নেই আমাদের, আমরা তৈরি।’’

ইংল্যান্ড কোচ তবুও তাদের অনুশীলনে কিছু রাখ ঢাক রেখেছেন। এই টুনার্মেন্টের ইতিহাসে প্রথম বার সেমিফাইনালে উঠেছে রিয়ান ব্রিউস্টার, ফিল ফডেনরা। সামনে ব্রাজিল, একটু সতর্ক তো হবেনই। পনেরো মিনিটের বেশি কাউকে তাই দেখতে দেওয়া হয়নি কুপারের টিমকে। কিন্তু ব্রাজিল কোচ তো হাট করে খুলে দিয়েছেন অনুশীলনের দরজা। হাসতে হাসতে কার্লোস বলে গেলেন, ‘‘আমাদের সমর্থক কলকাতা সাম্বার দেশের অনুশীলনটাও দেখুক।’’

চুনী গোস্বামী থেকে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, গৌতম সরকার থেকে সুব্রত পাল—সবাই দু’ভাগ হয়ে গিয়েছেন ম্যাচের ফল নিয়ে। তবে পাওলিনহোরা হট ফেভারিট এটা যেমন বলছেন না কেউই, তেমনই ইংল্যান্ড জিতবেই এটা জোর করে বলছেন না ওঁরা। কথা বলে মনে হল, গত রবিবারের ব্রাজিল-জার্মানির ম্যাচের চেয়েও আজ বুধবারের ম্যাচ উত্তেজক হবে মনে করছেন সবাই। এর কারণ তিনটে। এক) দুটো দলেই আক্রমণভাগ প্রচন্ড শক্তিশালী। ইংল্যান্ড যেমন পাঁচ ম্যাচে ১৫ গোল করেছে, তেমনই ব্রাজিল করেছে ১১। দুই) বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপে দুটি টিমের মধ্যে ভয়ঙ্কর আকচা আকচি। ইংল্যান্ড আবার সদ্য অনূর্ধ্ব ২০ বিশ্বকাপ জিতেছে। ব্রিউস্টারদের কোচ যাঁকে বলছেন, ‘অনুপ্রেরণা’। তিন) দুটো টিমই চাইছে মাঝমাঠ দল করার জন্য, সেটা স্বীকার করছেন দু’দলের কোচও।

বুধ সন্ধ্যার ম্যাচে তাই বাজি ধরতে গেলে ঠকে যেতে হতে পারে। কলকাতার মুড অন্য। হলুদ-দেশে ডুব দিয়ে ফেলা কলকাতা অবশ্য পাওলিনহোদের জন্যই চেঁচাবে আজ। শহরের বহু রাস্তায় যে মঙ্গলবার থেকেই উড়তে শুরু করেছে পেলে-রোনাল্ডোদের দেশের পতাকা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন