বিরাট গর্জন। এজবাস্টনে। ছবি: রয়টার্স।
টেস্ট ক্রিকেটে ২২। একদিনের ক্রিকেটে ৩৫। দুই ফরম্যাট মিলিয়ে ৫৭ শতরান। বয়স তিরিশ ছোঁয়ার আগেই। কোথায় থামবেন বিরাট কোহালি? বছর পাঁচেক পরে কোথায় পৌঁছবেন ভারত অধিনায়ক? সচিন তেন্ডুলকরের শততম শতরানের রেকর্ড কি ভাঙা হবে আর এক ভারতীয়েরই ব্যাটে?
ছোটবেলার কোচ রাজকুমার শর্মার অন্তত কোনও দ্বিধা নেই। নয়াদিল্লি থেকে বুধবার কোচিংয়ের ফাঁকে মোবাইলে আনন্দবাজার ডিজিটালকে বললেন, “আমি চাইব, কোহালি যেন তা টপকে যায়। যেন শততম শতরান করতে পারে। আর এখন যে ভাবে খেলছে, তাতে পাঁচ বছর পর ওকে টপ অফ দ্য ওয়ার্ল্ডই দেখতে চাইছি।” আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের টেস্ট ও একদিনের র্যাঙ্কিংয়ে সবার ওপরেই তিনি। এজবাস্টন টেস্টে যে ভাবে ব্যাট করেছেন, তাতে ক্রিকেটমহলে শুধুই অপার মুগ্ধতা। প্রশংসার নিত্যনতুন বিশেষণ যোগ হচ্ছে।
তবে রেকর্ড যে ছাত্রের ফোকাস নয়, সঙ্গে সঙ্গে মনে করিয়ে দিচ্ছেন তিনি। বললেন, “ক্রিকেট দলগত খেলা। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সই শেষ কথা নয়। আর কোহালি রেকর্ডের জন্য খেলে না। নিজের কথা ভাবে না। দল জিতল কি না, সেটাই আসল।” ঘটনা হল, এজবাস্টনে দুরন্ত শতরানের পরও আসেনি জয়। প্রথম ইনিংসে দেড়শো ছুঁইছুঁই রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে অর্ধশতরানও ঢাকতে পারেনি বাকিদের ব্যর্থতা।
পুরনো সেই দিনের কথা। ছাত্র বিরাট কোহালির সঙ্গে কোচ রাজকুমার শর্মা। ফাইল ছবি।
তবে ক্রিজের বাইরে দাঁড়ানোর টেকনিক আলোড়ন তুলেছে বিশ্বক্রিকেটে। সুইংকে মোকাবিলা করার এই অভিনব অস্ত্র ব্যাটসম্যান কুলের কাছে নতুন দিশা হয়ে উঠছে। কোচের কথায়, “কোহালি কিন্তু এই ক্রিজের দু’ফুট বাইরে স্টান্স নেওয়ার অনুশীলন আগে করেনি। এখন জেমস অ্যান্ডারসন, স্টুয়ার্ট ব্রড, বেন স্টোকস ও অন্যদের সুইং সামলানোর জন্য এটা করছে। এগিয়ে থাকার ফলে সুইংটাকে আগে খেলছে।”
চার বছর আগে ইংল্যান্ডের সুইংই ঘাতক হয়ে উঠেছিল। দশ টেস্ট ইনিংসে মোটে ১৩৪ রান, ১৩.৪০ গড় কেরিয়ারে কালো দাগ ফেলেছিল। এ বারের সিরিজ তাই ছিল ব্যাটসম্যান কোহালির চূড়ান্ত পরীক্ষা। বিশ্বের সর্বত্র রান করলেও ইংল্যান্ডে কেমন করেন, দেখার অপেক্ষায় ছিলেন প্রাক্তনরাও। বলা হচ্ছিল, এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে তাঁর ব্যাটিং নিয়ে কোথাও ক্ষীণ একটা সংশয় থেকেই যেত। আর এজবাস্টন টেস্ট সেই কারণেই কোহালির কেরিয়ারে যুগান্তকারী। শতরানের পরই রাজকুমার শর্মার উচ্ছ্বসিত টুইট বুঝিয়ে দিয়েছিল, ছাত্রের অগ্নিপরীক্ষা কতটা তাঁরও পরীক্ষা হয়ে উঠেছিল।
আমিই সেরা, কোহালি কি এটাই বোঝাতে চাইছেন? ছবি: রয়টার্স।
বিশেষজ্ঞদের অনেকে অবশ্য মনে করছেন, টেকনিকের নয়া ধাঁচে ফ্রন্টফুটে খেলার প্রবণতা আগে থেকেই বুঝিয়ে দিচ্ছেন কোহালি। ফলে, বোলারের সুবিধা হচ্ছে। আবার ব্যাকফুটে শট নেওয়ার মানসিকতাও থাকছে না। রাজকুমার শর্মা যা একেবারেই মানছেন না। তাঁর যুক্তি, “কোহালি ঠিকই অ্যাডজাস্ট করছে। ব্যাকফুটে ঠিকঠাক খেলছে। বরং বেশি সময় পাচ্ছে। আর তা তো এজবাস্টনের দুই ইনিংসে বোঝাও গিয়েছে।”
গত অর্ধশতাব্দীর ভারতীয় ক্রিকেটে ব্যাটসম্যানশিপের দুই স্তম্ভ থেকেছেন দুই মুম্বইকর সুনীল গাওস্কর ও সচিন তেন্ডুলকর। গ্রেটদের এই তালিকায় দ্রুত উঠে এসেছেন কোহালিও। গর্বিত কোচ তুলনা চাইছেন না। বললেন, “গাওস্করের আমি বিশাল ভক্ত ছিলাম। ওঁর টেকনিক ছিল জমাট। বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। সচিনও নিজের সময়ে সেরা। পাশাপাশি, প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক। শাসন করত বোলারদের। কোহালিও দাপটে ব্যাট করে। তিন জনেই সেরা।” কিন্তু বোলারের পক্ষে কার উইকেট নেওয়া সবচেয়ে কঠিন? এ বার জমাট রক্ষণ রাজুকমারেরই। তুলনা করতে চাইছেন না কিছুতেই। হেসে বললেন, “এই বিতর্কে আর ঢুকতে চাইছি না। যা বোঝার বুঝে নিন।”
বোঝা গেল, গুরু সাবধানী থাকতে চাইছেন। তুলনায় ছাত্রকে ইংল্যান্ডে অনেক বেশি আগ্রাসী দেখাচ্ছে!
আরও পড়ুন: অনুষ্কা কবে থেকে ক্রিকেটার হলেন, তোপ সোশ্যাল মিডিয়ায়
আরও পড়ুন: অলিম্পিকে নিরাপত্তা: সব মুখ ধরে রাখবে টোকিও