আবার লাল-হলুদে মর্গ্যান-রাজ। মঙ্গলবার।
ট্রেভর জেমস মর্গ্যান প্র্যাকটিস শুরু করা মাত্র ইস্টবেঙ্গলে ফিরে এল ‘ক্লোজড ডোর’ অনুশীলন স্ট্র্যাটেজি।
আজ বুধবার থেকেই সেই নিয়ম জারি হয়ে যাচ্ছে। যা বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের কোচিং আমলে দেখা যেত না লাল-হলুদে। মর্গ্যানের প্র্যাকটিসের প্রথম পনেরো মিনিট সাংবাদিক, ফটোগ্রাফার, টিভি ক্রুরা মাঠে থাকার অনুমতি পাবেন। ঠিক যেমন হত তিন বছর আগেও মর্গ্যান জমানায়।
সোমবার গভীর রাতে শহরে পৌঁছন ব্রিটিশ কোচ। তা সত্ত্বেও মঙ্গলবার সকালেই হাওড়া স্টেডিয়ামে ইস্টবেঙ্গল প্র্যাকটিসে যথাসময় পৌঁছে যান মর্গ্যান। জার্সি পরে র্যান্টিদের নিয়ে নেমে পড়েন অনুশীলনে। আগের রাতেই অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছেন। কিন্তু জেট ল্যাগের কোনও রেশ দেখা গেল না ৫৯ বছর বয়সি কোচের মধ্যে। বরং প্রথম দিনের অনুশীলনে চনমনে মর্গ্যানের বাঁশির বদলে মুখে সিটি। বেশির ভাগ ওয়ান টাচ, টু টাচ প্র্যাকটিস। কুল ডাউনের জন্য বিশেষ ধরনের ট্রেনিং— এ সব আবার ফিরে এল লাল-হলুদে। পরে মর্গ্যান বললেন, ‘‘আই লিগ আর আইএসএলের ক্লাবে কোচ থাকার সুবাদে এই ইস্টবেঙ্গল টিমের নব্বই শতাংশ ফুটবলারকে মোটামুটি চিনি। তবে তিন-চার দিন একটু দেখে নিতে চাই সবাইকে।’’
ইস্টবেঙ্গলে তাঁর দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে দি লেও কাগজে-কলমে এখনও সই হয়নি মর্গ্যানের। বুধবার বিকেলে লাল-হলুদ তাঁবুতে এসে চুক্তিপত্রে সই করবেন বলে খবর। পুরনো ক্লাব, অনেক ফুটবলারই চেনা। তবুও এ বারের চ্যালেঞ্জ কি আগের বারের তুলনায় কঠিন? প্রশ্ন শুনে সেই পরিচিত মজার মুখটা করে মর্গ্যান বললেন, ‘‘আই লিগ তো শেষ হয়ে গিয়েছে। শুধু ফেড কাপই বাকি। হাতে যা সময় আছে তার মধ্যে তৈরি হতে হবে। এটা আবার নক আউট টুর্নামেন্ট। তবে ফেড কাপ জিততেই চাইব।’’
মর্গ্যান দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার পরে গত তিন বছরে যত বার কোচ বদল হয়েছে ইস্টবেঙ্গলে, প্রতিবারই তাঁর নাম উঠে এসেছে ক্লাব কর্তাদের আলোচনায়। আবার মিলিয়েও গিয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের বেশ কিছু কর্তা বরাবরই ব্রিটিশ কোচকে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরব ছিলেন। এমনকী এ মরসুমেই প্রথমে মর্গ্যানকে আনতে চেয়েছিলেন ফুটবল সচিব সহ বেশ কিছু লাল-হলুদ কর্তা। শুরুতে না হলেও সেই ইচ্ছে কার্যকর হল মরসুমের শেষের দিকে। এ সব কিছুই অজানা নয় মেহতাবদের প্রিয় ব্রিটিশ কোচের। যিনি এ দিন বললেন, ‘‘কেন আমাকে কিছু কর্তা অপছন্দ করেন জানি না। আমার কারও সঙ্গে ব্যক্তিগত সংঘাত নেই। ইস্টবেঙ্গলকে সাফল্য এনে দেওয়াই আমার একমাত্র টার্গেট। সেই জায়গায় অবশ্য কোনও কিছুর সঙ্গে আপস করতে রাজি নই আমি।’’
শুক্রবার লাজং এফসি ম্যাচ খেলতে শিলং উড়ে যাবে ইস্টবেঙ্গল। টিমের সঙ্গে যাচ্ছেন মর্গ্যানও। ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছেন র্যান্টিদের ফর্ম সেটাই লাজং ম্যাচে পরখ করতে চান নতুন অবতারে পুরনো লাল-হলুদ কোচ। তার পরেই ফেড কাপের আসল প্রস্তুতি শুরু করবেন বলে জানাচ্ছেন মর্গ্যান। ‘‘আগে লাজংকে হারাতে হবে। তার পর ফেড কাপের প্রস্তুতি শুরু করব। আই লিগে রানার্স হওয়ার সুযোগ আছে এখনও ইস্টবেঙ্গলের। তবে তার জন্য অন্য টিমের ম্যাচের রেজাল্টের উপর নির্ভর করতে হবে। এমনিতে ফুটবলারদের ফিটনেস ঠিক জায়গায় আছে বলেই তো এ দিনের প্র্যাকটিসে মনে হল,’’ বললেন তিনি।
বিশ্বজিতের পদত্যাগের পর লাল-হলুদ ড্রেসিংরুমে যে গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়েছিল, সেটা বদলানোর চ্যালেঞ্জ রয়েছে অবশ্য মর্গ্যানের সামনে। তবে মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা আগেই টিমের পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেওয়া র্যান্টিকে এ দিন প্র্যাকটিসে দেখা গেল হাসতে। কোচকে নিজের গাড়িতে পাশে বসিয়ে ফিরলেন টিমের সেরা তারকা ফুটবলার। মর্গ্যানের প্রিয় ছাত্রদের অন্যতম মেহতাব আবার বললেন, ‘ওঁর ম্যান ম্যানেজমেন্ট খুব ভাল।’’ আর ডং বলছেন, ‘‘মর্গ্যান আসার আগে ওঁর সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। প্রথম দিন প্র্যাকটিস করেই মজা পেলাম।’’ মর্গ্যানের কোচিংয়ে খেলা আর এক ফুটবলার অর্ণব মণ্ডলের গলাতেও উচ্ছ্বাস। ‘‘মনেই হল না মর্গ্যান স্যার এত দিন আমাদের সঙ্গে ছিলেন না।’’
প্রথম দিনই ফুটবলাররা মর্গ্যানে মজে গেলেও বার্নার্ড মেন্ডির চোট নিয়ে চিন্তায় স্বয়ং ব্রিটিশ কোচ। এ দিন প্র্যাকটিসের পর তিনি ফরাসি ডিফেন্ডারের সঙ্গে কথা বলেন। পরে বললেন, ‘‘আশা করছি ফেড কাপের আগে বার্নার্ড ফিট হয়ে যাবে।’’
ছবি: উৎপল সপকার