সেমিফাইনালে উঠে উচ্ছ্বসিত কলম্বিয়া। ছবি: এপি।
কলম্বিয়া ০ (৪)
পেরু ০ (২)
শনিবার সকালে নিউজার্সির মেটলাইফ স্টেডিয়াম জুড়ে ছিল কলম্বিয়া সমর্থকদের দাপাদাপি। তার মধ্যে থেকেই হঠাৎ এক তরুনীকে দেখা গেল পোস্টার হাতে নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন হামেস রডরিগেজের। তাতে ইংরেজি হরফে বড় বড় করে লেখা, “রডরিগেজ উইল ইউ ম্যারি মি?” টেলিভিশনের ক্যামেরায় ওই দৃশ্য ধরা পড়তেই ক্যামেরা প্যান করে চলে গেল রডরিগেজের মুখে। তখন গোলের জন্য ছটফট করছেন কলম্বিয়া অধিনায়ক।
শেষ বিশ্বকাপে ব্রাজিলের কাছে হেরে ছিটকে যাওয়ার পর রডরিগেজের সেই কান্না মনে পরে গেল। হাপুস নয়নে কাঁদছিলেন। তাঁকে সান্তনা দিতে ছুটে এসেছিলেন ব্রাজিল ফুটবলাররাও। সে দিনের রডরিগেজ আর এ দিনের রডরিগেজের মধ্যে অনেক পার্থক্য। একটা বিশ্বকাপ হঠাৎই বড় করে দিয়েছে তাঁকে। এখন তিনি দেশের অধিনায়ক। কিন্তু হার যে তাঁকে এখনও যন্ত্রণা দেয়। সেই কষ্টটা অবশ্য এ বার পেতে হয়নি তাঁকে। টাইব্রেকারে পেরুকে ৪-২ গোলে হারিয়ে কোপা আমেরিকার সেমিফাইনালে চলে গিয়েছে কলম্বিয়া। পেনাল্টি মিস করে তখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন ক্রিস্টিয়ান আলবার্তো কুয়েভা। বদলে যাওয়া চরিত্র। প্রেক্ষাপট সেই একই। হার আর টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে যাওয়া।
পুরো ম্যাচে একাধিক গোলের সুযোগ তৈরি করেও গোলের মুখ খুলতে পারেনি কোনও দলই। শেষ বেলায় অবশ্য পোস্টের নীচে বাজিমাত কলম্বিয়ার গোলকিপার ওসপিনার। ম্যাচর শুরুর কয়েক মিনিটের মধ্যে পেরুর একটা সুযোগ ছাড়া পুরোটাই ছিল কলম্বিয়ার। কখনও সেই চেষ্টা ক্রসপিসে লেগে ফিরল তো কখনও পোস্টে। যার ফল নির্ধারিত সময়ের ম্যাচ শেষ হল গোলশূন্য ভাবে। এখানে কোনও এক্সট্রা টাইম নেই। তাই সরাসরি টাই ব্রেকার।
টাইব্রেকারে গোল করেই শুরু করেছিলেন হামেস রডরিগেজ। পেনাল্টি বাঁচিয়ে তা শেষ করলেন ওসপিনা।
পেরুর হয়ে প্রথম শট নিজের ছন্দেই গোলে পাঠিয়েছিলেন রাউল মারিও রুইদিয়াজ। কলম্বিয়ার হয়ে দ্বিতীয় গোল জুয়ান গুইলেরমোর। পেরুর হয়ে ২-২ করেন রেনাতো তাপিয়া। দায়রো মরিসিও কলম্বিয়ার হয়ে ৩-২ করার পর গোলের নীচে প্রাচীর তুলে মিগুয়েল অ্যাঞ্জেলের শট বাঁচিয়ে দেন ওসপিনা। উৎসবের শুরু তখন থেকেই। সেবাস্টিয়ান পেরেজ ৪-২ করতে যেন আত্মবিশ্বাসটাই হারিয়ে গেল পেরুর। ক্রিস্টিয়ান অ্যালবার্তো কুয়েভার শট বাঁচানোর চেষ্টাও করতে হল না ওসপিনাকে। দূর্বল পেনাল্টি কিক বাইরে যেতেই কলম্বিয়ান বিস্ফোরণ ঘটল গ্যালারিতে। যেন হলুদ ঝড়।
যদিও চেনা হলুদ জার্সিতে এ দিন ছিল না দল। কিন্তু গ্যালারি ছিল হলুদ। প্রায় ৮০ হাজার সমর্থক এ দিন এসেছিলেন দেশের হয়ে গলা ফাটাতে। ম্যাচ শেষে অবশ্য রডরিগেজকে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া সেই তরুণীকে আর দেখা গেল না পোস্টার হাতে। জয়ের উল্লাসে তিনিও মিশে গিয়েছেন হলুদ ঝড়ে। ২০০৪ এর পর আবার কোপার সেমিফাইনালে কলম্বিয়া। মেক্সিকো চিলি ম্যাচে যে জিতবে তার সঙ্গে সেমিফাইনালে দেখা হবে রডরিগেজদের। কোপার মঞ্চ থেকে নতুন করে স্বপ্ন দেখার শুরু কলম্বিয়ার।