আই লিগে বিদেশি বাড়ায় বিতর্ক উঠল

খাতায় কলমে দেশের এক নম্বর লিগে বিদেশি ফুটবলার বাড়ানোর খবর পাওয়ার পর শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। কারও মত এটা ভারতীয় ফুটবলের পক্ষে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৭ ০৪:০৮
Share:

নজরে: বিদেশির সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্তে কি ক্ষতি হবে ভারতীয় ফুটবলারদের? ফাইল চিত্র

আইএসএলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য আই লিগের ক্লাবগুলি চেয়েছিল দুই লিগেই সমসংখ্যক বিদেশি খেলুক। অর্থাৎ চারের বদলে আইলিগে খেলুক পাঁচ বিদেশি।

Advertisement

বৃহস্পতিবার ফেডারেশনের সঙ্গে দিল্লিতে আইলিগের সভায় সিদ্ধান্ত হল এ বছর আটজন বিদেশি সই করানো যাবে। খেলানো যাবে পাঁচ জনকে। শর্ত দেওয়া হল আটের মধ্যে দুই এবং পাঁচের মধ্যে একজন এশীয় অঞ্চলের বিদেশি নেওয়া বাধ্যতামূলক।

খাতায় কলমে দেশের এক নম্বর লিগে বিদেশি ফুটবলার বাড়ানোর খবর পাওয়ার পর শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক। কারও মত এটা ভারতীয় ফুটবলের পক্ষে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। দেশের ফুটবলারদের তারকা হওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে এই সিদ্ধান্তে। অন্য পক্ষের মত দুটো লিগ এ বার পাশাপাশি হচ্ছে। ফলে কুড়িটি টিম এ বার একসঙ্গে খেলবে। তাতে যে সংখ্যার দেশীয় ফুটবলার খেলত, তা কমছে না। এ বারের জন্য এটা মেনে নেওয়া যেতে পারে। দু’বার মোহনবাগানকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করা কোচ সুব্রত ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘এ তো ভারতীয় ফুটবলকে আরও রসাতলে পাঠানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। কফিনে শেষ পেরেক মারার চেষ্টা। বোঝাই যাচ্ছে, ক্লাব কর্তাদের এ দেশের খেলোয়াড়দের উপর আস্থা নেই। এটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত।’’ সুব্রতর সঙ্গে একমত নন আই লিগ জয়ী কোচ মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। ইস্টবেঙ্গলকে লিগ দেওয়া মনোরঞ্জন এখন লাল-হলুদ ম্যানেজার। তবুও বললেন, ‘‘এ বারের জন্য ঠিক আছে। পরে দু’টো লিগ এক হলে এটা কমাতে হবে। হয়তো কমবেও। এ বার পাশাপাশি দুটো লিগ হচ্ছে। এত দেশীয় ফুটবলার কোথায় পাওয়া যাবে? চারশোর মতো ফুটবলার লাগবে।’’ পাশাপাশি দেশের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডারের মন্তব্য, ‘‘আমি বরং মনে করছি, সমস্যা হবে অন্য জায়গায়। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান পারলেও অন্য আই লিগের ক্লাবগুলো কি পারবে এত বিদেশির জন্য খরচ করতে? কম টাকায় আনা খারাপ বিদেশিতে না ছেয়ে যায় লিগ।’’

Advertisement

বিদেশি বেড়ে যাওয়ার খবর পেয়েছেন মেহতাব হোসেন থেকে শিল্টন পাল, বলবন্ত সিংহ সকলেই। কোচেদের মতো তাঁরাও দ্বিধাবিভক্ত। দেশের অন্যতম মিডিও মেহতাব খেলবেন আইএসএলে। বলছিলেন, ‘‘আমি আই লিগে এবার নেই। মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না। তবে এই সিদ্ধান্তে বিদেশিদের উপর নির্ভরতা বাড়বে।’’ দেশের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। তবে মোহনবাগানের ১৩ বছর পরে পাওয়া আই লিগ যাঁর হাতে উঠেছিল, সেই অধিনায়ক শিল্টন বলছিলেন, ‘‘বিদেশি যত বাড়বে, তত আমাদের ছেলেদের সুযোগ কমবে। আইএসএল তো বিদেশি কমাচ্ছে বলে শুনেছি। আই লিগে যা ছিল, তা রাখলেই ভাল হত।’’ আই লিগে বিদেশির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দুই প্রধানের কর্তারাই খুশি। মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল, দুই ক্লাবের শীর্ষকর্তাই সভা থেকে বেরিয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন, মাঠে লোক টানতে তাঁরা আট বিদেশিকে সই করানোর চেষ্টা করবেন। এক কর্তা বললেন, ‘‘এ বারের জন্য ঠিক আছে। আইএসএলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার জন্য এটাই তো আমরা চাইছিলাম।’’ অন্য এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘সাধারণ মানের স্বদেশী ফুটবলার যা টাকা চাইছে, তাতে এটা ভাল জবাব হয়েছে। ওদের চেয়ে অনেক কম টাকায় ভাল বিদেশি নিয়ে আসব।’’

কর্তারা তাঁদের মতো করে যুক্তি সাজালেও ফেডারেশনের টেকনিক্যাল কমিটির চেয়ারম্যান শ্যাম থাপা বা দুই প্রধানের প্রাক্তন কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য মনে করেন, ‘‘যদি এটা এ বারের জন্য হয়, তা হলে মানা যায়, কিন্তু যেখানে ভারতীয় ফুটবলের ফিফা র‌্যাঙ্কিং বাড়ছে, সেখানে এ ভাবে বিদেশির সংখ্যা বাড়লে ভারতীয় ফুটবল শেষ হয়ে যাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement