ডোনাল্ড ট্রাম্প। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই গ্রিনল্যান্ডের উপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা প্রয়োজন। সোমবার এই দাবি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই মন্তব্যের জেরে নতুন করে আমেরিকা-ডেনমার্ক সংঘাত দানা বাঁধার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
রবিবার লুইজিয়ানার গভর্নর জেফ ল্যান্ড্রিকে ‘ড্যানিশ আর্কটিক অঞ্চলের’ (এই অঞ্চলেই গ্রিনল্যান্ডের অবস্থান) আমেরিকার বিশেষ দূত হিসেবে নিযুক্ত করেন ট্রাম্প। এই সিদ্ধান্তে ডেনমার্ক তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে। কোপেনহাগেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে এ বিষয়ে কূটনৈতিক প্রতিবাদও জানানো হয়। ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন এবং গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেনস-ফ্রেডেরিক নিলসেন সোমবার যৌথ বিবৃতিতে বলেন, ‘‘গ্রিনল্যান্ড গ্রিনল্যান্ডবাসীর।’’ এই পরিস্থিতিতে সোমবার রাতে (ভারতীয় সময়) ফ্লরিডার পাম বিচে সাংবাদিক বৈঠকে ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ড দরকার। খনিজ পদার্থের জন্য নয়।’’
আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘‘গ্রিনল্যান্ডের দিকে যদি এক বার তাকান, তা হলে দেখবেন উপকূলের উপরে এবং নীচে সর্বত্র রাশিয়ান ও চিনা জাহাজ রয়েছে। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য তাই এটি প্রয়োজন।’’ প্রসঙ্গত, গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারপর্বে গ্রিনল্যান্ডকে আমেরিকায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প । দ্বিতীয় বার হোয়াইট হাউসের ‘দখল’ নিশ্চিত হওয়ার পরে দিয়েছিলেন বলপ্রয়োগের হুঁশিয়ারিও। সে সময়ে রিপাবলিকান নেতার ওই হুমকির প্রতিবাদ করেছিল ডেমোক্র্যাটরা।
ডেনমার্কের মূল ভূখণ্ড থেকে প্রায় ৩০০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ৫৬ হাজার জনসংখ্যার ‘বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ’ প্রায় ৩০০ বছর ধরে কোপেনহাগেনের নিয়ন্ত্রণে। নিজস্ব অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলি পরিচালনা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত দায়িত্ব দ্বীপটির স্বায়ত্তশাসিত কর্তৃপক্ষ পালন করেন। আর বিদেশ এবং প্রতিরক্ষানীতি সংক্রান্ত সিদ্ধান্তগুলি নেয় ডেনমার্ক সরকার। দ্বিতীয় দফায় আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরে ট্রাম্প গত ১১ মাসে একাধিক বার ডেনমার্ক দখলের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। বস্তুত, আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে প্রথম মেয়াদেই দেশের পরিসর বাড়াতে কানাডার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ গ্রিনল্যান্ডকে কিনতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু ওই ‘স্বশাসিত’ দ্বীপের উপর অধিকার ছাড়তে রাজি হয়নি ইউরোপীয় দেশ ডেনমার্ক। গ্রিনল্যান্ডের উপর তাদের অধিকার আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত। গত মার্চে গ্রিনল্যান্ডের পার্লামেন্ট ভোটে জয়ী হয় ‘ট্রাম্প-বিরোধী’ মধ্য-দক্ষিণপন্থী দল ডেমোক্র্যাটস পার্টি। তার পরেই নতুন করে ওয়াশিংটন-কোপেনহাগেন টানাপড়েন শুরু হয়েছে।