Ajinkya Rahane

প্রত্যাবর্তনে লড়াকু ৮৯! লজ্জার মাঝে ভারতের মুখ বোর্ডের চুক্তি থেকে বাদ পড়া রাহানে

২০২২-এর শুরুতে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেট, আইপিএলে ভাল খেলে আবার ভারতের জার্সিতে খেলার সুযোগ পান। বিশ্ব টেস্ট ফাইনালে ফিরেই ৮৯ রান করলেন রাহানে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২৩ ১৯:১৫
Share:

অজিঙ্ক রাহানে। — ফাইল চিত্র

বছর দেড়েক আগের কথা। দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ফিরেছে ভারতীয় দল। সিরিজ়‌ হারতে হয়েছে ১-২ ব্যবধানে। তার থেকেও বড় ব্যাপার, দু’-তিনজন ক্রিকেটারের টেস্ট ভবিষ্যৎ নির্ধারিত করে দেয় সেই সিরিজ়‌। একজন চেতেশ্বর পুজারা, অপর জন অজিঙ্ক রাহানে। দু’জনই ভবিষ্যতে কোনও দিন আর সুযোগ পাবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ ছিল। পুজারা আগেই ফিরেছিলেন টেস্ট দলে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট বিশ্বকাপের ফাইনালে দলে ফিরলেন রাহানেও। এবং প্রথম ইনিংসে বাকিদের ব্যর্থতার মাঝে লড়াকু ৮৯ করে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর খিদে এখনও ফুরিয়ে যায়নি।

Advertisement

২০২০-তে মেলবোর্নে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে শতরানের পর রাহানের ব্যাটে শতরান দেখা যাচ্ছিল না। সেটা তবু ঠিক আছে। কিন্তু অবাক করা হল, ব্যাটে রানও ছিল না। দু’-একটি অর্ধশতরান পেলেও, ধারাবাহিক ভাবে কিছুতেই রান পাচ্ছিলেন না ভারতীয় ব্যাটার। দক্ষিণ আফ্রিকার সেই সফরেও একটি অর্ধশতরান করেছিলেন। কিন্তু ধারাবাহিক ছন্দের অভাব এবং দ্রুত শ্রেয়স আয়ারের উঠে আসা রাহানের ভবিষ্যৎ প্রায় ঠিকই করে দিয়েছিল। বাদ হয়ে যান বোর্ডের চুক্তির আওতা থেকে।

ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সিরিজে বাদ পড়েন তিনি এবং পুজারা। তার পরেই শুরু হয় রাহানের ফেরার লড়াই। মুম্বইয়ের এই ব্যাটার বুঝেই গিয়েছিলেন, জাতীয় দলে ফিরতে গেলে ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলতেই হবে। যেমন ইচ্ছে তেমন কাজ। রঞ্জি ট্রফিতে মুম্বইয়ের হয়ে নিংড়ে দিলেন নিজেকে। লাল বলের ক্রিকেটে একের পর এক বড় ইনিংস তাঁকে হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দিল। মুম্বই রঞ্জি জিততে পারেনি। কিন্তু রাহানের পকেটে থাকা ছ’শোর বেশি রান জাতীয় নির্বাচকদের বার্তা দিয়ে রাখল।

Advertisement

আসল কাজটা তখনও বাকি ছিল। ‘টেস্ট খেলিয়ে’ বলে যে তকমাটা এত দিন গায়ে সেঁটেছিল তা ঝেড়ে ফেলা। সুযোগটা করে দিয়েছিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। আইপিএলে একের পর এক ম্যাচে আগ্রাসী ইনিংস, দলের ভিত গড়ে দেওয়া, প্রয়োজনে ধীরস্থির বা আগ্রাসী— রাহানের কাছে থেকে সবই দেখা যাচ্ছিল। তার পরেও বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে তাঁকে না নিলে নির্বাচকদের প্রতি আস্থা উঠে যেত ক্রিকেটপ্রেমীদের।

টেস্টের দ্বিতীয় দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার প্রাণ ফিরে পেয়েছিলেন রাহানে। প্যাট কামিন্সের বলে আউট হলেও তা ‘নো’ হয়। আর সুযোগ দেননি। রবীন্দ্র জাডেজার সঙ্গে জুটি গড়ার সময় একটা দিক ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন। তৃতীয় দিনের শুরুতেও শান্ত মেজাজে শুরু করেছিলেন। কিন্তু খেলা কিছুটা গড়াতেই পিচও সহজ হল। রাহানের ব্যাট থেকে কভার ড্রাইভ, স্কোয়্যার কাট সব ধরনের শটই দেখা গেল। রানের গতিও বাড়ল।

তবু তিন বছর পরে শতরানটা এল না ক্যামেরন গ্রিনের ক্যাচের সৌজন্যে। কামিন্সের লাফিয়ে আসা বলে খোঁচা দিয়েছিলেন। গালিতে থাকা গ্রিনের ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচ সাজঘরে ফেরাল রাহানেকে।

ফাইনালে খেলতে নামার আগে বোর্ডের পোস্ট করা একটি ভিডিয়োয় রাহানে বলেছিলেন, “১৮-১৯ মাস পরে দলে ফিরেছি। ভাল, খারাপ যা-ই হয়েছে তা নিয়ে আর ভাবতে চাই না। নতুন করে সব শুরু করতে চাই। সিএসকে-র হয়ে খেলা খুবই উপভোগ করেছি। আইপিএলের আগেও ঘরোয়া ক্রিকেটে ভাল খেলেছি। তাই এই প্রত্যাবর্তন আমার কাছে আবেগের।”

রাহানের সংযোজন, “আইপিএল এবং রঞ্জি ট্রফিতে যে মানসিকতা নিয়ে খেলেছি, সেই একই মানসিকতা নিয়ে ফাইনালেও ব্যাট করতে চাই। টি-টোয়েন্টি না টেস্ট খেলছি সেই ফরম্যাট নিয়ে ভাবতে চাই না। এখন যে ভাবে ব্যাট করছি সেটাই ভাল। সব জটিল করে লাভ নেই। যত সহজ থাকবে তত ভাল।”

খারাপ ছন্দের কারণে টেস্ট দল থেকে বাদ পড়েছিলেন। ১৮ মাস পরে ফিরে কোনও আক্ষেপ ছিল না রাহানের। বরং বাদ পড়ার সময়টায় নতুন নতুন জিনিস শিখেছেন তিনি। রাহানে বলেছিলেন, “বাদ পড়ার পর পরিবারের দারুণ সমর্থন পেয়েছি। ভারতের হয়ে খেলা আমার কাছে বরাবরই স্বপ্ন। তাই দলের ফেরার জন্যে আগে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে গিয়েছিলাম। রঞ্জি হোক বা সৈয়দ মুস্তাক আলি, সব সময় সতীর্থদের থেকে কিছু না কিছু শিখেছি। নিজের ফিটনেসের উপরে জোর দিয়েছি। প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করেছি। ভারতের হয়ে ফেরাটাই আসল লক্ষ্য ছিল। বাদ পড়ার জন্যে কোনও আক্ষেপ নেই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন