Usman Khawaja

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট সংস্কৃতি নিয়েই প্রশ্ন, তুললেন সে দেশের একমাত্র মুসলিম ক্রিকেটার

টেস্টে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ডেভিড ওয়ার্নার, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ইয়ান চ্যাপেল, মার্ক ওয়দের থেকে ব্যাটিং গড় বেশি খোয়াজার। কিন্তু ছোটবেলাতে বার বার তাচ্ছিল্য জুটেছে তাঁর।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৩ ১৪:৫৪
Share:

অস্ট্রেলিয়ার একমাত্র মুসলিম ক্রিকেটার উসমান খোয়াজা। কিন্তু সে দেশের ক্রিকেট নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। —ফাইল চিত্র

কয়েক দিন আগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১৯৫ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন উসমান খোয়াজা। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলা একমাত্র মুসলিম তথা উপমহাদেশের ক্রিকেটার তিনি। অথচ ১৩-১৪ বছর বয়স পর্যন্ত নাকি অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থনই করতেন না তিনি। কেন? এই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে অস্ট্রেলিয়ায় বর্ণবিদ্বেষের কথা।

Advertisement

অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ১০০-র বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন খোয়াজা। তার মধ্যে ৫৬টি টেস্ট রয়েছে। টেস্টে অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ডেভিড ওয়ার্নার, জাস্টিন ল্যাঙ্গার, ইয়ান চ্যাপেল, মার্ক ওয়দের থেকে ব্যাটিং গড় বেশি তাঁর। কিন্তু ছোটতে নিজের পরিচিতি খুঁজতে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়েছে তাঁকে। বার বার জুটেছে তাচ্ছিল্য। বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্যের শিকার হয়েছেন খোয়াজা।

একটি সাক্ষাৎকারে খোয়াজা জানিয়েছেন, অস্ট্রেলিয়ায় উপমহাদেশের প্রচুর ক্রিকেটার রয়েছেন। জুনিয়র স্তরে তাঁদের দেখা যায়। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্তরে দেখা যায় না। কেন? তাঁরা কি খারাপ খেলেন? না কি তার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে? খোয়াজার মতে, বর্ণের জন্যই নাকি সর্বোচ্চ স্তরে খেলতে পান না তাঁরা। খোয়াজা জানিয়েছেন, ছোটবেলাটা মোটেই সহজ ছিল না তাঁর। তিনি বলেছেন, ‘‘ছোটতে যখন ক্রিকেট খেলতাম তখন অনেক অপমান সহ্য করেছি। গায়ের রঙের জন্য আমাকে অন্য নামে ডাকা হত। এটা শুধু আমাকে সহ্য করতে হত না। আমার মতোই উপমহাদেশের যারা খেলত সবাইকে সহ্য করতে হত। সেই সময়টা পেরিয়ে এসেছি।’’

Advertisement

তবে এটা শুধু উপমহাদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের সহ্য করতে হত তা নয়, অস্ট্রেলিয়ার আদি জনজাতির ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই রকম ছিল। সাদা চামড়ার ক্রিকেটারদের দাপটে বাকিরা ছিল কোনঠাসা। একটি পরিসংখ্যানেই সেটা পরিষ্কার। অস্ট্রেলিয়ার ৪৬০ জন টেস্ট ক্রিকেটারের মধ্যে জেসন গিলেসপি ও স্কট বোলান্ড হলেন সে দেশের আদি জনজাতি থেকে উঠে আসা ক্রিকেটার। বাকিরা সবাই সাদা চামড়ার।

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করা ভারত-পাকিস্তানের মানুষরা নিজেদের দেশকে সমর্থন করেন বলেই জানিয়েছেন খোয়াজা। তিনি বলেছেন, ‘‘ভারতে সিরিজ় খেলতে যাচ্ছি শুনে এক ভারতীয় আমাকে শুভেচ্ছা জানাল। কিন্তু তার পরেও বলল যে তারা ভারতকে সমর্থন করবে। কারণ, তারা নিজেদের অস্ট্রেলীয় বলে মনে করে না। তাতে ওদের কোনও দোষ নেই। এ ভাবে সবাইকে ভাবতে বাধ্য করা হয়েছে।’’

এই কথা নিজের সতীর্থদের সঙ্গেও ভাগ করে নিয়েছেন খোয়াজা। তাঁদের বুঝিয়েছেন, দেশের ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিতে কী কী বদলের প্রয়োজন রয়েছে। খোয়াজা বলেছেন, ‘‘গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের আগে আমি সবাইকে বলেছিলাম, তোমাদের সাদা চামড়ার অস্ট্রেলীয়রা ভালবাসে। কিন্তু বাকিরা। দেশের একটা বড় অংশের জনগণ অস্ট্রেলিয়াকে সমর্থন করে না। এটা ঠিক করার জন্য ক্রিকেটীয় সংস্কৃতিতে বদল আনতে হবে।’’

এখন কি সেই সংস্কৃতিতে কিছুটা বদল এসেছে? তেমনটা মনে করেন না খোয়াজা। তাঁর মতে, ‘‘এখনও জুনিয়র স্তরে ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটার দেখা যায়। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতে পারে না তারা। এখনও এক জন সাদা চামড়ার কোচ এক জন সাদা চামড়ার ক্রিকেটারকেই দলে নেয়। কারণ, তার মধ্যে হয়তো নিজের ছেলেকে দেখতে পায় সে। যত দিন না সেটা বদলাবে, যত দিন না শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় দক্ষতা দেখে দল নির্বাচন না হবে তত দিন এই সমস্যা থাকবে।’’

তাঁর নিজেরই আরও আগে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে অভিষেক হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন খোয়াজা। এমনকি অভিষেকের পরেও পর্যাপ্ত সুযোগ পাননি তিনি। ভাল খেলার পরেও দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছে। তাঁর থেকে অনেক কম প্রতিভা নিয়েও অনেকে খেলেছেন। কিন্তু খোয়াজা আশা করেন, পরিস্থিতি বদলাবে। তিনি প্রথম হতে পারেন। কিন্তু তিনিই একমাত্র হবেন না। এমনটাই বিশ্বাস বাঁ হাতি ক্রিকেটারের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন