Ashes 2023

শেষ প্রহরে উত্তপ্ত অ্যাশেজ, লর্ডসে প্রবীণ সমর্থকের সঙ্গে বাগ্‌যুদ্ধ ওয়ার্নার, খোয়াজার

জনি বেয়ারস্টোর আউটকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। সেই আউটটি নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা সাজঘরে ফেরার সময় সমর্থকের সঙ্গে ঝামেলা হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৩ ২০:১০
Share:

মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সাজঘরে ফিরছেন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা। এর পরেই হয় ঝামেলা। ছবি: রয়টার্স

রবিবার অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্টের পঞ্চম দিন হঠাৎই উত্তপ্ত হয়ে উঠল। জনি বেয়ারস্টোর আউটকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত। সেই আউটটি নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়। মধ্যাহ্নভোজের বিরতিতে সাজঘরে ফেরার সময় লর্ডসের ‘লং রুমে’ এক প্রবীণ সমর্থকের সঙ্গে উত্তপ্ত বাদানুবাদ হয় ডেভিড ওয়ার্নার এবং উসমান খোয়াজার।

Advertisement

রবিবার প্রথম সেশনে প্রথমে আউট হন বেন ডাকেট। ইংরেজ ওপেনার ৮৩ রান করে আউট হন। ব্যাট করতে নামেন জনি বেয়ারস্টো। তাঁর সঙ্গে স্টোকসের জুটির দিকেই তাকিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু ক্যামেরন গ্রিনের বাউন্সার থেকে মাথা বাঁচিয়ে নেওয়ার পর বেয়ারস্টো ভুলেই গিয়েছিলেন বল কোথায়। ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। উইকেটরক্ষক অ্যালেক্স ক্যারি সঙ্গে সঙ্গে বল ছুড়ে উইকেট ভেঙে দেন। রান আউট হয়ে যান বেয়ারস্টো। যদিও অনেকের মতে এটাকে স্টাম্পও বলা যায়। উইকেটরক্ষকই তো বল ছুড়ে উইকেট ভেঙেছেন। সমর্থকেরা এই সিদ্ধান্ত মোটেই মানতে পারেননি।

এর কিছু ক্ষণ পরে মধ্যাহ্নভোজের বিরতি হয়। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা একে একে সাজঘরে ফিরছিলেন। সেই সময় দর্শকরা চিৎকার করে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের ‘চোর, প্রতারক’ ইত্যাদি সম্বোধনে ডাকতে থাকেন। অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটাররা তাতে বিশেষ পাত্তা দেননি।

Advertisement

কিন্তু সিঁড়ি দিয়ে উঠে লং রুমে ঢোকার পরেই বিপত্তি ঘটে। সেখানে ছিলেন এমসিসি-র (মেরিলীবোন ক্রিকেট ক্লাব) সদস্যরা। তাঁরা ইংল্যান্ডেরই সমর্থক। তাঁদের মধ্যে এক প্রবীণ অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারদের উদ্দেশে কিছু বলেন। ওয়ার্নার এবং খোয়াজা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। তাঁরা পাল্টা দেন। শুরু হয়ে যায় উত্তপ্ত বাক্যবিনিময়।

ঝামেলা থামাতে এগিয়ে আসতে হয় নিরাপত্তারক্ষীদের। তাঁরা ওয়ার্নার, খোয়াজাকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। ওই সমর্থকের থেকে তাঁদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। লর্ডস কর্তৃপক্ষের তরফে আবেদন করা হয় ক্রিকেটারদের কোনও ভাবে বিরক্ত বা আক্রমণ না করার জন্যে। তাঁদের সংযত থাকার অনুরোধ করা হয়।

ঘটনা দেখে ইংল্যান্ডের প্রাক্তন অধিনায়ক অইন মর্গ্যান বলেন, “আমি সারা জীবন এই মাঠে খেলেছি। কোনও দিন এই জিনিস দেখিনি। বিশেষত লং রুমে।”

অ্যাশেজ মানেই লড়াইটা শুধু ক্রিকেটে আটকে থাকবে না। মধ্যাহ্নভোজের সময় অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটারেরা যখন মাঠ থেকে বার হচ্ছিলেন, সেই সময় ইংরেজ সমর্থকেরা তাঁদের বিদ্রুপ করেন। এই ঘটনা নতুন নয়। অ্যাশেজ সিরিজ়ের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক ইতিহাস। যা কিছুটা ব্যাঙ্গাত্মক। খানিকটা শোকেরও। ১৮৮২ সালে ওভালে আয়োজিত টেস্টে অস্ট্রেলিয়ার কাছে প্রথম হেরেছিল ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ার ফ্রেড স্পফোর্থের অনবদ্য বোলিংয়ের কাছে হারতে হয়েছিল ইংরেজদের। চতুর্থ ইনিংসে ৮৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিততে পারেনি তারা। স্পফোর্থ ৪৪ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন। ০-১ ব্যবধানে সিরিজ় হেরে গিয়েছিল। পরের দিন ইংল্যান্ডের সংবাদ পত্র ‘দ্য স্পোর্টিং টাইমস্‌’ তাদের প্রতিবেদনে ক্রিকেট দলের তীব্র সমালোচনা করেছিল। লেখা হয়েছিল, ইংরেজ ক্রিকেটকে চিরস্মরণীয় করে রাখল ওভালের ২৯ আগস্ট, ১৮৮২ তারিখটি। গভীর দুঃখের সাথে বন্ধুরা তা মেনে নিয়েছে। ইংরেজ ক্রিকেটকে ভস্মীভূত করা হয়েছে এবং ছাইগুলো অস্ট্রেলিয়াকে দেওয়া হয়েছে। এর পরের বছর সিরিজ় পুনরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় যায় ইংল্যান্ড। সংবাদমাধ্যমের ব্যঙ্গ মনে রেখে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক আইভো ব্লাই বলেছিলেন, তাঁরা অ্যাশেজ পুণরুদ্ধার করতে অস্ট্রেলিয়ায় এসেছেন।

সে সময় কয়েকজন অস্ট্রেলীয় মহিলা ব্লাইকে আগের সিরিজ়ে পরাজয় নিয়ে পাল্টা ব্যঙ্গ করে ছাই ভর্তি একটি পাত্র দিয়েছিলেন। যাতে ছিল উইকেটের উপরে থাকা বেলের ছাই। তার পর থেকে দু’দেশের টেস্ট সিরিজ় ‘অ্যাশেজ’ বলে পরিচিত হয়। ব্লাই অবশ্য ছাইয়ের সেই আধারটি ব্যক্তিগত উপহার হিসাবে নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন। বিজয়ী দলকে ট্রফি হিসাবে তা দেওয়া হত না তখন। ব্লাইয়ের মৃত্যুর পর তাঁর স্ত্রী লর্ডসে এমসিসি জাদুঘরে সেই পাত্রটি দান করে দিয়েছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন