Sourav Ganguly

দাদার দুর্গাপুজো: এত বড় উৎসব পৃথিবীতে কোথাও হয় না

ছোটবেলা থেকে পুজো দেখছি। বাড়ির পাশেই হয়, সারা রাজ্য জুড়ে হয়, আমাদের গোটা শহরে হয়। দুর্গাপুজো মানে অন্য একটা অনুভূতি। সব বাঙালির কাছেই পুজোর অন্য মানে।

Advertisement

সুমিত ঘোষ

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ অক্টোবর ২০২২ ০৭:২৫
Share:

বাঙালিয়ানা: পুজোর সময় শহর ছেড়ে না বেরিয়ে শুধু উৎসবের মেজাজেই থাকতে চান সৌরভ। ফাইল চিত্র।

ক্রিকেট বিশ্বে দাপিয়ে বেড়ানোর পরেও তাঁর মন জুড়ে দুর্গোৎসব। মণ্ডপ, ঠাকুর, ঢাক, আলোকসজ্জা ছেড়ে কোথাও যেতে ইচ্ছেই করে না। বিদেশে ভারতীয় ক্রিকেটের জয়পতাকা প্রতিষ্ঠা করা অধিনায়ক আজও আদ্যোপান্ত বাঙালি। দুর্গাপুজো নিয়ে খোলামেলা আড্ডায়সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়।

Advertisement

প্রশ্ন: দুর্গাপুজো নিয়ে সব সময়ই আপনার মধ্যে অন্য রকম উচ্ছ্বাস দেখা যায়।

সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: থাকবে না? আমি তো বাঙালি। সব বাঙালির কাছেই দুর্গাপুজো মানে সেরা উৎসব। আমি তো সেই ছোটবেলা থেকে সারা বছর ধরে তাকিয়ে থেকেছি, কবে দুর্গাপুজো আসবে। এখনও তাকিয়ে থাকি।

Advertisement

প্র: তা এ বারের পুজো কেমন কাটছে?

সৌরভ: এই তো সপ্তমীতে সকালে উঠেই বেরিয়ে গিয়েছিলাম।

প্র: মানে? কোথায় বেরিয়ে গেলেন?

সৌরভ: মণ্ডপে চলে গিয়েছিলাম। সপ্তমীর সকালে আরতি দেখতে। দারুণ লাগছিল। আমাকে আসলে পুজোর এই আবহটাই খুব টানে। ছোটবেলা থেকে। মণ্ডপে গিয়ে বসব, আরতি দেখব, সন্ধিপুজো দেখব। পরিবেশটাই অতুলনীয়!

প্র: এত বড় এক জন তারকা মানুষের মধ্যে মিশে পুজো উপভোগ করছেন, এ তো খুব বিরল ব্যাপার!

সৌরভ: আমার বিন্দুমাত্র ধৈর্যচ্যুতি ঘটে না। বরং বেশ উপভোগ করি। তবে হ্যাঁ ভিড় থেকে দূরে থেকেই উপভোগ করতে হয়। দুর্গাপুজোর আনন্দ যদি না নিই, তা হলে কী করে হবে? এই পাঁচ-ছ’টা দিনের কোনও তুলনা হয় না।

প্র: আপনি ক্রিকেটার হিসেবে বিদেশে এত গিয়েছেন। নানা রকম অনুষ্ঠান দেখেছেন। পুজোর এই আকর্ষণই এখনও সেরা?

সৌরভ: এ নিয়ে কোনও সন্দেহই থাকতে পারে না। ছোটবেলা থেকে পুজো দেখছি। বাড়ির পাশেই হয়, সারা রাজ্য জুড়ে হয়, আমাদের গোটা শহরে হয়। দুর্গাপুজো মানে অন্য একটা অনুভূতি। সব বাঙালির কাছেই পুজোর অন্য মানে। তা সে যতই কেউ বিদেশ ঘুরুক না কেন। আর, এত বড় উৎসব পৃথিবীতে কোথাও হয় না।

প্র: এ বারের পুজোয় বিশেষ কোনও প্ল্যান? পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো? মেয়ে এখানে?

সৌরভ: একদম পুজোর ক’টা দিন কলকাতাতেই থাকব, কোথাও যাব না। মণ্ডপে যাব, ওটাই আমার ভাল লাগে। সানা আসতে পারেনি। ও তো ইংল্যান্ডে, পড়াশুনো চলছে।

প্র: একটা সময় তো পুজোর সময়েও ক্রিকেট কিটব্যাগ কাঁধে নিয়ে যেতে হত ম্যাচ খেলতে। তখন কি মন খারাপ হয়ে যেত?

সৌরভ: অবশ্যই, খুবই মন খারাপ লাগত। অনেক সময় এমনও হয়েছে যে, ঢাকের বাজনার মধ্যে ফ্লাইট ধরেছি। আমি অন্যদের মনোভাব জানি না। তবে ছোটবেলা থেকে আমার কাছে যে-হেতু দুর্গাপুজো সেরা উৎসব, সব সময় এই সময়টা আমি পাড়ায়, বাড়িতে থাকতে চেয়েছি। এই ক’টি দিনের আনন্দ নিতে চেয়েছি। সেটা ক্রিকেট খেলার সময় সম্ভব হত না। তবে ঠিকই আছে, পেশাদার খেলোয়াড়ের জীবনে এগুলো তো মেনে নিতেই হয়। আর তাছাড়া ভারতীয় দলের হয়ে খেলার উর্ধ্বেও তো কিছু হতে পারে না, তাই না? তাই পুজোর সময় ফ্লাইট ধরতে মন খারাপ হয়ে গেলেও ক্রিকেটে ফোকাস করতে কখনও অসুবিধা হয়নি।

প্র: এখন কি তাই পুরোমাত্রায় উপভোগ করতে চান পুজো? একদম শহর ছেড়ে বাইরে যেতে চান না?

সৌরভ: না, একদম বেরোই না। আমি এখন কাজও করি না পুজোর সময়। এই ক’টা দিন শুধু উৎসবের মেজাজে থাকো।

প্র: ক্রিকেটজীবনে দুর্গাপুজোর সময় বিশেষ কোনও ঘটনা মনে পড়ে?

সৌরভ: মনে পড়া বলতে প্রায় সব সময়ই বেরিয়ে পড়তে হত। কোনও না কোনও সিরিজ়, টুর্নামেন্ট বা ম্যাচ তো লেগেই থাকত। ক’টা পুজো আর বাড়িতে কাটাতে পেরেছি ক্রিকেট খেলার সময়। নাইরোবিতে মিনি ওয়ার্ল্ড কাপ খেলেছিলাম পুজোর আগে-আগে। আমরা ভাল খেলেছিলাম।

প্র: আপনার অধিনায়কত্বে রানার্স হয়েছিল ভারত। ফাইনালে আপনার সেঞ্চুরি। শেষ ওভারে নিউজ়িল্যান্ডের কাছে হার।

সৌরভ: হ্যাঁ, ওই টুর্নামেন্টটা সম্ভবত পুজোর সময়েই হয়েছিল।

প্র: আচ্ছা, দুর্গাপুজো নিয়ে আপনার এত আবেগ, এত উপভোগ করেন। সব চেয়ে ভাল লাগে পুজোর কোন দিকটা?

সৌরভ: সব কিছুই। ঠাকুর, ঢাকের বাজনা, আলোকসজ্জা। সব মিলিয়ে আবহটাই দারুণ। এমন উৎসবের আমেজ সত্যিই আর কোনও কিছুতে আসে না।

প্র: এ বারে কি ঢাক বাজাবেন? ধুতি পরবেন?

সৌরভ: না, না ঢাক আর বাজাচ্ছি না। তবে মণ্ডপে বসে শুনব তো নিশ্চয়ই। ধুতিটা আর পরছি না (হাসি)। তবে আমি বাঙালি সাজে থাকতে পছন্দ করি পুজোর সময়। তাই পুজোর সময় যে পাঞ্জাবি পরার রীতি রয়েছে, সেই মতেই চলব।

প্র: কেন ধুতি তো বাঙালির খুব ভাল সাজ। আপনাকে নিশ্চয়ই খুব ভালও লাগবে। অনেকে দেখতেও চাইবে তাদের প্রিয় তারকাকে এই বিশেষ সাজে।

সৌরভ: না, না। ধুতিটা আর ঝুঁকি নিচ্ছি না। ম্যানেজ করা কঠিন হয়ে যায়। এ বার তাই থাক।

প্র: এখন তো রেডিমেড ধুতিও বেরিয়ে গিয়েছে...

সৌরভ: হুঁ... তা বেরিয়ে গিয়েছে ঠিকই। চট করে পরে নেওয়া যায়। তবে এ বারটা না হয় থাক।

প্র: আচ্ছা বেশ। এটা বলুন বাড়িতেই থাকা এবং বাড়ির খাবার খাওয়া?

সৌরভ: মোটামুটি বাড়ি আর মণ্ডপেই থাকব। বাড়ির খাওয়াদাওয়াই চলবে। তবে দু’দিন আমি ঠাকুর দেখতে বেরোই। এ বারও যাব।

প্র: তার মানে? এই ভিড়ে আপনি ঠাকুর দেখতে যাবেন? ভক্তরা তো এগোতেই দেবে না? তবে কি ছদ্মবেশে যাবেন দাদা?

সৌরভ: আরে, না, না। ছদ্মবেশ-টদ্মবেশ নেব না। তবে আগে থেকে জানিয়ে যাব। সঙ্গে পুলিশ থাকবে, তাই খুব সমস্যা হবে না। আমি ঠাকুর দেখতে যাওয়ার আনন্দটা মিস করতে চাই না। দু’তিনটে ঠাকুর দেখব। আমাদের বড়িশাতেও বড় বড় পুজো হয়। সেগুলোও দেখার ইচ্ছা আছে।

প্র: পুজোর সময়েও কি একদম কঠোর ডায়েট মেনে চলবেন দাদা? একদম কড়া ডিফেন্স মেনে ব্যাটিং? নাকি স্টেপ আউট করে বিরিয়ানির ছক্কা মারবেন?

সৌরভ (হাসি): ডায়েট মেনেই চলার চেষ্টা করছি। তবে পুজোর সময় বলে কথা...দেখা যাক।

প্র: অনেক ধন্যবাদ। পুজোর শুভেচ্ছা।

সৌরভ: ধন্যবাদ। সকলের পুজো ভাল কাটুক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন