ইডেনে ৫ উইকেট নেওয়া বল হাতে মহম্মদ শামি। ছবি: এক্স।
রঞ্জি ট্রফির দ্বিতীয় ম্যাচে গুজরাতের বিরুদ্ধে জয়ের জন্য বাংলার মূল ভরসা ছিলেন মহম্মদ শামি। অভিমন্যু ঈশ্বরণ, লক্ষ্মীরতন শুক্লদের হতাশ করেননি। ৩৮ রানে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন ভারতীয় দলে ব্রাত্য হয়ে পড়া জোরে বোলার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরতে মরিয়া শামিকে রঞ্জির প্রথম ম্যাচের তুলনায় অনেক বেশি বিপজ্জনক দেখিয়েছে দ্বিতীয় ম্যাচে।
শামি এমন এক জন ক্রিকেটার, যিনি যত বল করেন তত ফিট হন। প্রথম ম্যাচের সাত উইকেটের ছ’টিই ছিল টেলএন্ডারদের। দ্বিতীয় ম্যাচে আট উইকেটের চারটি। তাঁর বিখ্যাত সুইংয়েরও দেখা মিলেছে গুজরাত ম্যাচে। অজিত আগরকরেরা মুখ ফিরিয়ে থাকলেও শামি বল হাতে জবাব দিতে শুরু করেছেন।
২০১৩ সালের ৬ নভেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের বিরুদ্ধে ইডেন গার্ডেন্সেই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল শামির। তার ১২ বছর পর সেই ইডেনই শামির ফিরে আসার লড়াইয়ের সাক্ষী থাকল। সামনেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়। প্রথম টেস্ট হবে ইডেনেই। ছন্দে ফিরতে শুরু করা বাংলার বোলার নিজের দাবি জোরালো করে রাখলেন।
আগরকর এ বার আর বলতে পারবেন না, শামির ফিটনেস সম্পর্কে তাঁর জানা নেই। পর পর দু’টি রঞ্জি ম্যাচে ১৫ উইকেট। চেনা ছন্দে বল করছেন। বাংলা-গুজরাত ম্যাচ দেখতে ইডেনে এসেছিলেন অন্যতম জাতীয় নির্বাচক রুদ্রপ্রতাপ সিংহ। খেলার ফাঁকে শামির সঙ্গে কিছুক্ষণ কথাও বলতে দেখা গিয়েছে ভারতীয় দলের প্রাক্তন জোরে বোলারকে। পারফরম্যান্স, ফিটনেস — সবকিছুই এখন শামির পক্ষে। আগরকরের কাজটা চেনা ইডেনেই বোধহয় কঠিন করে দিলেন বাংলার জোরে বোলার। ম্যাচের পর শামি বলেছেন, ‘‘উইকেট নেওয়াই আমার কাজ। এত দিন ধরে এই কাজটাই করে আসছি। আমি আমার কাজ করেছি। আমি ভাগ্যে বিশ্বাসী। দেখা যাক ভাগ্য আমাকে কত দূর নিয়ে যায়। বাকিটা নির্বাচকদের ব্যাপার। অনেক বার বলেছি বাংলার শক্তি জোরে বোলিং। এই দলে একাধিক সেরা পেসার রয়েছে। আমরা ইডেনে দ্রুতগতির উইকেট চাই। যাতে জোরে বোলারেরা সাহায্য পায়। এখনও তেমন পিচ পাইনি আমরা। আশা করছি, আগামী ম্যাচে পাব।’’ শামি বুঝিয়ে দিলেন, পিচের সাহায্য ছাড়াই দু’ম্যাচে ১৫ উইকেট তুলেছেন। সাহায্য পেলে কী করতেন, তিনিই জানেন।
শামি এ দিন আরও বলেছেন, ‘‘ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ম্যাচ খেলতে বলেছেন। এর মধ্যে ভুল কিছু দেখি না। বিশেষ করে চোট সারিয়ে ফেরা ক্রিকেটারদের ঘরোয়া ম্যাচ খেলেই জাতীয় দলে ফিরতে হবে। নির্বাচকেরাও জাতীয় দলের জন্য ফিট ক্রিকেটারই চান। দেশের হয়ে খেলতে হলে ফিটতো থাকতেই হবে।’’ দু’ম্যাচে প্রায় ৬৯ ওভার বল করা শামি বোধহয় নিজের ম্যাচ ফিটনেসের কথাও আর এক বার মনে করিয়ে দিলেন। উল্লেখ্য, জাতীয় দলে শামিকে বিবেচনা না করার কারণ হিসাবে আগরকর বলেছিলেন, শামির ফিটনেস সংক্রান্ত কোনও তথ্য তাঁদের কাছে ছিল না। ম্যাচের পর সমাজমাধ্যমের স্টোরিতে শামি লিখেছেন, ‘‘কঠিন পরিশ্রম মূল্য দিচ্ছে। ছন্দ ফিরে পেয়ে ভাল লাগছে। নিজের দলের প্রতিনিধিত্ব করতে পারলে সব সময় গর্ব অনুভব করি।’’
যা পরিস্থিতি, শামিকে সম্ভবত আর ভারতীয় দলের বাইরে রাখতে পারবেন না আগরকরেরা। বড় কোনও অঘটন না ঘটলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজ়েই ফিরতে পারেন বাংলার ক্রিকেটার। অভিষেকের ইডেনেই হতে পারে আম্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁর প্রত্যাবর্তন। বাংলার কোচ লক্ষ্মীও বলে দিলেন, শামির কারও কাছে কিছু প্রমাণ করার নেই।