মহম্মদ শামি। —ফাইল চিত্র।
হাসিন জাহানকে বিয়ে করাই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল। টেলিভিশন অনুষ্ঠান ‘আপ কি আদালত’-এ সোজাসাপ্টা বলে দিলেন ভারতীয় দলের জোরে বোলার। একই অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন বিরাট কোহলির সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের কথা।
অভিনেত্রী, মডেল জাহানের সঙ্গে সামির বিয়ে হয় ২০১৪ সালে। তাঁদের দাম্পত্য সুখের হয়নি। ২০১৮ সালে বিচ্ছেদ হয় তাঁদের। বিবাহবিচ্ছেদের মামলা এখনও বিচারাধীন। পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেছেন। শামি-হাসিন সম্পর্ক ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের একাংশের কাছে বহু চর্চিত বিষয়। সেই সম্পর্ক নিয়েই মুখ খুলেছেন বাংলার ক্রিকেটার।
এক প্রশ্নের উত্তরে শামি বলেছেন, ‘‘জীবন আমাদের অনেক কিছু শেখায়। স্বীকার করতে কোনও অসুবিধা নেই, আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ওটাই (বিয়ে)। আমি কাউকে দোষারোপ করতে চাই না। আমার ভাগ্যই খারাপ।’’ তাঁকে প্রশ্ন করা হয়, পারিবারিক সমস্যা সামলে কী ভাবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্য ধরে রেখেছেন? ভারসাম্য বজায় রাখেন কী করে? শামি বলেছেন, ‘‘এই ব্যাপারটা সত্যিই খুব কঠিন। বিষয়টা সমানে খোঁচাতে থাকে। সর্বোচ্চ পর্যায়ে ক্রিকেট খেলার সময় অন্য দিকে মন দিতে বাধ্য করা হয়েছে। অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে হয়েছে বাধ্য হয়ে। এক দিকে বাড়ির পরিস্থিতি সামলানো। আর অন্য দিকে দেশের হয়ে পারফর্ম করা। এমন পরিস্থিতি অসম্ভব মানসিক চাপ তৈরি করে।’’ তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়, শুরুতেই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করেননি? শামি বলেছেন, ‘‘বাড়িতে কে ঝামেলা, অশান্তি চায়? বিশেষ করে আপনি যখন দেশের জন্য লড়ছেন। আমি চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই বিষয়টা নির্ভর করে দু’পক্ষের উপর। অন্য পক্ষ অশান্তি মেটাতে না চাইলে ধৈর্য ধরা ছাড়া উপায় থাকে না।’’
সমাজমাধ্যমে শামিকে নানা কটূক্তি করা হয়েছে বিভিন্ন সময়। ক্রিকেটার হিসাবে কটূক্তির শিকার হয়েছেন। অনেকে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। এ নিয়ে শামি বলেছেন, ‘‘আমার এমন কিছু ছবি দেখেছি, যেগুলো ঠিক নয়। এমন এমন জায়গায় নিজের ছবি দেখেছি, যে সব জায়গায় কখনও যাইনি। গত ছ’-সাত বছর এমন কিছু অভিযোগ উঠেছে আমার বিরুদ্ধে, যেগুলো অপরাধীদের বিরুদ্ধেও শোনা যায় না! কিন্তু আমার কী করার আছে?’’
একাধিক কঠিন সময়ে শামি পাশে পেয়েছেন কোহলি, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, কপিল দেবদের মতো ব্যক্তিত্বকে। মহিলাদের সম্পর্কে শামির মনোভাবের কথা প্রকাশ্যে বলেছেন তাঁরা। এ নিয়ে বাংলার জোরে বোলার বলেছেন, ‘‘আমাদের বাড়িতে কন্যাসন্তানের জন্ম হলে উৎসব হয়। ছেলে হওয়ার থেকে বেশি খুশি হয় সকলে। বাবা বা ঠাকুরদাকে কখনও কোনও মহিলার সঙ্গে চেঁচিয়ে কথা বলতে দেখিনি। বিশ্বাস করি, যা হওয়ার তাই হবে। আমাকে আমার ভাগ্য মেনে নিতে হবে।’’
গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের পর দেখা গিয়েছিল, দুবাইয়ের মাঠে শামির মায়ের পায়ে হাত দিয়ে তাঁকে নমস্কার করছেন কোহলি। ভারতের প্রাক্তন অধিনায়কের সঙ্গে তাঁর মায়ের সম্পর্ক কেমন? শামি বলেছেন, ‘‘মায়ের সঙ্গে ফোনে অনেক বার কথা বলেছে কোহলি। তবে কখনও সামনা সামনি দেখা হয়নি ওদের। মা অনেক বছর পর আমার খেলা দেখতে মাঠে গিয়েছিলেন। কোহলিকে বলেছিলাম, মা মাঠে এসেছে। শুনেই ও মায়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল।’’ এক বার শামির সম্পর্কে বলতে গিয়ে তাঁকে অলস বলেছিলেন কোহলি। তা নিয়ে জোরে বোলার বলেছেন, ‘‘টেস্টের সময় শরীর খুব ক্লান্ত হয়ে যায়। হয়তো অনেক সময় একটু ঘুমিয়ে নিই। এটা জন্য কেউ আমাকে অলস বলতে পারে। আমি কিছু মনে করব না। একটা ক্রিকেট দলে সবচেয়ে কঠিন কাজটা করতে হয় জোরে বোলারদেরই। আমাদের সবচেয়ে বেশি দৌড়তে হয়। যখনই দলের প্রয়োজন হয়, আমাদের এগিয়ে যেতে হয়। মাঠের বাইরে একটু বেশি বিশ্রাম নিলে ক্ষতি কী?’’ তিনি আরও বলেছেন, ‘‘কোহলি আমাকে ‘লেজ়ি’ বা ‘লালা’ বলে ডাকতেই পারে। কিন্ত আমি মোটা। গয়নাও বিক্রি করি না। আসলে ভারতীয় দলে সকলেরই কিছু না কিছু ডাকনাম থাকে।’’
টেলিভিশনের ওই অনুষ্ঠানে ইংরেজি বলা নিয়েও প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে শামিকে। তিনি বলেছেন, ‘‘ধারাভাষ্যকারদের প্রশ্নের উত্তর ইংরেজিতেই দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে নিউ জ়িল্যান্ডে সঙ্গে করে কোহলিকে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওদের উচ্চারণ অন্য রকম হয়। তবে ওর প্রয়োজন হয়নি। কথা বলা শেষ হওয়ার পর ও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘আমাকে কেন সঙ্গে করে নিয়ে গেলি’! এটা নিয়ে আমরা পরে প্রচুর মজাও করেছি।’’
গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দেশের হয়ে শেষ খেলেছেন শামি। বেশ কিছু দিন তিনি ভুগছেন ফিটনেসের সমস্যায়। সামির আশা, দ্রুত চেনা ফর্মে দেখা যাবে তাঁকে।