রিঙ্কু সিংহ। —ফাইল চিত্র।
হবু স্ত্রী প্রিয়া সরোজের পছন্দ সুইৎজারল্যান্ড। রিঙ্কু সিংহের পছন্দ নরওয়ে। বিয়ের দিন এখনও চূড়ান্ত হয়নি। অথচ বাগ্দত্তার সঙ্গে মধুচন্দ্রিমার জায়গা নিয়ে মতবিরোধের কথা প্রকাশ্যে বলে ফেললেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের ব্যাটার।
না, সমাজবাদী পার্টির সাংসদের সঙ্গে বিরোধ নেই ক্রিকেটারের। শেষ পর্যন্ত হয়তো স্ত্রীর ইচ্ছাকেই গুরুত্ব দেবেন। এখন এশিয়া কাপ এবং বিয়ের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত রিঙ্কু। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দেশের অন্যতম সেরা ফিনিশার তার মধ্যেই সময় বের করে মুখোমুখি হয়েছিলেন ‘নিউজ২৪ স্পোর্টস’ এবং ‘রেভস্পোর্টস’-এর। কথায় কথায় এসেছে ক্রিকেট, বিয়ে, ব্যক্তিগত ভাললাগা, ভয় ইত্যাদি। এসেছে ভারতীয় দলের কোচ গৌতম গম্ভীরের প্রসঙ্গও। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন সাবলীল ভাবে। ২০ ওভারের ক্রিকেটে ব্যাট করার মেজাজে স্টেপ আউটও করেছেন। তবে একটা প্রশ্নে সতর্ক হয়ে ডিফেন্স করেছেন ডাকাবুকো ব্যাটার।
ভোর ৪টেয় প্রিয়ার ভোটে জেতার খবর
হবু স্ত্রী প্রিয়ার ভোটে জয়ের খবর রিঙ্কু পেয়েছিলেন ভোর ৪টেয়। রিঙ্কু বলেছেন, ‘‘প্রিয়া ভোটে দাঁড়িয়েছিল। একটু চিন্তা তো ছিলই, জিতবে কিনা। গণনার দিন আমি নিউইয়র্কে ছিলাম। ভোর ৪টের সময় ওর জয়ের খবর পাই।’’ সাংসদ স্ত্রীকে নিয়ে খুশি রিঙ্কু বলেছেন, ‘‘সব সময় কথা বলার সুযোগ হয় না। ও নিজের নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। গ্রামে গ্রামে ঘোরে। মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করে। এখন সংসদের অধিবেশন চলছে। তাই নিয়ে ব্যস্ত আছে। সারা দিনই প্রায় ব্যস্ত থাকে। আমিও ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকি। ফলে সব সময় কথা বলার সুযোগ হয় না ইচ্ছা হলেও। রাতের দিকে কথা হয়।’’
বিরাটের ব্যাট চেয়ে বদনাম
গত আইপিএলে বিরাট কোহলির আশে পাশে খুব একটা দেখা যায়নি রিঙ্কুকে। অথচ কেকেআরের ব্যাটারই আগের আইপিএলে সোজা চলে গিয়েছিলেন আরসিবির সাজঘরে। কোহলির কাছে ব্যাট চাইতে। কোহলির সঙ্গে কি সম্পর্ক আগের মতো নেই আর? রিঙ্কু বলেছেন, ‘‘না না। আরে ওই ব্যাটটার জন্য আমার খুব বদনাম হয়ে গিয়েছিল। কোহলি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলে সব সময়ই গিয়ে কথা বলি। সে দিন ইডেনেও সে ভাবেই গিয়েছিলাম। কথা বলার পর একটা ব্যাট চেয়েছিলাম। ক্যামেরাম্যান আমাদেরই দেখাচ্ছিলেন। আমরা কী কথা বলছি, কী করছি সব সম্প্রচার করা হয়েছিল! বিষয়টা অত্যন্ত বিরক্তিকর। কোহলি ভাইয়ের পছন্দ হয়নি। ভিডিয়োটা ভাইরাল হয়েছিল। তাতে আমাদের কারও ভাল হয়নি। ব্যাট চাওয়ার জন্য আমার তো বদনামই হয়ে গিয়েছিল।’’ রিঙ্কুর কথা থেকেই বোঝা গিয়েছে, গত আইপিএলে সচেতন ভাবেই কোহলির সঙ্গে প্রকাশ্যে দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন। রিঙ্কুর মতো উত্তরপ্রদেশের আর এক ক্রিকেটার স্বস্তিক চিকারা কোহলির কাছে ব্যাট চেয়েছেন গত আইপিএলে। তা নিয়ে কেকেআর ব্যাটার বলেছেন, ‘‘চিকারার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল ওটা। কোহলি ভাইয়ের মতো বড় ক্রিকেটারের কাছে যেতে পারা ওর জন্য বড় ব্যাপার। কোহলি ভাইয়ের সঙ্গে ছায়ার মতো আটকে গিয়েছিল চিকারা। অনেক কিছু শিখতেও পেরেছে।’’
২০২৫ সালেও দুই সিনিয়র ক্রিকেটারের ব্যাট নিয়েছেন রিঙ্কু। নিজেই সে কথা জানিয়েছেন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি এবং রোহিত শর্মার ব্যাট নিয়ে খেলেছেন শেষ আইপিএল। রিঙ্কু বলেছেন, ‘‘কোহলি ভাইয়ের সঙ্গে খুব একটা থাকিনি। তবে মাহি ভাই আর রোহিত ভাইয়ের কাছ থেকে ব্যাট নিয়েছি। ওঁদের মতো ক্রিকেটারের কাছ থেকে ব্যাট পাওয়ার আলাদা গুরুত্ব আছে আমার কাছে।’’ আপনি কি শুধু সিনিয়র ক্রিকেটারদের থেকে ব্যাট চেয়ে বেড়ান? কেকেআর ব্যাটার বলেছেন, ‘‘আমি নিজেও প্রচুর ব্যাট দিয়েছি। যাদের সত্যি প্রয়োজন, তাদের ব্যাট দিই। তবে যাদের কোনও সংস্থার সঙ্গে চুক্তি আছে তাদের দিই না।’’
ভূতের ভয়
২২ গজে ব্যাট হাতে ডাকাবুকো হলেও রিঙ্কু ভূতের ভয় পান। সেই ভয় নিয়ে মজার গল্প শুনিয়েছেন। রিঙ্কু বলেছেন কেকেআর শিবিরের অভিজ্ঞতার কথা। হাসতে হাসতে রিঙ্কু বলেছেন, ‘‘ঘটনাটা ২০১৯ সালের। নীতীশ রানা, আন্দ্রে রাসেল, পীযুষ চাওলার স্ত্রীরা মিলে এক দিন রাতে আমাকে ভূতের ভয় দেখিয়েছিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম সে দিন। কেউ কালো চাদর গায়ে দিয়ে, কেউ পরচুল পরে এসেছিল। তিন বৌদিকে ওই অবস্থায় দেখে সব ফেলে দৌড় দিয়েছিলাম। হাতে বোধহয় ঠান্ডা পানীয় ছিল। পরে অবশ্য মজাই হয়েছিল।’’ ভারতীয় দলে থাকলে হোটেলের ঘরে একা থাকতে হয়। বিদেশে গেলে সঙ্গে কাউকে চাই রিঙ্কুর। সারা রাত ঘরে আলো জ্বালিয়ে রাখেন। রাত ৩টের পর ঘুমোন ভূতের ভয়ে।
বোলার রিঙ্কু
ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি বোলিংয়েও গুরুত্ব দিচ্ছেন রিঙ্কু। শুধু ব্যাট করে যে এখন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টিকে থাকা যাবে না, বুঝে গিয়েছেন। গত বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে সুযোগ না পাওয়ার পর তাই বলও করছেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে বোলার রিঙ্কু এক ওভারে ২ উইকেট নিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন। নিজের বোলিং নিয়ে বলেছেন, ‘‘এখন শুধু ব্যাট করে দলে থাকা কঠিন। যারা ব্যাট-বল দুটোই করতে পারে, নির্বাচকেরা তাদের বেশি গুরুত্ব দেন। তাই বোলিংয়েও গুরুত্ব দিচ্ছি। দেখা যাক কতটা কী করতে পারি।’’ ইউপি টি-টোয়েন্টি লিগেও নিয়মিত বল করছেন রিঙ্কু।
ভারতের টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব তাঁকে দিয়ে প্রথম বল করান আন্তর্জাতিক ম্যাচে। রিঙ্কু বলেছেন, ‘‘আগে বোলিংয়ে খুব একটা আগ্রহ ছিল না। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ভাউ (সূর্যকুমারকে এই নামে ডাকেন রিঙ্কু) আমাকে বলল, পিচে স্পিন করছে। তোকে বল করতে হতে পারে। আমাকে ২ ওভার বাকি থাকতে বল করতে ডেকেছিল। তখন ১২ বলে ৯ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। ভগবানকে ডেকে বল করেছিলাম। এক ওভারে ২ উইকেট নিয়েছিলাম। আমরা জিতেছিলাম। বলতে পারেন, ওই ম্যাচের পরই বোলিং নিয়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আসলে বোলিং এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। কোনও ব্যাটার দু’-এক ওভার বল করে ১টা উইকেট তুলতে পারলেও দলের অনেক কাজে লাগে।’’
অধিনায়কের সঙ্গে সমীকরণ
ভারতীয় দলে থাকলে সূর্যকুমারের সঙ্গে সঙ্গেই থাকেন রিঙ্কু। তিনি বলেছেন, ‘‘ভাউ খুব ভাল। কে কী করতে পারে, সে ব্যাপারে পরিষ্কার ধারণা আছে ওর। আমি সঙ্গে সঙ্গেই থাকি। আমরা চার-পাঁচ জন আছি এ রকম। অর্শদীপ সিংহ, রবি বিষ্ণোই, আবেশ খান, জীতেশ শর্মা ওর সঙ্গেই থাকি সুযোগ পেলে।
কোচ গৌতম গম্ভীর কতটা গম্ভীর?
ভারতীয় দলের কোচকে সাধারণত হাসতে দেখা যায় না। প্রায় সব সময় গম্ভীর মুখেই থাকেন। সাজঘরেও কি সব সময় এমনই থাকেন গম্ভীর? রিঙ্কু বলেছেন, ‘‘একদমই নয়। আসলে জয় ছাড়া উনি কিছু ভাবেন না। কোচ ম্যাচের সময় একটু সিরিয়াস থাকেন। চুপচাপ বসে থাকেন। অনেক সময় প্রার্থনা করেন। অন্য সময় বেশ হাসি-ঠাট্টা করেন। প্রচুর মজা করেন। গান শোনেন। সিনিয়র ক্রিকেটারেরা প্রচুর মজা করে কোচের সঙ্গে। জুনিয়র বলে আমি খুব একটা মজা করি না গম্ভীর স্যরের সঙ্গে।’’
গান শুনতে ভালবাসেন
নানা রকম গান শোনেন রিঙ্কু। কখনও কখনও দুঃখের গানও শোনেন। রিঙ্কু বলেছেন, ‘‘গান শুনি। কখনও দুঃখের গান। কখনও প্রেমের গান। আমাদের সাজঘরেও নানা রকম গান চলে। হিন্দি, পঞ্জাবি, ইংরেজি— সব চলে। বেশি পঞ্জাবি গান বাজে। ইংরেজি গান খুব একটা আমি শুনি না। কারণ ভাষাটা ভাল বুঝতে পারি না। ইংরেজি গান হলে হয়তো বাজনার সঙ্গে একটু ডিংচ্যাক ডিংচ্যাক করে নিই।’’
শাহরুখ খানের চাটার্ড প্লেনে
কেকেআর কর্ণধার শাহরুখ খানের সঙ্গে তাঁর চার্টার্ড প্লেনে ওঠার সুযোগ হয়েছে রিঙ্কুর। তা নিয়ে বলেছেন, ‘‘এক বার শাহরুখ স্যরের সঙ্গে প্লেনে গিয়েছি। গত বার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাইনি। স্ট্যান্ড বাই ছিলাম। ভিসা পেতে একটু দেরি হয়েছিল। পরের দিন আমেরিকায় গিয়েছিলাম। আমার একারই যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনও ভাবে শাহরুখ স্যর বিষয়টা জানতে পারেন। সে দিন ওঁরও আমেরিকা যাওয়ার ছিল। স্যরের সচিব পূজা দাদলানি আমায় ফোন করেন। বলেন, আমি যেন শাহরুখ স্যরের সঙ্গে আমেরিকায় যাই। প্রথমে রাজি হইনি। একটু অস্বস্তিকর লেগেছিল। কিন্তু পরে শাহরুখ স্যর নিজে আমাকে ফোন করেন। তার পর আর না বলা সম্ভব ছিল না। স্যর নিজের গাড়ি করে বিমানবন্দরেও নিয়ে গিয়েছিলেন। ’’ কেমন ছিল সেই সফর? রিঙ্কু বলেছেন, ‘‘খুব ভাল ফর্মে ছিলাম না। শাহরুখ স্যর আমার সঙ্গে অনেক কথা বলেছিলেন। উৎসাহ, সাহস দিয়েছিলেন। অনেক কিছু বুঝিয়ে ছিলেন। বলেছিলেন, ‘আমরা সকলে সমান। মানুষ এখন তোকেও ততটা চেনে, যতটা আমায়। প্রায় ২ ঘণ্টা আমার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। সেই অভিজ্ঞতাটা অসাধারণ। কখনও ভুলতে পারব না।’’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পাবেন ভেবেছিলেন। পাননি। এ বার এশিয়া কাপের দলের সুযোগ পাওয়ার ব্যাপারে দারুণ আশাবাদী ছিলেন না। কিন্তু পেয়েছেন। খেলার সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা উজাড় করে দিতে চান। কখনও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে খেলেননি রিঙ্কু। এশিয়া কাপে সুযোগ পেলে ভারতকে জেতাতে চান। তিন দিন আগে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম শতরান করেছেন। বল হাতে উইকেটও পাচ্ছেন। এশিয়া কাপের আগে আত্মবিশ্বাসী দেশের অন্যতম সেরা ফিনিশার।