India vs England

পাঁচ ম্যাচই গড়িয়েছে পঞ্চম দিনে, টেস্টের পুনর্জন্ম? না কি আসলে শেষের পথে আরও কয়েক পা এগিয়ে গেল লাল বলের ক্রিকেট!

ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ়ের পাঁচটি টেস্টই পঞ্চম দিনে গিয়ে শেষ হয়েছে। এর পরে টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই উৎসাহিত। কিন্তু পাশাপাশি কিছু অন্য প্রশ্নও উঠছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ অগস্ট ২০২৫ ০৮:৫৫
Share:

(বাঁদিক থেকে) বেন স্টোকস, জো রুট, মহম্মদ সিরাজ, শুভমন গিল। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম

ক্রিকেট কি নিজেই নিজের পায়ে কুড়ুল মারছে? টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে ইংল্যান্ডে সদ্যসমাপ্ত সর্বকালের অন্যতম সেরা সিরিজ়ের পরেও এই প্রশ্ন উঠছে। ওভালে শেষ টেস্ট এই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সঙ্গে কিছু সংশয়ও। যে টেস্ট নিয়ে উচ্ছ্বসিত গোটা ক্রিকেটদুনিয়া।

Advertisement

চরম নাটকীয়তার মধ্যে ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ় শেষ হলেও দু’দলের সেরা বোলারদেরই পাওয়া যায়নি পঞ্চম টেস্টে। ভারতের জসপ্রীত বুমরাহ, ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস, জোফ্রা আর্চার, ব্রাইডন কার্স চোটের জন্য খেলতে পারেননি ওভালে। চোট পেয়ে একসঙ্গে এত জন বোলারের ছিটকে যাওয়ার জন্য কি ইংল্যান্ড বোর্ডই দায়ী? কারণ, বলা হচ্ছে ক্রিকেটারেরা নন, সিরিজ়ের সূচি তৈরি হয়েছিল শুধু বোর্ডের আর্থিক লাভের কথা ভেবে।

একটা সময় ছিল যখন মরসুমের গোটা গ্রীষ্ম জুড়ে ইংল্যান্ডে একটাই টেস্ট সিরিজ় খেলা হত। প্রতিটি টেস্টের আগে যথাযথ প্রস্তুতির সুযোগ পাওয়া যেত। সফরকারী দলগুলি টেস্টের মধ্যে কাউন্টি দলগুলোর সঙ্গে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেত। এমনিতেই এখন প্রায় সব দলেরই ঠাসা সূচি। ফলে কোনও সিরিজ়েই আর গা-ঘামানোর ম্যাচ খেলার সুযোগ পাওয়া যায় না। কিন্তু এ বারের ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ় সব কিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। মাত্র ৪৪ দিনে পাঁচটি টেস্ট হয়েছে। দ্বিতীয়-তৃতীয় টেস্ট এবং চতুর্থ-পঞ্চম টেস্টের মাঝে মাত্র তিন দিনের বিরতি ছিল। মাত্র ৭২ ঘণ্টার ব্যবধানে পর পর দু’বার দুটি করে টেস্ট খেলতে হয়েছে ক্রিকেটারদের। ইংরেজ অধিনায়ক স্টোকস সূচি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, ‘‘টেস্টগুলোর মধ্যে আরও বিশ্রাম পেলে দু’দলেরই ভাল হত। কখনও আট-ন’দিনের বিরতিতে খেলা হয়েছে। কখনও আবার তিন দিনের মধ্যে পরের টেস্ট খেলতে নেমে পড়তে হয়েছে। এতে আমাদের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়েছে।’’

Advertisement

টেস্ট জেতার পর ওভালের দর্শকদের অভিবাদন নিচ্ছেন ভারতীয় দলের ক্রিকেটারেরা। ছবি: রয়টার্স

এখনও পর্যন্ত সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ টেস্ট সিরিজ় যাকে বলা হয়, সেই ২০০৫ সালের অ্যাশেজ়েও পাঁচটি টেস্ট হয়েছিল। এ বারের ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ়ের থেকে ১১ দিন বেশি সময় ছিল ২০ বছর আগের সেই সূচিতে। আগামী নভেম্বরে যে অ্যাশেজ় হবে, তার সূচিতেও ভারত-ইংল্যান্ড সদ্যসমাপ্ত সিরিজ়ের চেয়ে এক সপ্তাহ বেশি সময় রাখা হয়েছে।

কেন এত কম সময় এই সিরিজ়ের জন্য বরাদ্দ করা হল, তার বিবিধ কারণ খোঁজা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, ইংল্যান্ডে ‘দ্য হান্ড্রেড’ প্রতিযোগিতার জন্যই ৪৪ দিনে ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজ় শেষ করা হয়েছে। সোমবার টেস্ট সিরিজ় শেষ হয়েছে। মঙ্গলবারেই শুরু হয়ে গিয়েছে ‘দ্য হান্ড্রেড’! ইংল্যান্ডে বরাবর যেটা ক্রিকেটের ভরা মরসুম, সেই অগস্টের ‘ইংলিশ সামার’-এ আর একটিও টেস্ট ম্যাচ নেই। কারণ, ‘দ্য হান্ড্রেড’। আইপিএলের সঙ্গে পাল্লা দিতে এই প্রতিযোগিতার জন্ম। এই টুর্নামেন্ট শেষ হবে ৩১ অগস্ট। ইংল্যান্ডে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু হবে ২ সেপ্টেম্বর। অনেকেরই যুক্তি, ক্রিকেটের এই ক্ষুদ্রতম (দু’টি দল ১০০ বল করে খেলবে। যারা বেশি রান করবে, জিতবে তারা। এই ম্যাচে টি-টোয়েন্টির চেয়েও ২০ বল কম বরাদ্দ। সময়ও টি-টোয়েন্টির চেয়ে কম) সংস্করণটির আবিষ্কার না হলে ইংল্যান্ড বোর্ড ভারতের বিরুদ্ধে সিরিজ়ের জন্য আরও বেশি সময় রাখত।

ইংল্যান্ডের ‘দ্য হান্ড্রেড’ প্রতিযোগিতা। ছবি: রয়টার্স

বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক অরুণলাল অবশ্য এখনই এতটা সমালোচনায় যেতে রাজি নন। তাঁর কথায়, ‘‘সমালোচনা করার অধিকার সকলের আছে। তবে দুটো টেস্টের মধ্যে তিন দিনের বিশ্রাম সত্যিই কম। অন্তত পাঁচ দিনের বিরতি থাকা উচিত।’’

এ বারের সিরিজ়ে সব টেস্ট শেষ দিনে গড়িয়েছে বলে অনেকেই একে সর্বকালের অন্যতম সেরা সিরিজ় বলছেন। কিন্তু সন্দিগ্ধরা এমন প্রশ্নও তুলছেন যে, ভারতীয় ক্রিকেট দলের খেলা হলেই কোটি কোটি টাকা লাভ। সেই কারণে কি বিজ্ঞাপনের ফয়দা তুলতেই এমন পিচ তৈরি করা হয়েছিল, যাতে প্রতিটি ম্যাচ পাঁচ দিন গড়ায়? বাংলার ক্রিকেট কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত এক প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটারের বক্তব্য, ‘‘উত্তেজক সিরিজ় দেখে আমরা খুব লাফালাফি করছি। বলা হচ্ছে, টেস্ট ক্রিকেট নতুন জীবন পেল। সত্যিই কি তাই? উল্টোটাও তো হতে পারে। এই রকম পাটা উইকেট তৈরি করে ক্রিকেটকে উত্তেজক করা হল ঠিকই, কিন্তু যাদের জন্য খেলা, সেই ক্রিকেটারদের ক্ষতি হল না তো? শেষ টেস্টে তো দু’দলের মূল বোলাররা খেলতেই পারল না!’’

বস্তুত, ইংল্যান্ডে এর আগে কখনও এমন পাটা উইকেট দেখা যায়নি। প্রথম চারটি টেস্টের ১৫টি ইনিংসে ৫,৯৫৩ রান হয়েছে। ইনিংস প্রতি গড় রান প্রায় ৪০০। তার মধ্যে তিনটি ইনিংস অসম্পূর্ণ। পাটা উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ড দলের আপত্তি ছিল। সেই চাপেই ওভালে সবুজ উইকেট দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু স্টোকস-আর্চার-বুমরাহদেরই নাটকের শেষ অঙ্কে দেখা গেল না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement