(বাঁ দিকে) বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে শতরানের পর ঋষভ পন্থ। মাঠেই ডিগবাজি পন্থের (ডান দিকে)। ছবি: সমাজমাধ্যম।
ফর্মে ফিরতে অনেকটা দেরি হয়ে গেল ঋষভ পন্থের। গোটা মরসুম দুঃস্বপ্নের মতো কেটেছে তাঁর। একের পর এক ম্যাচে ব্যর্থতা সঙ্গী হয়েছে। সেই পন্থ মরসুমের শেষটা করলেন মাথা উঁচু করে। রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে শতরান করলেন তিনি। আবার পুরনো মেজাজে দেখা গেল পন্থকে। তাঁর ব্যাট থেকে বেরিয়ে এলে একের পর এক বড় শট। চাপ কমে গেলে যে স্বাভাবিক খেলা বেরিয়ে আসে তা আরও এক বার দেখা গেল। এই ম্যাচের উপর লখনউয়ের কিছু নির্ভর করছে না। সেই কারণেই উপভোগ করলেন পন্থ। তাঁকে দেখে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল, কোনও চাপ নিচ্ছেন না। বল দেখছেন আর মারছেন। এই পন্থকেই এত দিন খুঁজছিলেন লখনউয়ের সমর্থকেরা। শেষ ম্যাচে তাঁকে দেখা গেল। ব্যর্থ মরসুমের শেষে সমর্থকদের মুখে কিছুটা হলেও হাসি ফোটাল পন্থের ব্যাটিং।
চার মেরে শতরানের পর পন্থের উল্লাসের ধরনেও দেখা গেল নতুনত্ব। হেলমেট, গ্লাভস খুলে মাঠেই ডিগবাজি খেলেন তিনি। তার পরে দু’দিকে হাত ছড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালেন। নন স্ট্রাইকিং প্রান্তে তখন দাঁড়িয়ে হাততালি দিচ্ছেন সতীর্থ নিকোলাস পুরান। তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন পন্থ। ধারাভাষ্যকার বললেন, নিজের সেরাটা শেষ ম্যাচের জন্য বাঁচিয়ে রেখেছিলেন পন্থ। লখনউয়ের স্টেডিয়াম তখন উত্তাল। দলের অধিনায়কের ইনিংসে মুগ্ধ তাঁরা। স্টেডিয়ামেই থমথমে মুখে বসেছিলেন অনুষ্কা শর্মা। প্রথম দুই দলের মধ্যে কোহলিদের শেষ করার সম্ভাবনা যে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে পন্থের এই ইনিংস, তা বুঝতে পারছিলেন কোহলি-পত্নী।
আইপিএলের শেষ কয়েকটি ম্যাচে দেখা গিয়েছে, প্লে-অফ থেকে বিদায় নেওয়া দলগুলো প্লে-অফে ওঠা দলগুলোকে হারিয়েছে। পঞ্জাব কিংস, গুজরাত টাইটান্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু সবার ক্ষেত্রেই এক ছবি। তার একমাত্র কারণ চাপ। বিদায় নেওয়া দলগুলোর হারানোর কিছু নেই। অন্য দিকে গুজরাত, পঞ্জাব, বেঙ্গালুরুরা চাপ নিয়ে ফেলেছে। লখনউ ম্যাচেও সেটাই দেখা গেল। ছন্নছাড়া বোলিং বেঙ্গালুরুর। তার থেকেও খারাপ ফিল্ডিং করল তারা। কোনও পরিকল্পনাই দেখা গেল না কোহলিদের।
গত ম্যাচে উপরে ব্যাট করতে নেমেছিলেন পন্থ। এই ম্যাচেও তিন নম্বরে নামলেন তিনি। প্রথম থেকেই হাত খুলে খেললেন পন্থ। সেই পুরনো ব্যাটিং দেখা গেল। যেখানে ক্রিকেটীয় ব্যাকরণ ফিকে হয়ে যায়। উইকেটের চার দিকে অদ্ভুত সব শট খেললেন তিনি। উইকেটের পিছনে শট মারতে গিয়ে স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে পড়েও গেলেন পন্থ। কিন্তু তাঁর ব্যাট থামল না। অর্ধশতরানের পর রান তোলার গতি আরও বাড়ল।
পন্থকে কিছুটা সঙ্গ দিল ভাগ্যও। কয়েকটি বল ব্যাটের কানায় লেগে উপরে উঠলেও তাঁর নীচে পৌঁছোতে পারলেন না ফিল্ডারেরা। কয়েকটা বল ব্যাটের কানায় লেগে বাউন্ডারিতে গেল। পন্থ নিজের খেলার ধরন বদলালেন না। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত একই ছন্দে ব্যাট করে গেলেন তিনি। ভুবনেশ্বর কুমারকে কভারের উপর দিয়ে ছক্কা মেরে ৫৫ বলে নিজের শতরান পূর্ণ করলেন পন্থ। তার পরেই দেখা গেল তাঁর বিখ্যাত ডিগবাজি।
শতরানের পরেও পন্থের ব্যাট থামল না। অবশেষে ৬১ বলে ১১৮ রান করে অপরাজিত থাকলেন তিনি। ১১টা চার ও ৮টা ছক্কা বেরিয়ে এল তাঁর ব্যাট থেকে। পন্থের পাশাপাশি ভাল খেললেন মিচেল মার্শ। ৩৭ বলে ৬৭ রান করলেন তিনি। এ বারের আইপিএলে লখনউয়ের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটার মার্শ। সব মিলিয়ে ৬০০-র বেশি রান করলেন অস্ট্রেলিয়ার এই ব্যাটার। দুই ব্যাটারের দাপটে ২০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ২২৭ রান করল লখনউ। অর্থাৎ, আইপিএলে প্রথম দুই দলের মধ্যে থাকতে হলে বড় রান তাড়া করতে হবে কোহলিদের।