India vs England 2025

চারটি অস্বস্তি! ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টে চাপে রাখবে ভারতকে, শুভমনদের শিবিরে স্বস্তি একটিই

এজবাস্টনে বুধবার থেকে শুরু ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট। পিছিয়ে থাকা শুভমন গিলদের লক্ষ্য সমতা ফেরানো। এই মাঠে ভারতের রেকর্ড একদমই সুখকর নয়। যা বাড়তি চাপে রাখতে পারে শুভমনদের।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০২৫ ১১:০১
Share:

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ভাল জায়গায় থেকেও ৫ উইকেটে হারতে হয়েছে ভারতকে। ব্যাটারেরা প্রত্যাশা মতো পারফর্ম করলেও ডুবিয়েছে নির্বিষ বোলিং, খারাপ ফিল্ডিং এবং ব্যাটিং লেজ। বেন স্টোকসদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টেও এই তিনটি বিষয় ভাবাচ্ছে শুভমন গিলদের। তিন বছর আগে আর একটা লজ্জাজনক হারের স্মৃতিও।

Advertisement

ভারত-ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্ট হবে এজবাস্টনে। এই মাঠে লাল বলের ক্রিকেটে ভারতীয়দের তেমন সুখের স্মৃতি নেই। এখনও পর্যন্ত আটটি টেস্ট খেলে সাতটিতে হেরেছে ভারত। একটি টেস্ট ড্র হয়েছে। সাধারণ ভাবে প্রথমে ব্যাট করা দলের জয়ের সম্ভাবনা বেশি এই মাঠে। ১৯০২ সাল থেকে মোট ৫৬টি টেস্ট হয়েছে এ মাঠে। প্রথমে ব্যাট করা দল জিতেছে ২৯টি ম্যাচ। প্রথমে ফিল্ডিং করা দল জয় পেয়েছে ১২টি ম্যাচে। এই মাঠেই ২০২২ সালে ভারতের বিরুদ্ধে চতুর্থ ইনিংসে ৩৭৮ রান তাড়া করে জেতে ইংল্যান্ড।

প্রথম টেস্টে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের সামনে ৩৭১ রানের লক্ষ্য রেখেছিল ভারত। তবু ৫ উইকেটে হারতে হয়েছে শুভমনদের। এজবাস্টনে লড়াইয়ের মাঝে তিন বছর আগের স্মৃতি উস্কে দিয়ে ভারতীয়দের খোঁচা দিতেই পারেন স্টোকসেরা। ২০২২ সালের হারের স্মৃতি চাপে ফেলে দিতে পারে ভারতীয় শিবিরকে। জসপ্রীত বুমরাহ ছাড়া অন্য জোরে বোলারেরা সেরা ফর্মে নেই। ফিল্ডিং হচ্ছে অত্যন্ত সাধারণ মানের। প্রথম টেস্টে যশস্বী জয়সওয়াল একাই চারটি ক্যাচ ফেলেছেন। তরুণ ব্যাটারকে আর স্লিপে রাখার ভরসা পাচ্ছেন না কোচ গৌতম গম্ভীর। কত রান তুললে বোলারেরা ইংরেজ ব্যাটারদের আটকে রাখতে পারবেন, সেটাই বড় প্রশ্ন ভারতীয় শিবিরে। স্বভাবতই চাপে থাকবেন ব্যাটারেরা।

Advertisement

হেডিংলেতে দু’ইনিংস মিলিয়ে পাঁচটি শতরান করেছেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। তবু হারতে হয়েছে! টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এমন ঘটনা আর কখনও ঘটেনি। মহম্মদ সিরাজ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, শার্দূল ঠাকুরেরা নতুন নন। বেশ কিছু দিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন। ইংল্যান্ডেও খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবু ২২ গজের অন্য প্রান্ত থেকে বুমরাহকে সাহায্য করতে পারছেন না। বুমরাহের তৈরি করা চাপ বজায় রাখতে পারছেন না। ইংল্যান্ডের পিচ, আবহাওয়া জোরে বোলিংয়ের জন্য উপযুক্ত। প্রথম টেস্টে স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়াও কাজে লাগাতে পারেননি বোলারেরা। এজবাস্টনে বুমরাহ খেললে এক রকম। তাঁকে বিশ্রাম দেওয়া হলে ভারতের বোলিং আক্রমণের আরও কঙ্কালসার চেহারা দেখা যেতে পারে।

প্রথম টেস্টে ভারতের প্রথম একাদশ নির্বাচন নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তিন নম্বরে অভিমন্যু ঈশ্বরণকে না খেলিয়ে সাই সুদর্শনকে খেলানো বা নীতীশ কুমার রেড্ডির চেয়ে শার্দূলকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার যুক্তিগ্রাহ্য কারণ প্রমাণিত হয়নি। আইপিএল আর টেস্ট ক্রিকেটের পার্থক্য বোঝা উচিত ভারতীয় দলের সাপোর্ট স্টাফদেরও।

২০০০ সাল থেকে এজবাস্টনের যে পরিসংখ্যান পাওয়া যাচ্ছে, তাতে জোরে বোলারেরা নিয়েছেন ৪৯০টি উইকেট। স্পিনারেরা পেয়েছেন ১৫৩টি। অথচ ভারতীয় শিবিরে দুই স্পিনারে খেলার ভাবনা রয়েছে। প্রধান প্রশ্ন, বুমরাহ না খেললে কে আসবেন প্রথম একাদশে। আকাশ দীপ আছেন। দুই স্পিনারে খেললে কুলদীপ যাদব আছেন। তাতে ভারতের বোলিং আক্রমণ দারুণ শক্তিশালী হয়ে যাবে না। সকলকে বাড়তি দায়িত্ব নিতে হবে। লাইন-লেংথ ঠিক রাখতে হবে। প্রথম টেস্টে এই জায়গাতেই পিছিয়ে থেকেছেন ভারতীয়েরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি এবং আইপিএল খেলার পর টেস্ট সিরিজ় খেলতে গিয়েছেন শুভমনেরা। সহকারী কোচ রায়ান টেন দুশখতে মেনে নিয়েছেন, দলে সাদা বলের ক্রিকেটের প্রভাব রয়েছে এখনও। মানসিক ভাবে সকলে এখনও লাল বলের ক্রিকেটে ফিরতে পারেননি। তাই অনুশীলনে ব্যবহার করা হচ্ছে অর্ধেক লাল, অর্ধেক সাদা বল। যাকে বলা হয় ‘টু কালারড বল’। সাদা বলের ক্রিকেট থেকে লাল বলের ক্রিকেটে বা বিপরীত পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে এই বিশেষ বল ব্যবহার করা হয়। ভারতীয় শিবিরও তাই করছে। লক্ষ্য লাল বলে বোলিংয়ের সাধারণ বিষয়গুলি অভ্যাসে ফিরিয়ে আনা। ভারতের অনুশীলনের এই তথ্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, পরিস্থিতি ঠিক কেমন।

বাড়তি পরিশ্রম করছেন ফিল্ডিং কোচ টি দিলীপও। শুভমন, লোকেশ রাহুল এবং করুণ নায়ারকে নিয়ে সাজাচ্ছেন নতুন স্লিপ কর্ডন। স্লিপে ক্যাচ ধরার দুর্বলতা কমাতে নানা ভাবে অনুশীলন করাচ্ছেন। দু’জন ফিল্ডারের মাঝে কালো কাপড় রেখে ‘ব্লাইন্ড জ়োন’ তৈরি করছেন। কোন বলের জন্য কে চেষ্টা করবেন, বুঝিয়ে দিচ্ছেন। ছন্দে না থাকা বোলারেরা যাতে খারাপ ফিল্ডিংয়ের জন্য আরও হতাশ হয়ে না পড়েন, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরও একটি চিন্তা রয়েছে ভারতীয় শিবিরে। দীর্ঘ ব্যাটিং লেজ। প্রথম টেস্টের দু’ইনিংসেই শেষ ছয় উইকেট পড়ে গিয়েছে অল্প সময়ের মধ্যে। বোলারেরা ব্যাট হাতে ২২ গজে আসছেন এবং কয়েকটি বল খেলে আউট হয়ে যাচ্ছেন। যা ’৯০ দশকের ভারতীয় দলের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে। আধুনিক ক্রিকেটে কোনও পর্যায়েই এমন ব্যাটিং লেজ প্রত্যাশিত নয়।

সব মিলিয়ে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় টেস্টের আগে স্বস্তিতে নেই ভারতীয় শিবির। অন্তত চারটি সমস্যা শুভমনদের। প্রথম টেস্টের পর আট দিনের বিশ্রাম তাঁরা কতটা কাজে লাগাতে পেরেছেন, তা বোঝা যাবে খেলা শুরুর পর। ইংল্যান্ড প্রথম টেস্টের প্রথম একাদশ নিয়েই খেলবে। স্টোকসরা খেলাবেন না জফ্রা আর্চারকে। পাঁচ টেস্টের সিরি‌জ়ে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়া ভারতীয় শিবিরের স্বস্তি হয়তো এটাই!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement