(বাঁ দিকে) লোকেশ রাহুল এবং ঋষভ পন্থের (ডান দিকে) শতরানে লড়াই ভারতের। ছবি: আইসিসি।
লিডসে ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ ৩৬৪ রানে। প্রথম ইনিংসে ৬ রানে পিছিয়ে থাকায় ইংল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্য ৩৭১। রান তাড়া করার জন্য প্রায় ১০০ ওভার পাবেন বেন স্টোকসেরা। ব্রেন্ডন ম্যাকালামের ‘বাজ়বাল’ ক্রিকেটে অসম্ভব নয়। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট তুলতে হবে ভারতীয় দলকে। শুভমন গিলদের প্রধান ভরসা জসপ্রীত বুমরাহ। লিডসের ফলাফল নির্ধারিত হতে পারে তাঁর হাতেই। মঙ্গলবার টেস্টের পঞ্চম দিন জয়ের জন্য ভারতের দরকার ১০ উইকেট। ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ৩৫০ রান।
আইপিএলে ঋষভ পন্থের ব্যাটিংয়ের হাল দেখে তাঁর ক্রিকেট ভবিষ্যৎ পড়ে ফেলার চেষ্টা কম হয়নি। নানা সমালোচনা হয়েছে ২৭ কোটির ক্রিকেটারের। সেই সমালোচনার স্তূপের উপর দাঁড়িয়ে নিজেকে নতুন করে গড়ে তুলেছেন পন্থ। ভয়াবহ পথ দুর্ঘটনার পর জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে ২২ গজে ফিরে আসা রুড়কীর তরুণ হাল ছাড়েননি। বরং নিজের হালে (ব্যাট) রান ফিরিয়ে শেষ করেছিলেন আইপিএল। সেই রান যে কাকতালীয় ভাবে করে ফেলা ছিল না, তা প্রমাণ করে দিলেন ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রথম দুই টেস্ট ইনিংসে।
২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাতে ঘুমচোখে হয়তো গাড়ির গিয়ার চেঞ্জ করতে ভুলে গিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে পৌঁছে আর সেই ভুল করেননি পন্থ। না হলে ৯০ থেকে ১০০ রানে পৌঁছোতে ২৬ বল খরচ করতেন না। পন্থ ধরে খেলতে পারেন, এমন কথা হয়তো তাঁর অতি বড় ভক্তও বলতেন না। সোমবার শতরানের ইনিংসের পর হয়তো বলতেই হবে। প্রথম ইনিংসে ১৩৪ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৮। দু’ইনিংসেই শতরান। অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের কৃতিত্ব ছুঁয়ে ফেললেন পন্থ। ২০০১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্টের দু’ইনিংসেই শতরান করেছিলেন ফ্লাওয়ার। ক্রিকেটের ইতিহাসে দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসাবে টেস্টের দু’ইনিংসেই শতরান করলেন পন্থ। শতরান পূর্ণ হওয়ার পর আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করলেন। তার মাসুল দিলেন উইকেট দিয়ে। আর একটু ধরে খেলতে পারতেন পন্থ। অন্তত দলের লম্বা ব্যাটিং লেজের কথা মনে রাখতে পারতেন ১৪০ বল খেলা সহ-অধিনায়ক। তা হলে ভারতীয় দল দিনের শেষে আরও ভাল জায়গায় থাকতে পারত।
শুধু পন্থের কথা বললে হবে না। লোকেশ রাহুলও শতরান করলেন। তাঁর ১৩৭ রানের ইনিংসের গুরুত্বও কম নয়। ওপেন করতে নেমে ৮৫তম ওভার পর্যন্ত ২২ গজের এক প্রান্ত আগলে রাখলেন। দলকে নির্ভরতা দিলেন। যতটা সম্ভব ঝুঁকিহীন থাকার চেষ্টা করেছেন। দলের অভিজ্ঞতম ব্যাটারের ভূমিকা যেমন হওয়া উচিত, ঠিক সেটাই করেছেন। ২৪৭ বলের ইনিংসে নিজে রান তোলার গতি বজায় রাখার চেষ্টা করেছেন। পাশাপাশি পন্থকে সামলে রেখেছেন। দায়িত্বশীল রাহুল সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন বিরাট কোহলি-রোহিত শর্মাহীন ভারতীয় শিবিরের। চতুর্থ উইকেটে তাঁদের ১৯৫ রানের জুটি একটা সময় দিশাহারা করে তুলেছিল বেন স্টোকসদের। কিন্তু ভারতের পরের দিকের ব্যাটারদের ব্যর্থতায় দিনের শেষে ইংরেজ শিবির অনেকটাই স্বস্তিতে। জয়ের আশাও দেখছেন স্টোকসেরা।
লিডস টেস্টে পাঁচটি শতরান করলেন ভারতীয়েরা। এর পরও ম্যাচ জিততে না পারলে, তা হবে লজ্জার। কিন্তু চিন্তায় রাখছে শুভমনের দলের ব্যাটিং লেজ। আধুনিক ক্রিকেটে বড্ড বেমানান। এমন বিরাট অথচ দুর্বল লেজ দিয়ে ক্রিকেটের ইংরেজ সিংহের গায়ে আঁচড় কাটা কঠিন। প্রথম ইনিংসে ভারতের শেষ ৬ উইকেট পড়েছিল ২৪ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে শেষ ৬ উইকেট পড়ল ৩১ রানে। অথচ ইংল্যান্ডের শেষ চার ব্যাটার মিলে করেছেন ৭২ রান। তাঁদের লড়াইয়ের ফলে প্রথম ইনিংসে মাত্র ৬ রানে এগিয়ে থাকতে পেরেছিল ভারত। প্রতিপক্ষের টেলএন্ডারদের আউট করার ক্ষেত্রে ভারতীয় বোলারদের ব্যর্থতা নতুন নয়। গৌতম গম্ভীরের কোচিংয়েও সেই রোগ সারেনি।
বুমরাহ ছাড়া বাকিরা ভরসা দিতে পারছেন না। বল হাতেই পারছেন না, আর ব্যাট হাতে! প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, শার্দূল ঠাকুরেরা হতাশ করছেন লিডসে। অস্ট্রেলিয়ায় রান পাওয়া নীতীশ কুমার রেড্ডিকে সাজঘরে বসিয়ে রেখে শার্দূলকে খেলাচ্ছে ভারত। প্রথম ইনিংসে তাঁকে দিয়ে মাত্র ৬ ওভার বল করিয়েছেন শুভমন। ব্যাট হাতে দু’ইনিংসে শার্দূলের অবদান ১ এবং ৪ রান। দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তো উঠবেই। মূলত ব্যাটার হিসাবে খেলাতে হলে কেন নীতীশ নন? প্রশ্ন আছে প্রসিদ্ধ কৃষ্ণকে খেলানো নিয়েও। আইপিএলে বেগনি টুপি জেতার জোরে বোলারের কাছে আরও বেশি কিছু প্রত্যাশিত। যেমন অভিষেক হওয়া সাই সুদর্শন বা আট বছর পর টেস্ট খেলতে নামা করুণ নায়ারও লিডসে দলকে ভরসা দিতে পারলেন না।
দু’ইনিংস মিলিয়ে ভারতের প্রথম পাঁচ ব্যাটার করেছেন ৭২১ রান। এর মধ্যে রয়েছে সুদর্শনের দু’ইনিংস মিলিয়ে ৩০ রানও! আর শেষ ছ’জন মিলিয়ে করেছেন ৬৫। পার্থক্যটা একটু বেশিই চোখে লাগছে। বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্রিকেট দলের এমন ব্যাটিং লাইনআপের এমন বিপরীত ছবি ভারসাম্যের প্রতীক নয়।
চতুর্থ দিনের শেষে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসের রান ২১। অপরাজিত রয়েছেন দুই ওপেনার জ্যাক ক্রলি এবং বেন ডাকেট। ইংরেজ ব্যাটারেরা যেটুকু সমীহ করছেন, সেই বুমরাহকেই।