জয় দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু ভারতের মহিলা দলের। ছবি: আইসিসি।
শ্রীলঙ্কাকে ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ৫৯ রানে হারিয়ে এক দিনের বিশ্বকাপ শুরু করল ভারতের মহিলা ক্রিকেট দল। ২ পয়েন্ট ঘরে এলেও বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম দাবিদারদের পারফরম্যান্স নিয়ে প্রশ্ন থাকল। বিশেষ করে হরমনপ্রীত কৌরের দলের মিডল অর্ডার নিয়ে। ভারতের ৮ উইকেটে ২৬৯ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হয় ৪৫.৩ ওভারে ২১১ রানে। উল্লেখ্য শ্রীলঙ্কার জয়ের লক্ষ্য ছিল ২৭১ রান।
প্রত্যাশা মতো খেলতে পারলেন না ভারতীয় মহিলা দলের ব্যাটারেরা। বৃষ্টি, মেঘলা আবহাওয়ার মধ্যে হরমনপ্রীতদের সমস্যায় ফেললেন শ্রীলঙ্কার স্পিনারেরা। ইনিংসের ২৬তম ওভারে ইনোকা রণবীরার বলে পর পর আউট হয়ে যান হার হারলিন দেওল, জেমাইমা রদ্রিগেজ এবং হরমনপ্রীত। তবু শেষ পর্যন্ত ভারত ২৬৯ রান তুলল শ্রীলঙ্কার খারাপ ফিল্ডিংয়ের সুবাদে।
টস জিতে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক চামারি আটাপাত্তু। মেঘলা আবহাওয়ায় তাঁর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন ছিল না। গুয়াহাটির ২২ গজে প্রথম থেকেই অস্বস্তিতে ছিলেন ভারতীয় ব্যাটারেরা। ওপেনার স্মৃতি মন্ধানা (৮) খারাপ শট খেলে আউট হয়ে যান চতুর্থ ওভারেই। দ্বিতীয় উইকেটে অন্য ওপেনার প্রীতিকা রাওয়াল এবং তিন নম্বরে নামা হারলিন পরিস্থিতি সামাল দেন। তাঁদের জুটিতে ওঠে ৬৭ রান। প্রীতিকা করেন ৫৯ বলে ৩৭ রান। এর পর হারলিনের সঙ্গে জুটি বাঁধেন হরমনপ্রীত। তৃতীয় উইকেটে তাঁরা তোলেন ৩৯ রান। তবে রান তোলার গতি বাড়াতে পারছিলেন না তাঁরা। আগেই দু’দফা বৃষ্টির জন্য ম্যাচের ওভার সংখ্যা কমে ৪৮ হয়ে যায়। ২৩তম ওভার থেকে আগ্রাসী ব্যাটিং শুরু করেন হারলিন এবং হরমনপ্রীত। কারণ ২০ ওভারের পর ভারতের রান ছিল ৮৪। তবে তাঁদের সেই প্রচেষ্টা কার্যকর হয়নি। ২৬তম ওভারে রণবীরা ভারতের তিন ব্যাটারকে আউট করে ভারতকে আবার চাপে ফেলেন দেন। হারলিন করেন ৬৪ বলে ৪৮। হরমনপ্রীতের ব্যাট থেকে এসেছে ১৯ বলে ২১ রান। ব্যর্থ জেমাইমা (শূন্য)। রান পেলেন না রিচা ঘোষও (২)। ফলে ২ উইকেটে ১২০ থেকে ১২ বলের ব্যবধানে ৬ উইকেটে ১২৪ হয়ে যায় ভারত।
তার পরও ভারত ভাল জায়গায় পৌঁছে দিল দুই অলরাউন্ডারের দীপ্তি শর্মা এবং আমনজ্যোৎ কৌরের দায়িত্বশীল জুটি। সপ্তম উইকেটের জুটিতে ১০৩ রান করেন তাঁরা। তবে এই সময় চারটি ক্যাচ ফেলেন শ্রীলঙ্কার ফিল্ডারেরা। তাতে খানিকটা সুবিধা হয়ে যায় ভারতীয় ব্যাটারদের। শেষ পর্যন্ত আমনজ্যোৎ করেন ৫৬ বলে ৫৭। ৫টি চার ১টি ছয় মারেন। এক দিনের আন্তর্জাতিকে প্রথম অর্ধশতরান করলেন ২৫ বছরের অলরাউন্ডার। শেষ পর্যন্ত দীপ্তি করেন ৫৩ বলে ৫৩। তাঁর সঙ্গে শেষ পর্যন্ত ছিলেন স্নেহ রানা। তিনি ১৫ বলে ২৮ রান করে অপরাজিত থাকেন। ২টি করে চার এবং ছক্কা মারেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার সফলতম বোলার রণবীরা ৪৬ রানে ৪ উইকেট নেন। উদেশিকা প্রবধানী ৫৫ রানে ২ উইকেট পেয়েছেন। ২৪ রানে ১ উইকেট আটাপাত্তুর। ৪২ রানে ১ উইকেট অচিনি কুলসূর্যের।
ডার্কওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে শ্রীলঙ্কার জয়ের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৭ ওভারে ২৭১ রান। জবাবে শুরুটা করেনি শ্রীলঙ্কা। ওপেনার হাসিনি পেরেরা (১৪) দ্রুত আউট হলেও আটাপাত্তু এবং তিন নম্বরে নামা হর্ষিতা সমরবিক্রমা দলকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁদের জুটিতে ওঠে ৫২ রান। এ সময় কিছুটা দিশাহারা দেখাচ্ছিল ভারতীয় বোলারদের। তবে দীপ্তির বলে আটাপাত্তু ব্যক্তিগত ৪৩ রানে আউট হওয়ার পর আর সমস্যা হয়নি। আটাপাত্তুর ৪৭ বলের ইনিংসে রয়েছে ৪টি চার এবং ৩টি ছয়। নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে শুরু করে শ্রীলঙ্কা। ক্রমশ বাড়তে থাকে ওভার প্রতি রান তোলার লক্ষ্যও। দীপ্তি ছাড়াও বাকি দুই স্পিনার রানা এবং শ্রী চরনি চাপে রাখেন প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। হর্ষিতা করেন ৪৫ বলে ২৯। শ্রীলঙ্কার আর কোনও ব্যাটার বলার মতো রান করতে পারেননি। ভিশমি গুণরত্নে (১১), কবিশা দিলহারি (১৫), অনুষ্কা সঞ্জীবনীরা (৬) দলকে ভরসা দিতে পারেননি। কিছুটা লড়াই করেন নীলাক্ষীকা সিলভা। তিনি ৪টি চার এবং ১টি ছয়ের সাহায্যে করেন ২৯ বলে ৩৫। শ্রীলঙ্কার টেলএন্ডারদের আউট করতেও বেশ বেগ পেতে হল ভারতীয় দলকে।
ব্যাটের পাশাপাশি বল হাতেও সফল হয়েছেন দীপ্তি। ৫৪ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৩২ রানে ২ উইকেট রানার। ৩৭ রানে ১ উইকেট আমনজ্যোতের। ৩৭ রানে ২ উইকেট চরনির। ৪১ রানে ১ উইকেট নিয়েছেন ক্রান্তি গৌড়। ৬ রানে ১ উইকেট রাওয়ালের।