রিচা ঘোষ।
দেশের মাঠে ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ। দর্শকদের সমর্থনও যেমন থাকবে, প্রত্যাশার চাপও কম হবে না। ভারতের মহিলা ক্রিকেট দলে বাংলা থেকে একমাত্র প্রতিনিধি রিচা ঘোষ। তিনি মনে করেন, ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জিততে পারলে তার চেয়ে তৃপ্তির আর কিছু থাকবে না।
বর্তমানে কলকাতার বাড়িতে বিশ্রামে আছেন রিচা। মঙ্গলবার দল ঘোষণা হওয়ার পরে কোনও রকম উৎসব হয়নি বাড়িতে। মিষ্টিমুখ করেছেন। কিন্তু বাকি উৎসব তুলে রেখেছেন। তাঁর বাবা মানবেন্দ্র ঘোষের স্বপ্ন, বিশ্বকাপ জেতার পরে উৎসব করুক মেয়ে।
৩০ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করছে ভারত। বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে এক বার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করতে চান ভারতের উইকেটকিপার-ব্যাটার। তাঁর মূল্যবান পরামর্শ নিয়ে ভারতের জার্সিতে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করতে চান রিচা। আনন্দবাজারকে তিনি বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার পরে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার অভিনন্দন জানিয়েছেন। প্রশংসা করেছেন। তবে আমার ইচ্ছে এক বার দাদার (সৌরভ) সঙ্গে কথা বলার। খুবই ব্যস্ত থাকেন জানি। তবে বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে এক বার পরামর্শ নিতে চাই দাদার।’’
বর্তমানে ভারতীয় দলের এক নম্বর উইকেটকিপার-ব্যাটার রিচা। কিপার হিসেবে তিনিই খেলবেন। ব্যাটার হিসেবে খেলতে পারেন যস্তিকা ভাটিয়া। ভারতীয় অধিনায়ক হরমনপ্রীত কউর খুবই ভরসা করেন রিচাকে। যা আরও ভাল খেলতে অনুপ্রাণিত করে বাংলার তারকাকে। রিচা বলছিলেন, ‘‘হ্যারিদি (হরমনপ্রীত) সব সময় উদ্বুদ্ধ করে। আমার উপরে আস্থা রাখে। অধিনায়কের আস্থা ও ভরসাই আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে আমার। এখন আর কোনও প্রতিপক্ষকেই তাই ভয় পাই না।’’
ভারতীয় দলের প্রত্যেকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন, এই বিশ্বকাপ তাঁরা জিততে পারেন। ২০১১ সালে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত দেশের মাঠে বিশ্বকাপ জিতে দেখিয়ে দিয়েছিল। জনসমুদ্রের স্রোত নেমেছিল মুম্বইয়ের মেরিন ড্রাইভে। এ বার হরমনপ্রীতের হাত ধরে কি সেই সম্মান ফিরে আসবে? রিচার বিশ্বাস আসবে। বলছিলেন, ‘‘দলের সকলে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, এই বিশ্বকাপ আমরা জিততে পারি। সমর্থকেরাও আমাদের থেকে কাপ চাইছেন। ভাল না খেললে কি সমর্থকদেরপ্রত্যাশা থাকত?’’
বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এক দিনের সিরিজ় খেলবে ভারত। গত বারের চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে এই সিরিজ়কেই আদর্শ প্রস্তুতির মঞ্চ মনে করছেন রিচা। তারকা উইকেটকিপার-ব্যাটার বলছিলেন, ‘‘বিশ্বকাপের আগে ঘরোয়া পরিবেশে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে খেলার সুযোগ পাচ্ছি। এর চেয়ে ভাল প্রস্তুতির মঞ্চ আর কী হতে পারে?’’ যোগ করেন, ‘‘অস্ট্রেলিয়া সিরিজ়টা খুব মন দিয়ে খেলতে হবে। এই সিরিজ় জিততে পারলে বিশ্বকাপের আগে প্রত্যেকের আত্মবিশ্বাস বাড়বে। অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে যে কোনও দলকে হারানো সম্ভব। এটা সকলেই বিশ্বাস করি।’’
মেয়েদের ক্রিকেটে অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটারের নাম রিচা। এক দিনের ক্রিকেটে ৪০ ম্যাচে ২৩টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। এ ছাড়াও ‘‘দ্য হান্ড্রেড’ থেকে বিগ ব্যাশ লিগে দাপটের সঙ্গে খেলেছেন। ডব্লিউপিএলেও তিনি খেলেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর হয়ে। কী করে এত বড় ছক্কা হাঁকান? রিচার উত্তর, ‘‘রীতিমতো অনুশীলন করি। বড় শট খেলার প্রস্তুতি না নিলে মাঠ পার করব কী করে? আশা করি, বিশ্বকাপেও বড় ছক্কার ঝলক দেখতে পাবেন।’’
বিশ্বকাপে রিচাকে কোন ভূমিকা দেওয়া হয় সেটাই দেখার। ফিনিশারের ভূমিকায় তিনি পরীক্ষিত। কিন্তু এ বার ইনিংস গড়ে তোলার দায়িত্বও তাঁকে দেওয়া হতে পারে। তারই প্রস্তুতি সারছেন তিনি। রিচার কথায়, ‘‘বড় শট খেলতে কখনওই সমস্যা হয় না। বিশ্বকাপে যদি ফিনিশারের ভূমিকা পাই, নিশ্চয়ই তা পালন করার চেষ্টা করব। আমাকে ইনিংস গড়ার দায়িত্বও দেওয়া হতে পারে। ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী খেলার চেষ্টা করব। তবে আমি কোনও পরিস্থিতিকেই আর ভয় পাই না।’’
মেয়ের উত্থানে গর্বিত রিচার বাবা মানবেন্দ্র। বলছিলেন, ‘‘ছোট থেকেই ওর উপরে বিশ্বাস ছিল। শেষ বিশ্বকাপে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। এ বার দেশের মাঠে কাপটা জিতুক।’’
রিচার বাবার মতোই হরমনপ্রীতদের হাতে কাপ দেখতে চান ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরাও।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে