সঞ্জু স্যামসন। —ফাইল চিত্র।
আগামী আইপিএলের আগে রাজস্থান রয়্যালস ছাড়তে চান সঞ্জু স্যামসন। দল কর্তৃপক্ষের কাছে এই মর্মে আবেদনও করেছেন জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার। তবে তাঁর অন্য দলে যোগ দেওয়া সম্পূর্ণ নির্ভর করছে রাজস্থান কর্তৃপক্ষের উপর। এর মধ্যে তাঁকে নেওয়ার জন্য ঝাঁপিয়েছে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও চেন্নাই সুপার কিংস।
আইপিএলের আগামী নিলামের আগে রাজস্থান ছাড়তে চান সঞ্জু। তাঁকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য বা নিলামের আগে ছেড়ে দেওয়ার আবেদন করেছেন। অধিনায়কের এমন আর্জিতে কিছুটা বিপাকে রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ সাল থেকে রাজস্থানের হয়ে আইপিএল খেলছেন সঞ্জু। ২০১৬ এবং ২০১৭ মরসুমে খেলেন দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের (দিল্লি ক্যাপিটালসের আগের নাম) হয়ে। ওই দু’বছর রাজস্থানকে আইপিএল থেকে নিলম্বিত (সাসপেন্ড) করেছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)। ২০১৮ সালে রাজস্থান আইপিএলে ফিরে আসার পর সঞ্জুও ফিরে আসেন পুরনো দলে। ২০২১ সাল থেকে তিনিই অধিনায়ক। গত বছর আইপিএলের সময় তাঁর সঙ্গে রাজস্থান কর্তৃপক্ষের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল বলে শোনা গিয়েছিল। সেই দূরত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সূত্রের খবর। গত আইপিএলের সময় কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের সঙ্গেও তাঁর মতবিরোধের কথা শোনা গিয়েছিল। সেই কারণেই সঞ্জু আর রাজস্থানের হয়ে আইপিএল খেলতে চাইছেন না। যদিও তাঁর আইপিএল ভাগ্য সম্পূর্ণ রাজস্থান কর্তৃপক্ষের হাতে।
ক্রিকেট সংক্রান্ত একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আইপিএলের পরই কর্তৃপক্ষকে দল ছাড়ার ইচ্ছার কথা জানান সঞ্জু। গত জুন মাসে রাজস্থানের রিভিউ বৈঠকে সঞ্জুর দল ছাড়তে চাওয়ার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন কোচ দ্রাবিড়, টিম ডিরেক্টর কুমার সাঙ্গাকারা এবং দলের কর্ণধার মনোজ বাদালে।
আইপিএলের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি চক্রের শুরুতে (পূর্ণ নিলামের বছর) ক্রিকেটারদের সঙ্গে দলগুলির তিন বছরের চুক্তি হয়। এর ফলে ক্রিকেটারেরা এক তরফা ভাবে দল ছাড়তে পারেন না। গত পূর্ণ নিলামের আগে সঞ্জুকে সর্বোচ্চ ১৮ কোটি টাকা দিয়ে ধরে রেখেছিলেন রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। ২০২৭ সাল পর্যন্ত তাঁর এই টাকায় রাজস্থানের হয়ে খেলার কথা। তবে দল কর্তৃপক্ষ চাইলে কোনও ক্রিকেটারকে পরবর্তী নিলামের আগে ছেড়ে দিতে পারেন বা অন্য দলের কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন। সঞ্জুর ব্যাপারে এখন কোনও সিদ্ধান্ত নেননি রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। সূত্রের খবর, আইপিএলের অন্য কোনও দল সঞ্জুকে কিনতে চেয়ে সরাসরি যোগাযোগ করলে ভেবে দেখতে পারেন রাজস্থান কর্তৃপক্ষ। সঞ্জুর বিকল্প উইকেটরক্ষক-ব্যাটার পাওয়া কঠিন বলেই ধীরে চলো নীতি নিয়েছেন তাঁরা। যদিও দলে রয়েছেন ২৪ বছরের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ধ্রুব জুরেল।
একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সঞ্জুকে পেতে অন্তত দুই দল আগ্রহী। চেন্নাই সুপার কিংস এবং কলকাতা নাইট রাইডার্স। মহেন্দ্র সিংহ ধোনির বিকল্প হিসাবে সঞ্জুর কথা ভেবেছেন চেন্নাই কর্তৃপক্ষ। ওপেনিং এবং নেতৃত্ব নিয়ে সমস্যায় থাকা কেকেআর কর্তৃপক্ষ এক ঢিলে তিন পাখি মারতে চাইছেন। সঞ্জুকে পেলে ওপেনার, অধিনায়ক এবং প্রথম সারির ভারতীয় উইকেটরক্ষকের সমস্যা মিটবে। উল্লেখ্য, ২০১২ সালে কেকেআরের হয়েই সঞ্জুর আইপিএল জীবন শুরু। ওই সংবাদমাধ্যমের দাবি, রাজস্থান কর্তৃপক্ষ চেন্নাইয়ের কাছে সঞ্জুকে বিক্রি করে দিতে পারেন। পরিবর্তে নিজেদের পছন্দ মতো চেন্নাইয়ের দু’জন ক্রিকেটারকে দলে চান তাঁরা।
জল্পনা আরও বৃদ্ধি করেছে সমাজমাধ্যমে রাজস্থান কর্তৃপক্ষের একটি পোস্ট। তাতে জুরেলের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। ভারতের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটের জার্সি পরে রয়েছেন জুরেল। ছবির শিরোনামে লেখা হয়েছে, ‘‘অধিনায়ক জুরেল’’। সঙ্গে লেখা হয়েছে, ‘‘এক জন থাকবে, যা স্টাম্পের পিছন থেকে খেলা বদলে দেবে।’’ বৃহস্পতিবার দলীপ ট্রফির জন্য দল ঘোষণা করেছে মধ্যাঞ্চল। সেই দলের অধিনায়ক হয়েছেন জুরেল। ক্রিকেট মহলের একাংশ মনে করছেন, সঞ্জু বিদায়ের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতও রয়েছে রাজস্থানের এই পোস্টে।