T20 World Cup 2022

ভারত-পাক ফাইনাল এক ম্যাচ দূরে, ১৩ বছর পরে বিশ্বসেরা হওয়ার চূড়ান্ত লড়াইয়ে বাবরের দেশ

১৩ বছর পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল পাকিস্তান। বুধবার সিডনিতে প্রথম সেমিফাইনালে নিউজ়িল্যান্ডকে ৭ উইকেটে হারাল তারা। বাবর আজম এবং মহম্মদ রিজ়ওয়ান জেতালেন দলকে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০২২ ১৬:৫৭
Share:

বাবর-রিজ়ওয়ানের দাপটে নিউজ়িল্যান্ডকে উড়িয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তান। ফাইল ছবি

এক সময় সেমিফাইনালে ওঠাই অনিশ্চিত ছিল তাদের। সেই পাকিস্তানই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল নিউজ়‌িল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে। বুধবার সিডনিতে প্রথম সেমিফাইনালে কেন উইলিয়ামসনের দল হারল ৭ উইকেটে। প্রথমে ব্যাট করে নিউজ়িল্যান্ড ৪ উইকেট হারিয়ে ১৫২ রান তোলে। ড্যারিল মিচেল অর্ধশতরান করেন। জবাবে মহম্মদ রিজ়‌ওয়ান এবং বাবর আজ়মের জোড়া অর্ধশতরানের সৌজন্যে ৭ উইকেট বাকি থাকতে জয়ের প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় পাকিস্তান।

Advertisement

২০০৭-এর পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত-পাকিস্তান লড়াইয়ের মঞ্চ তৈরি হয়ে গেল। নিউজ়িল্যান্ডকে হারিয়ে মেলবোর্নের টিকিট নিশ্চিত করে ফেলল বাবর আজমের দল। বৃহস্পতিবার ভারত অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডকে হারাতে পারলে রবিবার মেলবোর্নে ধুন্ধুমার লড়াই হতে চলেছে। রোহিত শর্মার দল যে বাড়তি তাগিদ নিয়ে নামবে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

ভারত যদি ফাইনালে ওঠে তা হলে তাদের জন্য বড় চিন্তা হতে চলেছে বাবরের ছন্দে ফেরা। চলতি প্রতিযোগিতায় একেবারেই রান পাচ্ছিলেন না বাবর। যে কারণে দলকেও বার বার ভুগতে হচ্ছিল। ওপেনিং জুটিতে কোনও ম্যাচেই বড় রান ওঠেনি। মহম্মদ রিজ়ওয়ান তবু দু’-একটি ম্যাচে ভাল খেলেন। কিন্তু বাবরের ব্যাটে রান আসছিল না। সেই অভাব মিটল বুধবার। আসল ম্যাচেই জ্বলে উঠলেন পাকিস্তানের অধিনায়ক। এক সময় ১০ উইকেটে জেতার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল। তা অবশ্য হয়নি বাবর অতিরিক্ত মারতে যাওয়ায়।

Advertisement

টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন কেন উইলিয়ামসন। বল করতে নেমে প্রথম ওভারেই নিউজ়িল্যান্ডকে ধাক্কা দেয় পাকিস্তান। চতুর্থ বলেই ফিরে যান দলের ওপেনার ফিন অ্যালেন। ঘাতক হিসাবে দেখা দিলেন সেই শাহিন আফ্রিদি। তাঁর সোজাসুজি নেমে আসা বল আড়াআড়ি ভাবে খেলতে গিয়েছিলেন অ্যালেন। লাইন ফস্কান এবং সোজা এলবিডব্লিউ। প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিউজ়িল্যান্ডের ইনিংসকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ডেভন কনওয়ে এবং কেন উইলিয়ামসন। সেখানেও বাধা পেতে হয়। শাদাব খানের দুর্দান্ত থ্রোয়ে ২১ রানেই ফিরে যান কনওয়ে। গত বিশ্বকাপে তিনি চোটের কারণে খেলতে পারেননি। এ বার আসল ম্যাচে ব্যর্থ। ঝাঁপিয়ে পড়লে রান আউট হওয়ার হাত থেকে বাঁচতে পারতেন। সেটা দেখা যায়নি।

প্রতিযোগিতায় শতরান করা গ্লেন ফিলিপস খেলতে নেমেছিলেন কনওয়ের পর। তিনিও ব্যর্থ। মহম্মদ নওয়াজ়‌ের আপাত নিরীহ বলে তাঁর হাতেই ক্যাচ দিয়ে দিলেন। তার পরেও নিউজ়িল্যান্ড যে লড়াই করার মতো জায়গায় পৌঁছল, তার পিছনে রয়েছে উইলিয়ামসন এবং ড্যারিল মিচেলের ইনিংস। কেন মিচেলকে দলে নেওয়ার জন্য এত তাড়াহুড়ো করছিল কিউয়িরা, তা এই ম্যাচে বোঝা গেল। আগের বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অর্ধশতরান করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। এ বারও মূল্যবান ইনিংস খেললেন তিনি। তবে দলকে জেতাতে পারলেন না। দ্বিতীয় স্পেলে বল করতে এসে নিউজ়িল্যান্ডকে আবার ঝটকা দিলেন শাহিন। তুলে নিলেন কিউয়ি অধিনায়ককে। মিচেল (অপরাজিত ৫৩) এবং জিমি নিশামের (অপরাজিত ১৬) সৌজন্যে চার উইকেটে ১৫২ রান তোলে নিউজ়‌িল্যান্ড।

সিডনির এই পিচ কিছুটা ধীরগতির থাকায় লক্ষ্যমাত্রা যে খুব কম ছিল তা বলা যাবে না। কিন্তু নিউজ়িল্যান্ড বোলারদের স্কুলছাত্রের পর্যায়ে নামিয়ে আনলেন পাকিস্তানের ওপেনার। অনেক দিন ধরে রিজ়ওয়ান এবং বাবরের ছন্দ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। ওপেনিং জুটিতে বিশ্বকাপের আগে পর্যন্ত ভাল খেলেছেন তাঁরা। কিন্তু বিশ্বকাপ থেকে বাবর একেবারেই ছন্দে ছিলেন না। তবু রিজ়‌ওয়ান দু’-একটি ম্যাচে রান করেছেন। আসল ম্যাচেই এই দু’জনে জ্বলে উঠলেন।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

নিউজ়িল্যান্ডের বোলিং বিভাগ যে কোনও দলের কাছে আতঙ্কের। ট্রেন্ট বোল্ট, টিম সাউদি, লকি ফার্গুসন, নিশাম, ইশ সোধি, মিচেল স্যান্টনার — বোলারের কোনও অভাব নেই। কাকে ছেড়ে কাকে বল করাবেন সেটা নিয়ে উইলিয়ামসনকে ভাবতে হয়। কিন্তু বুধবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনও বোলারেরই জারিজুরি খাটল না। যে-ই সামনে আসছিলেন উড়ে যাচ্ছিলেন। পাওয়ার প্লে-তে ৫৫ রান তুলে ফেলে পাকিস্তান, এই প্রতিযোগিতায় যা তাদের সর্বোচ্চ। তার পরেও দু’জনের থামার কোনও লক্ষণ দেখা যায়নি।

স্পিনার আসার পর রানের গতি সাময়িক কমে। তার মাঝেই অর্ধশতরান করে ফেলেন বাবর। ফাইনালে নামার আগে বিরাট আত্মবিশ্বাস জোগাবে তাঁর এই ইনিংস। তবে শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে থাকতে পারলেন না তিনি। ১৩তম ওভারে বোল্টের বলে মারতে গিয়ে মিচেলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন। তত ক্ষণে তাঁর নামের পাশে ৫৩ রান। দলও অনেক ভাল জায়গায়।

কিছু ক্ষণ পরে অর্ধশতরান করে ফেললেন রিজ়ওয়ানও। শেষ দিকে এসে ব্যক্তিগত ৫৭ রানে তিনি ফিরে গেলেও বাকি যাঁরা ছিলেন তাঁদের দলকে জেতাতে সমস্যা হয়নি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন