ইডেনে আউট হয়ে ফিরে যাচ্ছে বৈভব সূর্যবংশী। ছবি: রয়টার্স।
বৈভব সূর্যবংশীর হয়েছে কী? গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে ৩৫ বলে শতরান করে নজর কেড়েছিল সে। আইপিএলে আবির্ভাব হয়েছিল এক তারকার। ১৪ বছরের বৈভবের ব্যাটিং অবাক করেছিল সকলকে। পরের ম্যাচগুলিতেও নজর ছিল বৈভবের দিকে। কিন্তু পরের দুই ম্যাচে ব্যর্থ সে। প্রথমে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স ও পরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিরুদ্ধে দু’বলের বেশি খেলতে পারেনি এই বাঁহাতি ব্যাটার। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে করেছে শূন্য রান। কলকাতার বিরুদ্ধে প্রথম বলে চার মারলেও পরের বলে উইকেট হারাতে হয়েছে। কোথায় সমস্যা হচ্ছে বৈভবের? তার দুর্বলতা কি ধরে ফেলেছেন বোলারেরা?
বৈভবের দুর্বলতা নিয়ে মুখ খুলেছেন দীপক চহর
মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে চহরের বলে আউট হয়েছে বৈভব। তার শরীর লক্ষ্য করে বল করেছিলেন চহর। বলের গতি ছিল কম। বৈভব তা বুঝতে পারেনি। সে পুল মারতে যায়। কিন্তু ব্যাটে-বলে হয়নি। মিড অনে ক্যাচ দিয়ে ফেরে বৈভব। ম্যাচ শেষে সে বিষয়ে মুখও খোলেন চহর। তিনি বলেন, “গুজরাতের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত একটা ইনিংস খেলেছিল বৈভব। প্রতিটা ব্যাটারের খেলার একটা ধরন থাকে। কোনও জায়গায় সে খুব শক্তিশালী হয়, কোথাও দুর্বল। বোলার হিসাবে আমার দায়িত্ব দুর্বল জায়গাটা খুঁজে বার করা। আমরা সব ব্যাটারের জন্যই সেই পরিকল্পনা করি। কখনও সেটা কাজে লাগে, কখনও লাগে না। এই ম্যাচে কাজে লেগেছে।” বৈভবের কী দুর্বলতা তা না জানালেও চহরের কথা থেকে স্পষ্ট, সেই দুর্বলতা কাজে লাগিয়েই তাকে আউট করেছেন মুম্বইয়ের পেসার।
কলকাতার বিরুদ্ধে একই শট খেলতে গিয়ে আউট বৈভব
মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে পুল শট ডুবিয়েছিল বৈভবকে। সেই একই ধরনের শট খেলতে গিয়ে ইডেনেও আউট হয়েছে সে। বৈভব অরোরার প্রথম বলে কভার দিয়ে যে চার সে মেরেছিল তা মনে করিয়ে দিয়েছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। কিন্তু পরের বলেই আবার একই ভুল করল সে। কেকেআরের বৈভব বল করেছিল রাজস্থানের বৈভবের শরীর লক্ষ্য করে। আরও এক বার পুল শট মারতে চায় সে। ব্যাটে-বলে হয়নি। বল অনেকটা হাওয়ায় ওঠে। মিড অনে দাঁড়িয়ে থাকা অজিঙ্ক রাহানে পিছন দিকে অনেকটা দৌড়ে ভাল ক্যাচ ধরেন। আরও এক বার হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় বৈভবকে। তার চোখমুখ বুঝিয়ে দিচ্ছিল, কতটা হতাশ সে।
প্রতি বলে ছক্কা মারার প্রবণতা ভোগাচ্ছে বৈভবকে
১৪ বছরে নিজের জাত চিনিয়েছে বৈভব। উইকেটের সব দিকে বড় শট মারার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে তার। কিন্তু বৈভবের সমস্যা প্রতি বলে শট মারার প্রবণতা। বোলার যেখানেই বল করুক না কেন, সে ব্যাট চালায়। শুধু ম্যাচে নয়, অনুশীলনেও একই কাজ করে সে। রবিবার ইডেনে ম্যাচের আগে শনিবার অনুশীলনেও প্রতিটা বলে ব্যাট চালাচ্ছিল বৈভব। যেগুলো লাগছিল, গিয়ে পড়ছিল গ্যালারিতে। কিন্তু অনেক বল মিস্ও হচ্ছিল। ম্যাচে সেই মিস্ তার উইকেট পতনের কারণ হতে পারে। সেটাই হয়েছে।
৩৫ বলে শতরান করার আগের ম্যাচে রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর বিরুদ্ধে ১২ বলে ১৬ রান করেছিল বৈভব। ১২ বলের প্রতিটিতেই ব্যাট চালিয়েছিল সে। তার মধ্যে দু’টি বল লেগেছিল। সেই দু’টি গ্যালারিতে গিয়ে পড়ে। বাকিগুলো লাগেনি। যে পিচ কিছুটা শক্ত, সেখানে যে প্রতি বলে বড় শট মারার যায় না সেটা শিখতে হবে বৈভবকে। না হলে বোলারেরা তাকে বার বার সমস্যায় ফেলবে। প্রতি বলে বড় শট মারার প্রবণতার খেসারত দিতে হচ্ছে তাকে।
এখনও শিক্ষা বাকি ১৪ বছরের ব্যাটারের
আইপিএলে বিশ্বের সেরা বোলারেরা খেলেন। প্রতিটি ম্যাচের আগে ব্যাটারদের দুর্বলতা খতিয়ে দেখেন তাঁরা। তার জন্য বিশেষজ্ঞ থাকে প্রতি দলে। প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের দুর্বলতা অনুযায়ী বল করার চেষ্টা করেন তাঁরা। বৈভব আইপিএলের এই ছোট কেরিয়ারে যা করে দেখিয়েছে তাতে ওকে নিয়েও পরিকল্পনা করা শুরু করেছেন বোলারেরা। চহরের কথা থেকে তা স্পষ্ট। তাই প্রতিটি বল যে বৈভব মারার জায়গায় পাবে না সেটা ওকে বুঝতে হবে। উইকেটে সময় দিতে হবে। খারাপ বলের জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এক বার থিতু হয়ে যাওয়ার পর মারার বল সে অবশ্যই পাবে। সেটা যত তাড়াতাড়ি বৈভব বুঝবে তত ভাল। বৈভবের বয়স এখন মাত্র ১৪ বছর। এখনও শেখার অনেক সুযোগ সে পাবে। তবে কত বার ব্যর্থ হওয়ার সুযোগ বৈভব পাবে সেটাও তাকে ভাবতে হবে। গোটা দুনিয়ার নজর রয়েছে ১৪ বছরের ক্রিকেটারের কাঁধে। সেই চাপ সামলাতে হবে বিহারের ছেলেকে।