রোনাল্ডোর রেকর্ডের দিনে আট গোল দিল বেলজিয়াম

লিওনেল মেসির মতো তাঁর পাঁচটা ব্যালন ডি’অর নেই। প্রশংসার থেকেও বেশি তাঁকে সমালোচনা শুনতে হয়। ফুটবলবিশ্বের চোখে তিনি সেই ‘ফ্লড জিনিয়াস’। যাঁর হিংসুটে স্বভাব যাবতীয় প্রতিভার উপর ছাপ ফেলে দেয়। কিন্তু যখন গোল-রেকর্ডের প্রসঙ্গ আসছে, তাঁকে কেউ অগ্রাহ্য করতে পারবে না।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৬ ০৪:৪৯
Share:

জোড়া গোলের সেলিব্রেশন। ছবি: রয়টার্স

লিওনেল মেসির মতো তাঁর পাঁচটা ব্যালন ডি’অর নেই।

Advertisement

প্রশংসার থেকেও বেশি তাঁকে সমালোচনা শুনতে হয়।

ফুটবলবিশ্বের চোখে তিনি সেই ‘ফ্লড জিনিয়াস’। যাঁর হিংসুটে স্বভাব যাবতীয় প্রতিভার উপর ছাপ ফেলে দেয়।

Advertisement

কিন্তু যখন গোল-রেকর্ডের প্রসঙ্গ আসছে, তাঁকে কেউ অগ্রাহ্য করতে পারবে না। হতে পারে তিনি সতীর্থদের গোলে সেলিব্রেট করেন না। কিন্তু তাঁর ডিএনএ-তেই যে রয়েছে গোল! যিনি মাঠে নামা মানেই নব্বই মিনিট শেষে এক টুকরো ইতিহাস পকেটে নিয়ে ফিরবেন। তিনি— ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।

রবিবার রাতেও সিআর সেভেন আসলেন। দেখলেন। মাঠে নামলেন। নতুন রেকর্ড গড়ে মাঠ ছাড়লেন। সেই এক সেলিব্রেশন। সেই এক শিরোনাম। ২০১৮ রাশিয়া যোগ্যতা অর্জন পর্বে লাটভিয়া-কে ৪-১ হারাল পর্তুগাল। যে ম্যাচে জোড়া গোল করে আর এক পালক নিজেদের রেকর্ডের টুপিতে জুড়লেন সিআর সেভেন। এই মুহূর্তে যাঁরা আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলছে তাঁদের মধ্যে সর্বোচ্চ গোল করার নজির গড়লেন পর্তুগালের গোলমেশিন। আয়্যারল্যান্ডের রবি কিনের সঙ্গে যুগ্মভাবে দেশের হয়ে ৬৮ গোল করে।

সিআর-এর রেকর্ডের রাতেও এক সময় অপ্রত্যাশিত ড্র-য়ের দিকে এগোচ্ছিল পর্তুগাল। প্রথমার্ধে রোনাল্ডোর করা গোলের জবাবে ৬৭ মিনিটে জুজিনস ১-১ করেন। কিন্তু রিজার্ভ থেকে রিকার্ডো কোয়ারেসমা নেমে গোটা ম্যাচের ছবি পাল্টে দেন। তাঁর বাড়ানো পাস থেকে উইলিয়াম কারভালহো ও নিজের দ্বিতীয় গোল করেন রোনাল্ডো। ম্যাচের শেষলগ্নে ব্রুনো আলভেজের গোলে তিন পয়েন্ট পায় পর্তুগাল। ম্যাচ শেষে তাই দলকে এক রকম সতর্ক করে দিয়েছেন পর্তুগাল কোচ ফের্নান্দো সান্তোস। বলছেন, ‘‘আমরা নিজেদের জন্য সমস্যা ডেকে আনছি। প্রথমার্ধে সুযোগ আরও কাজে লাগানো উচিত ছিল। আমাদের দলে সেই ঝাঁঝটার অভাব ছিল। বিরতির সময় ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাই তো দ্বিতীয়ার্ধে আরও স্পিডি ফুটবল খেলেছি। আর জয়টাও পেয়েছি।’’

দু’গোল করে ফের ত্রাতা দলের সাত নম্বর। কিন্তু রোনাল্ডো নয়, কোচের মতে, ম্যাচের নায়ক কোয়ারেসমা। যাঁর পচিশ মিনিটের ক্যামিও পর্তুগালকে তিন পয়েন্ট এনে দিল। ‘‘কোয়ারেসমা দারুণ খেলেছে। দুটো ভাল পাস বাড়িয়েছে।’’

চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মেসির জন্য যেখানে রাশিয়া যাওয়ার রাস্তা আরও দুর্গম হয়ে উঠছে, রোনাল্ডোর পর্তুগাল অবশ্য নিজেদের গ্রুপ টেবলের দু’নম্বরে বসে রয়েছে।

তবে পর্তুগাল ও রোনাল্ডোর রেকর্ডও ছাপিয়ে গেল বেলজিয়াম। আট গোল দিয়ে সমালোচকদের মুখ বন্ধ করল রেড ডেভিলসরা। এস্টোনিয়াকে ৮-১ হারাল বেলজিয়াম। গোলের তালিকায় ছিলেন এডেন হ্যাজার্ড, ড্রিস মার্টেন্স(২), ইয়ানিক কারাস্কো, মিউনিয়ার, ক্লাভান(আত্মঘাতী) ও রোমেলু লুকাকু (২)।

ইউরোয় খারাপ পারফরম্যান্সের পরে মার্ক উইলমটস-কে সরিয়ে কোচ করা হয় রবের্তো মার্তিনেজকে। বেলজিয়ামের হটসিটে বসে কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি স্প্যানিশ কোচকে। শোনা যায়, বেলজিয়াম ড্রেসিংরুম নাকি কোচ বনাম ফুটবলারদের ঝামেলায় জর্জরিত। কিন্তু রবিবার রাতে আবার যেন সেই আক্রমণাত্মক বেলজিয়ামের পূনর্জন্ম হল। অন্তত লুকাকু তাই মনে করছেন। এভার্টন স্ট্রাইকার বলছেন, ‘‘দারুণ লাগছে এ রকম আক্রমণাত্মক ছকে খেলতে। কোচের এই স্ট্র্যাটেজিতে আমরা আরও বেশি আক্রমণে যেতে পারছি। আজ আট গোল দিয়েছে বেলজিয়াম। এর থেকে ভাল আর কী হতে পারে।’’ বেলজিয়াম কোচ রবের্তো মার্তিনেজও বলছেন, ‘‘আমি এখানে স্পেশ্যাল কিছু করতে চাই। সেই চেষ্টাতে আছি। আমি তো সেই কারিগর। যার কাজ ভাল কিছু একটা তৈরি করা।’’

আট গোল দিলেও বেলজিয়ামের চিন্তা হয়ে দাঁড়াল এডেন হ্যাজার্ডের ফিটনেস। ম্যাচের শেষ দিকে যিনি পেশিতে সমস্যা অনুভব করে মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন।

রবিবার রাত আবার সাক্ষী থাকল ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে অভিনব লাল কার্ডের। ঘটনার প্রেক্ষাপট বসনিয়া অ্যান্ড হার্জেগোভিনা বনাম গ্রিস ম্যাচ। শেষমেশ যা ১-১ ড্র হয়। কিন্তু এই নিষ্প্রাণ ড্রয়েও চমকের মুহূর্তটা দিয়ে গেলেন বসনিয়ার এডিন জেকো। বিপক্ষ ডিফেন্ডার পাপাস্থুপুলোসের শর্টস টেনে খুলে দেন জেকো। সঙ্গে সঙ্গে রেফারি তাঁকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ ছাড়তে বলেন। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট যে ঘটনার মধ্যে ঠাট্টা খুঁজে পেলেও জেকো বলছেন, ‘‘আমি বুঝতে পারলাম না কেন রেফারি আমায় লাল কার্ড দেখাল। অফিসিয়ালের মতে আমি নাকি প্রথম ঝগড়া শুরু করি। কিন্তু তখন আমি মাটিতে পড়েছিলাম।’’ ম্যাচ ড্র হলেও প্রাক্তন ম্যান সিটি স্ট্রাইকার যোগ করেন, ‘‘গ্রিস শেষ মুহূর্তে গোল করল ঠিকই কিন্তু আমাদের জেতা উচিত ছিল ম্যাচটা।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন