মহমেডান জার্সি গায়ে এ বার কলকাতা প্রিমিয়ার লিগে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল—দুই বড় দলকেই রিজার্ভ বেঞ্চে বসে দেখেছি। শুধু তাই নয়। মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল গোটা তিনটেক ম্যাচে লিগ সম্প্রচারকারী সংস্থার স্টুডিওতে বসে বিশ্লেষণও করতে হয়েছে। ফলে দুই প্রধানের কে কোন জায়গায় এগিয়ে সে সম্পর্কে একটা ধারণা পেয়েছি। আনন্দবাজার-এর পাঠকদের সঙ্গে বড় ম্যাচের আগে তা ভাগ করে নিলাম।
গোল: রবিবার দুই বড় দলের গোলরক্ষার দায়িত্বে মোহনবাগানে শিল্টন পাল এবং ইস্টবেঙ্গলে লুইস ব্যারেটো-কেই দেখছি।
ইস্টবেঙ্গল গোলকিপারের চেয়ে শিল্টন বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতায় এগিয়ে। ওর আউটিং-ও বেশ ভাল। কিন্তু শিল্টনের বড় সমস্যা রিফ্লেক্স। ফলে বক্সের সামনে থেকে আমনারা জোরালো ভলি মারলে বা ফ্রি-কিক নিলে শিল্টন সমস্যার পড়তে পারে।
অন্য দিকে ইস্টবেঙ্গল গোলকিপার লুইস ব্যারেটো মাটি ঘেঁসে আসা বল যত সাবলীল ভাবে ধরে, ততটা সাবলীল নয় শূন্যের বলে। কারণ ওর আউটিং ভাল নয়। কিন্তু ব্যারেটোর সুবিধা হল, মোহনবাগান গোলের জন্য যাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে, তার মধ্যে কামো-ক্রোমা, আজহার, লিংডোদের উচ্চতা খুব একটা বেশি নয়। ফলে আউটিং নিয়ে ওর ঝামেলা নাও হতে পারে। এই মুহূর্তে ভাল ফর্মেও রয়েছে ব্যারেটো। মহমেডান ম্যাচে আমাদের মহমেডান যখন চেপে ধরেছিল ইস্টবেঙ্গলকে সেই সময় দু’টো অসাধারণ গোল বাঁচিয়ে ইস্টবেঙ্গলের হার বাঁচিয়েছিল ও।
তবে বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতার জন্যই গোলরক্ষক বিভাগে আমি এগিয়ে রাখছি মোহনবাগানকেই।
রক্ষণ: মোহনবাগানে খুব সম্ভবত চার ব্যাক হতে চলেছে রিকি, কিংগসলে, কিংশুক। রাইট ব্যাকের জায়গায় সম্ভবত, অরিজিৎ বাগ। না হলে দেবব্রত রায়, অভিষেক দাসের মধ্যে কেউ একজন খেলতে পারে।
সেখানে ইস্টবেঙ্গলে হয়তো সামাদ আলি মল্লিক, অর্ণব মণ্ডল, কার্লাইল ডিওন মিচেল ও লালরাম চুলোভা।
এই দুই রক্ষণের মধ্যে প্রথমে আসি রাইট ব্যাকে। ইস্টবেঙ্গল রাইট ব্যাক সামাদ কলকাতা লিগে দারুণ খেলছে। ওর ট্যাকলের সময়জ্ঞান বেশ ভাল ওভারল্যাপে গিয়ে ভাল ক্রস ভাসিয়ে দেয়। য়ে জায়গায় অরিজিৎ ওভারল্যাপে গেলে নামতে সময় নিচ্ছে। বিকল্প হিসেবে অভিষেক বা দেবব্রতর বড় ম্যাচের অভিজ্ঞতা থাকলেও এ বারের কলকাতা লিগে এখনও সে ভাবে পরীক্ষিত নয়। ফলে এই জায়গায় ইস্টবেঙ্গল এগিয়ে।
দু’দলের সেন্ট্রাল ডিফেন্ডারদের মধ্যে অবশ্য কিংশুক-কিংগসলে অনেক জমাট অর্ণব-মিচেল-এর চেয়ে। মোহনবাগানের দুই স্টপারের অনুমানক্ষমতা, বল বিপন্মুক্ত করার প্রয়াস ইস্টবেঙ্গলের চেয়ে ভাল। কারণ ইস্টবেঙ্গলের দুই স্টপারের মধ্যে দূরত্ব অনেক সময় বেড়ে যাচ্ছে। যার ফলে সুবিধা হয়েছে বিপক্ষের।
লেফট ব্যাকে ইস্টবেঙ্গলের লালরাম চুল্লোভা এবং মোহনবাগানের রিকি-র মধ্যে আমি চুল্লোভাকেই এগিয়ে রাখব। ছেলেটা উঠে-নেমে খেলে। ট্যাকল ভাল। দ্বিতীয়ত: আই লিগ জয়ী দল থেকে আসায় অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেখানে রিকি পরীক্ষিত নয়।
সব মিলিয়ে সবুজ-মেরুন ও লাল-হলুদ রক্ষণ তুল্যমূল্য বিচারে একই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে প্রায়।
মাঝমাঠ: ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠের দুই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার মহম্মনদ আল-আমনা এবং রফিক কিন্তু পারফরম্যান্সের বিচারে মোহনবাগানের সুরচন্দ্র সিংহ এবং রেনিয়ার ফার্নান্দেজের চেয়ে অনেক এগিয়ে। রফিকের বড় ম্যাচের টেম্পারামেন্ট অসাধারণ। আর আমনা তো এ বারের কলকাতা লিগের সেরা ফুটবলার। ইস্টবেঙ্গল টিমটাকে রিমোটে ও-ই চালনা করে। আর রোমিং মিডফিল্ডার হওয়ায় ওকে মার্ক করাও কষ্টকর। সেখানে মোহনবাগানে রেইনার ভাল। কিন্তু ও বা সুরচন্দ্রের বল বাড়ানোর সেই দক্ষতা নেই। বল ছাড়তে রেইনার অনেক সময় দেরি করে ফেলে।
দু’দলের উইঙ্গারের মধ্যে আবার ইস্টবেঙ্গলের ব্রেন্ডন বেশ পরিশ্রমী। কিন্তু এই জায়গায় মোহনবাগানের আজহারউদ্দিন মল্লিক ও চেস্টারপল লিংডো অনেক কার্যকরী। তবে লিংডো ইদানীং প্রান্ত বরাবর এগিয়ে ক্রস তোলার বদলে মাঝমাঠে বল ধরেই বক্সের দিকে কোনাকুনি ঢুকে আসছে। এটা ওকে বন্ধ করতে হবে।
তবে যাই হোক। একা আমনার জন্যই মাঝমাঠে আমি এগিয়ে রাখছি ইস্টবেঙ্গলকে।
আক্রমণ:এই জায়গায় মোহনবাগান কামো-ক্রোমার জন্য কিছুটা ঝলমলে। দু’জনের গোলের খিদে রয়েছে। শট ভাল। সাপোর্টিং-টাও বেশ। কিন্তু স্বার্থপর ফুটবল খেলার প্রবণতাও রয়েছে।
অন্য দিকে ইস্টবেঙ্গলে প্লাজার কিন্তু গতি, ড্রিবল, শুটিং বেশ ভাল। পর পর কয়েকটা ম্যাচে গোলের মধ্যে থাকায় আত্মবিশ্বাসও তুঙ্গে। ফলে বড় ম্যাচে প্লাজা বিপজ্জনক হতেই পারে। কিন্তু আক্রমণে কামোর য়খন সঙ্গী রয়েছে, তখন প্লাজার সঙ্গী কতটা কার্যকরী হবে তা দেখার অপেক্ষাতেই থাকব।
তবে আক্রমণে দুই দলের শক্তি বিশ্লেষণ করলে আমি মোহনবাগানেকেই এগিয়ে রাখছি।