জয় দিয়ে আমার দুই প্রিয় দল আই লিগে অভিযান শুরু করবে আশা করে টেলিভিশনের সামনে বসেছিলাম। ইম্ফলে নেরোকা এফসি-কে হারিয়ে ইস্টবেঙ্গলের দুরন্ত জয় তুলে নিলেও হতাশ করল মোহনবাগান।
প্রথম ম্যাচে দুই প্রধানকে দেখে আমার মনে হয়েছে, ইস্টবেঙ্গল দল গড়েছে অনেক পরিকল্পনা করে। ভাল দল গড়ার প্রথম শর্তই হচ্ছে রক্ষণ শক্তিশালী করা। লাল-হলুদের নতুন স্প্যানিশ কোচ আলেসান্দ্রো মেনেন্দেস রক্ষণে জনি আকোস্তার সঙ্গে খেলিয়েছেন বোরখা গোমেস পেরেসকে। নেরোকার বিরুদ্ধেও জনিকে খুব একটা আহামরি লাগেনি। কিন্তু অভিষেক ম্যাচে বোরখা অসাধারণ খেলল।
মোহনবাগানের রক্ষণই সব চেয়ে দুর্বল। এজে কিংসলের পাশে এক জন বড় চেহারার বিদেশি স্টপার থাকলে হয়তো শনিবার গোকুলম এফসি-র বিরুদ্ধে ড্র করত না মোহনবাগান। আমার তো ম্যাচটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, আই লিগের ডার্বিতেও সমস্যায় পড়বে ওরা। রোজ গোলরক্ষক শঙ্কর রায় বাঁচাবে না। দ্বিতীয়ত, ইস্টবেঙ্গলের হয়ে এনরিকে এসকুয়েদার মতো সুযোগসন্ধানী স্ট্রাইকার খেলবে।
লাল-হলুদ জার্সিতে অভিষেক ম্যাচেই জোড়া গোল করেছে ২০০৫ সালে অনূর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন মেক্সিকো জাতীয় দলের সদস্য এনরিকে। প্রায় ছ’মাস ম্যাচের মধ্যে ছিল না ও। তাই হয়তো স্ট্রাইকারসূলভ ক্ষিপ্রতা ও গতি একটু কমে গিয়েছে ওর। কিন্তু এনরিকে যে বড় মাপের ফুটবলার তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। প্রথম গোলটার কথা মনে করুন। ১০ মিনিটে বক্সের মধ্যে বল বুকে রিসিভ করেই গোলপোস্টের কোন দিয়ে জালে জড়িয়ে দেয়। ৪৮ মিনিটে দ্বিতীয় গোল করল পেনাল্টি থেকে ঠান্ডা মাথায়। ওর জন্যই নতুন অ্যাওয়ে জার্সিতে ইস্টবেঙ্গলকে আরও ঝলমলে দেখাল। তবে আমার মনে হয়, পাশে এক জন ভাল মানের স্ট্রাইকার থাকলে আরও খোলা মনে খেলতে পারবে এনরিকে।
প্রথম ম্যাচে মোহনবাগানের নতুন মিডফিল্ডার ওমর এলহুসেইনি কেমন খেলে তা নিয়েও প্রবল আগ্রহ ছিল। ওর প্রথম দিনের পারফরম্যান্স একেবারেই উচ্ছ্বসিত হওয়ার মতো নয়। কোচ শঙ্করলাল তো ওকে ৭৩ মিনিটে তুলেই নিল।
অবশ্য ইস্টবেঙ্গলেরও মাঝমাঠের ফুটবলারেরা নজর কাড়তে পারেনি এ দিন। তার প্রধান কারণ মহম্মদ আল আমনার না খেলা। ও পুরো দলটাকে খেলায়। এ দিন আমনার অভাবটা বারবার চোখে পড়ছিল।
মোহনবাগানে আমনার মতো কোনও মিডফিল্ডার নেই যে খেলাটা তৈরি করে। পিন্টু মাহাতো, সৌরভ দাস দারুণ প্রতিশ্রুতিমান। কিন্তু মাঝমাঠে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ক্ষমতা এখনও হয়নি। সনি নর্দে ফিরলে হয়তো ছবিটা বদলাবে।
প্রথম ম্যাচের আগে অনেকেই এগিয়ে রেখেছিলেন মোহনবাগানের আক্রমণভাগকে। ভেবেছিলেন, কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের মতো এখানেও গোলের বন্যা বইয়ে দেবে দিপান্দা ডিকা-হেনরি কিসেক্কা। ঘরোয়া লিগের পারফরম্যান্স দিয়ে কোনও ফুটবলারকে যাচাই করা যায় না। আই লিগ অনেক বেশি কঠিন। প্রত্যেকটা দলেই বিদেশি ডিফেন্ডার রয়েছে। গোকুলামের বিরুদ্ধে ডিকা একেবারেই খেলতে পারল না। ৪৫ মিনিটে পেনাল্টি বক্সের ভিতর থেকে অবিশ্বাস্য ভাবে মারল গোকুলম গোলরক্ষক শিবিনরাজ কুনিইলের হাতে। হেনরি আপ্রাণ চেষ্টা করল। ৪০ মিনিটে ওর গোলেই এগিয়ে যায় মোহনবাগান। গোকুলম সমতা ফেরানোর পরে ৮১ মিনিটে কেন হেনরিকে তুলে নিল শঙ্করলাল, বুঝতে পারলাম না।