FIFA World Cup 2018

মেসির বিদায়, কাজানে ফরাসি বিপ্লব

রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন লিওনেল মেসি। ফ্রান্সের কাছে হেরে বিদায় নিল আর্জেন্টিনা। কাজানে ঘটল ফরাসি বিপ্লব।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৮ ২১:৪৬
Share:

স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা মেসির মুখে। ছবি: রয়টার্স।

কাজানে ফরাসি বিপ্লব!

Advertisement

একইসঙ্গে ইন্দ্রপতনও। রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলেন লিওনেল মেসি। শ্বাসরুদ্ধকর থ্রিলারের মতো ম্যাচে ফ্রান্সের ৪-৩ গোলে জয় এলএম টেনের কাছে বিশ্বকাপকে সম্ভবত অধরা মাধুরী করেই রেখে দিল চিরদিনের জন্য। চার বছর আগে ফাইনালে হারতে হয়েছিল। শনিবাসরীয় কাজানের চিত্রনাট্য অবশ্য আরও করুণ, আরও অপমানের।

প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে যে উদ্দীপ্ত ফুটবল খেলে হারাল ফ্রান্স, তা আবার রীতিমতো আকর্ষণীয়। ঝড়ের গতিতে একের পর এক আক্রমণ শানালেন ফরাসিরা। কোচ দিদিয়ের দেশঁর হাতে একঝাঁক প্রতিভা রয়েছে। সঙ্গে জমাট মাঝমাঠ আর দুর্ভেদ্য রক্ষণ। দ্বিতীয়ার্ধে ১-২ গোলে পিছিয়ে গিয়েও যে ভাবে তিন গোল চাপিয়ে দিল ফ্রান্স, তা কিন্তু বাকিদের কাছে অশনি সঙ্কেতই দেখাচ্ছে।

Advertisement

গোলের পর ম্যাচের নায়ক এমবাপে। ছবি: এএফপি

প্রথমার্ধ ছিল নাটকীয় ঘাত-প্রতিঘাতে ভরা। ফ্রান্সের প্রাধান্যই ছিল বেশি। যদিও আর্জেন্টিনার দখলে বল ছিল বেশি, কিন্তু নীল-সাদা জার্সিধারীরা গোলের দরজা খুলতে পারছিল না। বরং ফ্রান্সকে অনেক বেশি তীক্ষ্ণ দেখাচ্ছিল।

ম্যাচের ৯ মিনিটে আন্তোনিও গ্রিজম্যানের রকেটের মতো ফ্রি-কিক কাঁপিয়ে দিল আর্জেন্টিনার ক্রসবার। ১১ মিনিটে এমবাপেকে বক্সের মধ্যে ফেলে দিলেন ডিফেন্ডার মার্কোস রোখো। পেনাল্টি পেল ফ্রান্স। ঠাণ্ডা মাথায় গোল করলেন গ্রিজম্যান। এরপরও একবার এমবাপেকে বক্সের কাছে টেনে ফেলে দিলেন রোখো। লাল কার্ড দেখা থেকে বেঁচে গেলেন রোখো। পেনাল্টিও পেল না ফ্রান্স। তবে সারাক্ষণ আর্জেন্টিনার রক্ষণ ভুল করতে থাকল।

আরও পড়ুন: রোনাল্ডোই ভাবাচ্ছেন উরুগুয়েকে

আরও পড়ুন: বেড়েছে পেনাল্টি, কমেছে লাল কার্ড!​

২৮ মিনিটে আর্জেন্টিনা অবশ্য পেনাল্টির দাবি জানিয়েছিল কিছুটা খেলার গতির বিরুদ্ধেই। মার্সেডোর শট লেগেছিল উমতিতির হাতে। কিন্তু, ভিএআর দেখায়, তা অনিচ্ছাকৃত। ৩২ মিনিটে হাভিয়ের মাসচেরানোআবার দেখলেন হলুদ কার্ড। অবশেষে ৪১ মিনিটে সমতা ফেরাল আর্জেন্টিনা। বক্সের বাইরে প্রায় ৩০ গজের মতো দূরত্ব থেকে গোলার মতো শটে বল জালে জড়ালেন অ্যাঞ্জেল দি মারিয়া। অক্সিজেন পেল আর্জেন্টিনা।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল। ফ্রি-কিক থেকে মেসির গোলমুখী শট মার্সেডোর পা লেগে দিক পরিবর্তন করে ঢুকে গেল গোলে। ফরাসি গোলরক্ষক লরিসের কিছু করার ছিল না। ৪৮ মিনিটে ২-১ এগিয়ে গেল আর্জেন্টিনা। সাত মিনিটের মধ্যে দুই গোল। কিন্তু, লিড বেশিক্ষণ থাকল না। ৫৭ মিনিটে বেঞ্জামিন পাভার্ড দুরন্ত ভলিতে সমতা ফেরালেন। অসাধারণ গোল। তবে আর্জেন্টিনার রক্ষণ দায় অস্বীকার করতে পারে না। ক্যামেরায় ফুটে উঠল মেসির মুখ। হতাশ, মাথা নিচু।

এরপর আর্জেন্টিনার ওপর স্টিম রোলার চালিয়ে গেল ফ্রান্স। ৬৪ মিনিটে এমবাপে জোরালো শটে ৩-২ এগিয়ে দিলেন দলকে। ৬৮ মিনিটে ফের গোল। এবারও এমবাপে। কান্তে-গ্রিজম্যান-মাতুইদি-জিহু থেকে বক্সের ভিতর বল পেলেন ফ্রান্সের দশ নম্বর জার্সি। আর সেখান থেকে ১৯ বছর বয়সি এমবাপে করলেন নিজের দ্বিতীয় গোল, ফ্রান্সের চতুর্থ। তিন মিনিটের মধ্যে এমবাপের দু’গোল আর্জেন্টিনার কাছে প্রাণঘাতী হয়ে উঠল। ওখানেই ম্যাচ আসলে শেষ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ছিল নিয়মরক্ষা।

মেসি অবশ্য বেশ কয়েকবার মরিয়া চেষ্টা করলেন। কিন্তু দলের রক্ষণের যা বেহাল দশা, তিনি একা আর কী-ইবা করবেন!আর্জেন্টিনা অবশ্য হাল ছাড়েনি। পরিবর্ত হিসেবে নামা সের্জিও আগুয়েরো ৯৩ মিনিটে হেডে ব্যবধান কমিয়েছিলেন। কিন্তু, তখন বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছিল।

ম্যাচ শেষে মেসির বিধ্বস্ত মুখে ছিল স্বপ্নভঙ্গের যন্ত্রণা। পাশেই তখন উত্সবে মেতে উঠেছেন ফরাসিরা। কী করবেন, জীবন কখনও কখনও তো এতটাই নিষ্ঠুর আর এতটাই নির্মম!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন