East Bengal loses to FC Goa

সুপার কাপ হাতছাড়া ইস্টবেঙ্গলের! ফাইনালে গোয়ার কাছে টাইব্রেকারে হার লাল-হলুদের, আবার এশীয় মঞ্চে খেলবেন বোরজারা

সুপার কাপ জেতা হল না ইস্টবেঙ্গলের। রবিবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে গোয়ার কাছে ৫-৬ ব্যবধানে হেরে গেল তারা। সুপার কাপ জেতার সুবাদে আরও এক বার এশীয় মঞ্চে খেলার সুযোগ পেল গোয়া।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ২২:১৮
Share:

ইস্টবেঙ্গল-গোয়া ম্যাচের একটি মুহূর্ত। ছবি: সংগৃহীত।

ইস্টবেঙ্গল ০
গোয়া ০
(টাইব্রেকারে গোয়া ৬-৫ ব্যবধানে জয়ী)

Advertisement

অল্পের জন্য সুপার কাপ জেতা হল না ইস্টবেঙ্গল। রবিবার ফতোরদা স্টেডিয়ামে টাইব্রেকারে গোয়ার কাছে ৫-৬ গোলে হেরে গেল তারা। সুপার কাপ জেতার সুবাদে আরও এক বার এশীয় মঞ্চে খেলার সুযোগ পেল গোয়া। ইস্টবেঙ্গলের কাছে দু’বছরের ব্যবধানে দু’বার সুপার কাপ জেতার স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। অন্য দিকে, প্রথম দল হিসাবে গোয়া সুপার কাপ ধরে রাখল।

ম্যাচের নির্ধারিত ৯০ মিনিটে কোনও গোল হয়নি। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটেও কোনও দল গোল করতে পারেনি। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে। কেভিন সিবিলে প্রথম শটে গোল করেন। তবে মিস করেন গোয়ার বোরজা হেরেরা। ইস্টবেঙ্গলকে ২-১ এগিয়ে দেন সাউল ক্রেসপো। গোয়ার হয়ে গোল জেভিয়ার সিভেরিয়োর। এর পর মিগুয়েল গোল করলেও চতুর্থ শটে মহম্মদ রশিদ বল বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেয়। অন্য দিকে, গোয়া প্রতিটি শটেই গোল করে। সিভেরিয়োর পর গোল করেন ডেজান ড্রাজ়িচ, মহম্মদ নেমিল এবং ডেভিড টিমর। খেলা গড়ায় সাডেন ডেথে। ইস্টবেঙ্গলকে এগিয়ে দেন হামিদ আহদাদ। সমতা ফেরান উদান্তা সিংহ। সপ্তম শটে পিভি বিষ্ণুও বল বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে দেন। সাহিল তাভোরা গোল করতেই গোয়ার সুপার নিশ্চিত হয়ে যায়।

Advertisement

ম্যাচের শুরুতে গোয়া চেষ্টা করছিল মাঝমাঠে বেশি ফুটবলার রেখে পায়ের জঙ্গল তৈরি করতে। তিন মিনিটের মাথায় গোলের সুযোগ পেয়েছিল তারা। বোরজ়া হেরেরা লম্বা বল বাড়িয়েছিলেন সিভেরিয়োর উদ্দেশে। তবে বলের সঙ্গে সিভেরিয়োর সংযোগ ঠিকঠাক না হওয়ায় বল ক্লিয়ার করে দেন সিবিলে। দু’দল কিছু ক্ষণ শারীরিক ফুটবল খেলার পর আবার একটি ভাল সুযোগ তৈরি করে গোয়া। বাঁ দিক থেকে ক্রস তুলেছিলেন আকাশ সাঙ্গওয়ান। তবে সিভেরিয়ো সেই বল ধরার আগেই কেড়ে নেন আনোয়ার। এর পরেই একটি সহজ সুযোগ নষ্ট করে ইস্টবেঙ্গল। পাল্টা আক্রমণ থেকে বল পেয়েছিলেন মিগুয়েল। ডান দিক দিয়ে ছুটতে ছুটতে সামনে একা পেয়েছিলেন বিপক্ষ গোলকিপারকে। কিন্তু সামনে থাকা বিপিন সিংহকে দেওয়ার বদলে নিজে গোল লক্ষ্য করে শট নিতে যান এবং লক্ষ্যভ্রষ্ট হন।

২০ মিনিটের মাথায় গোলকিপার প্রভসুখন গিলের থেকে বল পেয়ে হিরোশি ইবুসুকি তা বাড়িয়ে দেন বিপিনের উদ্দেশে। বিপিন সেই বল নিয়ে ক্রস করেন নাওরেম মহেশের উদ্দেশে। তবে মহেশ সেই বল ধরতে পারেননি। প্রথমার্ধে একটানা আক্রমণ করছিল ইস্টবেঙ্গল। গোয়ার চেয়ে নিঃসন্দেহে এগিয়ে ছিল তারা। তবে সুযোগ তৈরি করেও গোল করতে পারেনি। প্রথমার্ধের মাঝামাঝি গোয়ার দুই ফুটবলার রনি চোট পেয়ে বেরিয়ে যান। কোচ মানোলো মার্কেজ় উঠিয়ে নেন বরিস সিংহকেও। নামেন নিম দোরজি এবং উদান্তা সিংহ।

জলপানের বিরতির পর দুই দলই খেই হারায়। আগে যে দ্রুত গতির ফুটবল হচ্ছিল তা আচমকাই উধাও হয়ে যায়। দুই দল টানা ৫-৬টি পাসও খেলতে পারছিল না। তবে প্রথমার্ধের শেষের দিকে চাপ বাড়াতে থাকে গোয়া। ডান দিক ব্রাইসন ফের্নান্দেসের ভাসানো বল ক্লিয়ার করেন আনোয়ার। মিনিট দুয়েক পরে ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের কাটিয়ে বক্সের কাছে পৌঁছে টিমরকে পাস দিয়েছিলেন ডেজ়ান ড্রাজ়িচ। তবে গোল হয়নি।

দ্বিতীয়ার্ধের শুরুটা ভাল করে গোয়া। বল ঘোরাফেরা করছিল ইস্টবেঙ্গলের অর্ধে। ৩০ গজ দূর থেকে দূরপাল্লার নিয়েও সফল হননি আয়ুষ ছেত্রী। টিমোরও একটি সুযোগ নষ্ট করেন। গোয়ার খেলা নিয়ন্ত্রণ করছিলেন ব্রাইসন। বোরজার সঙ্গে জুটি বেধে চেষ্টা করছিলেন ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ ভাঙার। তবে আনোয়ার এবং সিবিলের সামনে এসে বার বার আটকে যাচ্ছিল গোয়া।

অন্য দিকে, ইস্টবেঙ্গলের বিপিন ক্রমাগত বাঁ দিক থেকে আক্রমণ করছিলেন। বল পেয়েই পৌঁছে যাচ্ছিলেন গোয়ার গোলের কাছে। তাঁকে সামলাতে বেগ পেতে হচ্ছিল গোয়ার ডিফেন্ডারদের। ৬৩ মিনিটের মাথায় একটি সুযোগ পেয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। মিগুয়েলের ব্যাকহিল পেয়ে ডান দিক থেকে উঠে গিয়েছিলেন বিপিন। তিনি ক্রস করেন হিরোশিকে। তবে হিরোশির শট এতটাই দুর্বল ছিল যে বল ধরতে অসুবিধা হয়নি গোয়া গোলকিপার হৃতিক তিওয়ারির।

ম্যাচে উত্তপ্ত পরিস্থিতিও তৈরি হয়। বল কাড়তে গিয়ে মিগুয়েলের সঙ্গে ঝামেলায় জড়ান বোরজা। রেফারি দু’জনকেই শান্ত করেন। বোরজার পাশাপাশি রাগ দেখানোর জন্য ড্রাজ়িচকেও হলুদ কার্ড দেখান। ৬৫ মিনিটে মহেশকে তুলে বিষ্ণুকে নামিয়েছিলেন ডাগআউটে কোচের দায়িত্ব সামলানো বিনো জর্জ। বিষ্ণু আসার পর থেকে ইস্টবেঙ্গলের আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ে।

নির্ধারিত সময়ের শেষ ১৫ মিনিটে টান টান লড়াই দেখা যায়। কোনও দলই চাইছিল না ম্যাচ অতিরিক্ত সময়ে যাক। তাই আক্রমণ বাড়িয়ে দেয় দু’দলই। ৭৪ মিনিটে মিগুয়েলের পাস পেয়ে গোয়ার বক্সে ঢুকে গিয়েছিলেন বিষ্ণু। তাঁর শট আটকে দিলেও হৃতিকের হাত থেকে বল পিছলে যায়। গোললাইন পেরনোর ঠিক আগে তা বার করেন গোয়া গোলকিপার। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারেরা প্রতিবাদ করলেও লাইন্সম্যান গোল দেননি। ধারাভাষ্যকারেরাও জানান, সেটি গোল ছিল না। যে হেতু গোললাইনের সমান্তরালে কোনও ক্যামেরা নেই, তাই বোঝাও যায়নি বল গোললাইন পেরিয়েছিল কি না। এই ধরনের প্রতিযোগিতার খেলতে যা কোনও ভাবেই কাম্য নয়।

চার মিনিট পরেই গোয়ার ব্রাইসনের শট লাগে পোস্টে। বোরজা সেই বল পেয়ে বক্সে ড্রাজ়িচের উদ্দেশে ভাসিয়েছিলেন। তবে ধারেকাছেই পৌঁছতে পারেননি ড্রাজ়িচ। তিন মিনিট পরে ক্রস বারে প্রতিহত হয় গোয়ার আক্রমণ। এ বার পল মোরেনোর হালকা ভাসানো বল প্রভসুখন কোনও মতে বাঁচান। তা বারে লেগে বেরিয়ে যায়। শেষ দিকে দুই দলই চেষ্টা করলেও নির্ধারিত সময়ে কেউ গোল পায়নি।

অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে বল ঘোরাফেরা করছিল গোয়ার ফুটবলার পায়েই। তবে প্রত্যেকেই ক্লান্ত থাকার কারণে সুযোগ তৈরি হচ্ছিল না সে ভাবে। তা দেখে ব্রাইসন এবং আয়ুষকে তুলে রাবিহ এবং তাভোরা নামিয়ে দেন মার্কেজ়। বিনোও বিপিনের জায়গায় নামান হামিদকে। তবু খেলার গতিপথে বদল হয়নি। দুই দলই আক্রমণ তৈরি করতে পারছি না।

দ্বিতীয়ার্ধে ইস্টবেঙ্গলের মহম্মদ রাকিপের ভুলে একটি বল পেয়ে গিয়েছিলেন সিভেরিয়ো। বাঁ প্রান্ত দিয়ে দৌড়ে অবশ্য তিনি যে জায়গায় বল রাখেন, সেখানে পৌঁছতে পারেননি কেউই। গোয়া চেষ্টা করতে থাকে আক্রমণের ঝাঁজ আরও বাড়ানোর। তবে পিছিয়ে ছিল না ইস্টবেঙ্গলও। কিন্তু কেউই গোল করতে পারেনি। অবশেষে টাইব্রেকারে স্বপ্নভঙ্গ হয় ইস্টবেঙ্গলের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement