FIFA World Cup 2022

গানে গলা মেলানো মেসির চিন্তা ক্লান্তিই

শনিবার রাতে আহমেদ আলি বিন স্টেডিয়ামে প্রবেশের সময় জীবনে প্রথমবার শেন ওয়ার্নের নাম শুনে চমকে উঠেছিলেন আর্জেন্টিনীয়রা।

Advertisement

শুভজিৎ মজুমদার

আল রায়ান শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৩৮
Share:

ক্লান্তি কাটিয়ে নজর এ বার শেষ আটের লড়াইয়ে। পিটিআই

অস্ট্রেলিয়ার পতাকা মাথার উপরে তুলে আর্জেন্টিনার সমর্থকদের সামনে স্টিভ অস্কার হুঙ্কার দিচ্ছিলেন, ‘‘শেন ওয়ার্ন আছে আমাদের সঙ্গে। মেসি সাবধান...!’’

Advertisement

শনিবার রাতে আহমেদ আলি বিন স্টেডিয়ামে প্রবেশের সময় জীবনে প্রথমবার শেন ওয়ার্নের নাম শুনে চমকে উঠেছিলেন আর্জেন্টিনীয়রা। শুরু হয়ে যায় তাঁদের নিজেদের মধ্যে আলোচনা— শেন ওয়ার্ন আবার কে? অস্ট্রেলিয়ার নতুন ডিফেন্ডার? তাঁর উপরেই কি তবে থাকছে মেসিকে আটকানোর মূল দায়িত্ব?

আর্জেন্টিনার মানুষ যেমন মানতে চান না দিয়েগো মারাদোনা আর নেই, শেন ওয়ার্নকে নিয়েও একই আবেগে আচ্ছন্ন অস্ট্রেলীয়রা। স্টিভ চিৎকার করছিলেন, ‘‘ওয়ার্নির আশীর্বাদে আমরাই একটু পরে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের শেষ আটে যাব।’’

Advertisement

শেন ওয়ার্নের ভক্ত হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন, লিয়োনেল মেসিকে আটকানোর জন্য কোনও রণকৌশলই যথেষ্ট নয়। তিনি অপ্রতিরোধ্য। বিশ্বকাপ জয়ের সঙ্কল্পে অবিচল। নরম, লাজুক মুখের সেই মেসি অতীত। এই মেসি যেন আগ্নেয়গিরি!

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ শুরু হওয়ার ঠিক ৩২ মিনিট আগে ওয়ার্মআপ করতে পুরো দলকে নিয়ে মাঠে ঢুকেছিলেন মেসি। আহমেদ আলি বিন স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে তার অনেক আগে থেকেই উৎসব শুরু করে দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার সমর্থকরা। ওলে...ওলে...ভামোস আর্জেন্টিনা...ভামোস মেসি...গান গাইছিলেন। মেসি মাঠে নামার সঙ্গে সঙ্গেই উন্মাদনা কয়েক গুণ বেড়ে গেল। হাজারতম ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনীয় অধিনায়কও শুধুমাত্র পাখির চোখ দেখা অর্জুনের মতো। ম্যাচ শুরু হওয়ার আগে সাধারণত প্রথম একাদশের ফুটবলাররা একসঙ্গে ওয়ার্মআপ করেন। রিজ়ার্ভ বেঞ্চে যাঁরা থাকেন, তাঁরা আলাদা অনুশীলন করেন। শনিবার মেসি ডেকে নিয়েছিলেন প্রথম একাদশে না থাকা সতীর্থদেরই। তাঁদের সঙ্গে প্রস্তুতি শুরু করে যেন বোঝাতে চাইলেন— দলের প্রত্যেক সদস্যই তাঁর কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ।

‘মেসি ম্যাচের আগে আর্জেন্টিনার জাতীয় সঙ্গীত গান না। দেশের প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা নেই’— ব্যর্থ হলেই এমন সমালোচনার তিরে ক্ষতবিক্ষত হতে হয় আর্জেন্টিনীয় কিংবদন্তিকে। শনিবার কিন্তু মেসি দেশের জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিলেন।

হাজার হাজার আর্জেন্টিনীয়দের মতো গলা ছেড়েই। শনিবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের আগেও সেই দৃশ্য দেখেছে গোটা বিশ্ব। শুধু তাই নয়, শেষ আটে যোগ্যতা অর্জনের পরে আনন্দে আর্জেন্টিনার দর্শকরা যখন গান গাইছিলেন, সতীর্থদের নিয়ে মেসিও গলা মিলিয়েছেন, নেচেছেন।

অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচের ৩৫ মিনিটে অনবদ্য গোল করে দু’হাত প্রসারিত করে গ্যালারির দিকে ছুটলেন মেসি। বিশ্বকাপে কিংবদন্তি দিয়েগো মারাদোনার গোলসংখ্যা ছাপিয়ে যাওয়ার তৃপ্তি। চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যাওয়ার উল্লাস। উচ্ছ্বসিত গ্যারি লিনেকার সঙ্গে সঙ্গেই টুইট করেন, ‘‘হাজারতম ম্যাচে ৭৮৯টি গোল করল মেসি। বিশ্বকাপের নক-আউট ম্যাচে প্রথম গোল। বিশ্বকাপে নবম গোল করে টপকে গেল দিয়েগো মারাদোনাকে।’’

সাংবাদিক বৈঠকে যখন মেসি এলেন, তখন উচ্ছ্বাস নেই। বোঝাই যাচ্ছিল শেষ আটের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ম্যাচের মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন। এমনিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পেরে দারুণ খুশি হলেও আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মনে করেন, শেষ আটে ডাচদের ছাপিয়ে যাওয়া খুব কঠিন। বললেন, ‘‘নেদারল্যান্ডস দুর্দান্ত দল। ওদের খেলা আর ফুটবল-শৈলী কতটা ভাল, তা সবাই জানে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে মনে করছি।’’

সমর্থকদের উন্মাদনায় আপ্লুত মেসি আরও বলেছেন, ‘‘ওঁদের ভালবাসা আর সমর্থন আমার কাছে আজও বিস্ময় জাগানো অনুভূতি বয়ে আনে।’’ আর্জেন্টিনার কোচ লিয়োনেল স্কালোনির মতো মেসিও চিন্তিত টানা ম্যাচ খেলার ক্লান্তি নিয়ে। বলেছেন, ‘‘পর্যাপ্ত বিশ্রামের সুযোগই পাচ্ছি না। আমরা কিছুটা ক্লান্তও ছিলাম। তা ছাড়া এই ম্যাচে শারীরিক ফুটবল খুব বেশি পরিমাণে হয়েছে। তা সত্ত্বে জিততে পেরে দারুণ আনন্দ হচ্ছে।’’ এখানেই শেষ নয়। আরও বলেছেন, ‘‘আমরা বিশ্রামই পাই না। সঙ্গে বিশ্বকাপের চাপও মনে উদ্বেগ তৈরি করে। তার মধ্যেও সতীর্থরা যে ভাবে খেলছে, তাতে ওদের খুব শক্তিশালী বলতেই হবে।’’ যোগ করেন, ‘‘সৌভাগ্যবশত আমরা গোলগুলো পেয়েছি। তার পরে অবশ্য আচমকা ওরা গোল করায় ধাক্কা খেয়েছিলাম। সামনে আরও একটা শক্ত ম্যাচ।’’

মেসির সঙ্গে একমত স্কালোনিও। সাংবাদিক বৈঠকে তিনি বলেছেন, ‘‘খুবই কঠিন ম্যাচ ছিল। শারীরিক ফুটবল খেলে ওরা আমাদের চাপে ফেলে দিয়েছিল।’’ রবিবার ফুটবলারদের সম্পূর্ণ বিশ্রাম দিয়েছিলেন কোচ। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সময় কাটান তাঁরা।

আহমেদ আলি বিন স্টেডিয়ামের গ্যালারি থেকে আর্জেন্টিনীয়দের উৎসব তখন ছড়িয়ে পড়েছে রাস্তায়, মেট্রো স্টেশনে। থমথমে মুখে ফিরছিলেন অস্ট্রেলিয়ার সমর্থকরা। স্টিভকে দেখা গেল মল অব কাতার মেট্রো স্টেশনের বাইরে ফুটপাথে বসে রয়েছেন। বললেন, ‘‘মেসি একাই শেষ করে দিলেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন